ইউসুফ চৌধুরী: খেজুর নাম শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে একটি লম্বা কাণ্ডবিশিষ্ট গাছ, যার ডালে ডালে ঝুলে থাকে মিষ্টি খেজুর ফল। কিন্তু দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধর্মপুর শালবনে এমন একটি খেজুর গাছের সন্ধান মিলেছে যার চেহারা একেবারেই আলাদা — নাম খুদি খেজুর বা বন খেজুর।
এই গাছটি আকারে ছোট, প্রায় কাণ্ডবিহীন, পাতা আর কাঁটাগুলো খেজুর গাছের মতো হলেও গাছের গঠন এবং ফল আলাদা। এটি একটি বিপন্ন ও বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ।
Table of Contents
গাছটির বৈশিষ্ট্য
রঙ ও আকৃতি: ছোট অবস্থায় সবুজ, পরে লালচে, আর পরিপক্ক হলে জামের মতো কালচে। ফলের আকৃতি সাধারণ খেজুরের মতো, প্রায় ৪–৫ সেন্টিমিটার।
পাকাবার সময়: সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পাকতে শুরু করে।
স্বাদ: অত্যন্ত মিষ্টি ও সুস্বাদু। কোনোরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই খাওয়া যায়।
স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা ও প্রতিক্রিয়া
স্থানীয়রা আগে গাছটিকে “কুঁজি খেজুর” নামে চিনতেন। মুন্না নামক এক বাসিন্দা বলেন, “ছোট থাকতে এ গাছ অনেকবার দেখেছি, ফলও খেয়েছি। কিন্তু এর গুরুত্ব জানতাম না।”
আরেকজন স্থানীয় সুমন আহমেদ বলেন, “আমার বাবা বলতেন ফলটি খাওয়া যায়। এখন তো অনেকেই দেখতে আসছে, বনবিভাগ বলেছে এটি হারিয়ে যেতে বসেছে।”
বনবিভাগের উদ্যোগ ও গবেষণা
ধর্মপুর বিটের কর্মকর্তা মহসীন আলী জানান:
সংরক্ষণ: গাছ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নার্সারিতে বীজ থেকে চারা উৎপাদনের পরিকল্পনা চলছে।
গবেষণা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও বন বিভাগের প্রতিনিধি গাছটি শনাক্ত করেছেন।
পরিমাণ: ধর্মপুর শালবনে প্রায় দেড় শতাধিক বন খেজুর গাছ পাওয়া গেছে, অনেকগুলোতে ফলও ধরেছে।
পরিবেশগত গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
খুদি খেজুর শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, ভারত, পাকিস্তান এবং ভুটানের স্থানীয় প্রজাতি। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে।
পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা: প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় এ গাছ গুরুত্বপূর্ণ।
ভবিষ্যৎ উদ্যোগ: বনবিভাগের মাধ্যমে এটি দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিরল প্রজাতির খুদি খেজুর আমাদের প্রকৃতির এক অমূল্য সম্পদ। স্থানীয়দের সহযোগিতা ও বনবিভাগের উদ্যোগে গাছটির অস্তিত্ব রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। এমন উদ্ভিদ সংরক্ষণে সামাজিক সচেতনতা ও সরকারি সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Writer: Yusuf Chowdury CEO & Managing Director Zoom Bangla Pvt. Ltd.
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।