বিনোদন ডেস্ক : কখনো বিল উইসলি, কখনো কালেব, আবার কখনো পিটার রাবিটের স্নেহময় মানুষটি—ডমনাল গ্লিসন এমন একজন অভিনেতা, যিনি প্রতিটি চরিত্রে নিজের ভেতর নতুন একজন মানুষকে জন্ম দেন। ‘এক্স’ ছবিতে তার নিঃশব্দ অভিব্যক্তি, গভীর দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতা যেন দর্শককে এক নিরব ধাক্কা দেয়। ডমনালের অভিনয় শুধু চরিত্র নয়, চরিত্রের আত্মা হয়ে ওঠে।
Table of Contents
এক্স ছবিতে ডমনালের অভিনয়: নীরব বুদ্ধিদীপ্ততা
‘এক্স’ নামক চলচ্চিত্রে ডমনাল গ্লিসনের অভিনয় ছিল এমন এক নিঃশব্দ বিস্ময়, যা দর্শকের হৃদয়ে ঢেউ তোলে। তিনি কালেব চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি এক প্রোগ্রামার এবং গবেষক, যে একটি অদ্ভুত টেস্টে অংশ নিতে একটি দূরবর্তী স্থানে যায়। সেখানে সে পরিচিত হয় একজন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন নারীর সঙ্গে। এই বৈজ্ঞানিক, মনস্তাত্ত্বিক ও নৈতিক জটিলতায় পরিপূর্ণ ছবিতে ডমনালের অভিনয় ছিল হৃদয় ছোঁয়া।
‘এক্স’ সিনেমাটি শুধু এক প্রযুক্তিনির্ভর থ্রিলার নয়, বরং এটি মানুষের অনুভব, আকাঙ্ক্ষা এবং বিশ্বাসের উপর এক সাহসী প্রশ্ন তোলার প্রয়াস। কালেব চরিত্রে ডমনাল তার চোখের ভাষা, মৃদু দোলাচল এবং সংলাপে থাকা গভীর মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বকে ফুটিয়ে তুলেছেন। এই চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয় একেবারেই সংযত, কিন্তু তীব্রতায় পূর্ণ।
চরিত্র বিশ্লেষণ: কালেব
কালেব একটি চরিত্র যা প্রতিটি মুহূর্তে অনুভূতির পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। শুরুতে সে বিস্মিত, পরে কৌতূহলী, ধীরে ধীরে সে বিচলিত এবং শেষে এক জটিল সিদ্ধান্তের মুখোমুখি দাঁড়ায়। এই রূপান্তরের প্রতিটি ধাপে ডমনাল নিজেকে চরিত্রের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন। দর্শক কখনো বুঝতেই পারে না যে কোথায় অভিনেতা শেষ আর চরিত্র শুরু।
ডমনালের এই অসাধারণ অভিনয়ের জন্য আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বোদ্ধারা প্রশংসা করেছেন। Variety থেকে The Guardian পর্যন্ত সকলেই ‘Ex Machina’ ছবিতে তার কৃতিত্বের কথা উল্লেখ করেছে। এমনকি Wikipedia তেও ছবির চরিত্র বিশ্লেষণে ডমনালের নাম এসেছে বারবার।
বিল উইসলি থেকে ‘পিটার রাবিট’: চরিত্র বদলের যাদুকর
‘হ্যারি পটার’ সিরিজে ‘বিল উইসলি’ চরিত্রে ডমনালের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল ২০১০ সালে। যদিও তার উপস্থিতি তুলনামূলক কম, কিন্তু তার অভিনয়ের গভীরতা দর্শকদের নজর কাড়ে। জাদুবিশ্বের সেই দায়িত্বশীল বড় ভাই হিসেবে তিনি চরিত্রটির মর্যাদা রক্ষা করেন নিখুঁতভাবে।
এরপরের বছরগুলোতে তিনি কাজ করেছেন ‘আনা কারেনিনা’, ‘অ্যাবাউট টাইম’, ‘ব্রুকলিন’ এবং ‘দ্য রেভেন্যান্ট’-এর মতো বহু গুণমানসম্পন্ন চলচ্চিত্রে। প্রতিটি ছবিতে চরিত্র বদলের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, তিনি কোনো গ্ল্যামার নয়, বরং গল্প ও চরিত্রের জন্যই বেঁচে থাকা একজন অভিনেতা।
পিটার রাবিটের চরিত্রে ডমনাল
‘পিটার রাবিট’ সিরিজে থমাস ম্যাকগ্রেগরের চরিত্রে ডমনাল গ্লিসনের অভিনয় ছিল প্রাণবন্ত ও কোমল। এই ছবিতে তিনি ছিলেন এক রাগী শহুরে মানুষ, যে পরে ভালোবাসা ও গ্রহণযোগ্যতা শিখে নেয়। এই ছবির শিশু-কিশোর দর্শকদের পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্কদের কাছেও তিনি হয়ে ওঠেন এক মজার কিন্তু মানবিক চরিত্র।
তার সংলাপ, মুখভঙ্গি, শরীরী ভাষা, এবং সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়া প্রমাণ করে, তিনি এক বহুস্তর বিশিষ্ট অভিনয়ের ধারক।
অভিনয়ে পারিবারিক প্রভাব ও প্রথম দিকের সংগ্রাম
ডমনাল গ্লিসনের পিতা ব্রেনডান গ্লিসন নিজেও একজন স্বনামধন্য আইরিশ অভিনেতা। পিতার ছায়ায় নয়, বরং নিজস্ব প্রচেষ্টায় নিজের পরিচয় গড়ে তুলেছেন ডমনাল। থিয়েটার থেকে শুরু করে ছোট বাজেটের ছবি, নাটক এবং ডাবিংয়ের মাধ্যমে তিনি ধীরে ধীরে তৈরি করেছেন এক শক্ত ভিত।
থিয়েটার থেকে বড় পর্দায় রূপান্তর
তিনি ডাবলিনের The Lir Academy-তে পড়াশোনা করেছেন, যেখানে থিয়েটার ও অভিনয়ের মৌলিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। এই শিক্ষা তাকে মঞ্চে এবং পরবর্তীতে ক্যামেরার সামনে গভীর অভিনয়ের দক্ষতা এনে দেয়। থিয়েটার তাকে দিয়েছে উচ্চারণ, স্পষ্টতা, সংযম ও অনুশাসন।
চরিত্রে ডুবে থাকার ধারা
ডমনাল গ্লিসন সবসময়ই সেই অভিনেতাদের একজন, যারা ‘মেথড অ্যাক্টিং’ -এ বিশ্বাস রাখেন। চরিত্রের জন্য নিজের ওজন পরিবর্তন, মানসিক প্রস্তুতি, গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ তার অভিনয়ের অংশ। তিনি কোনো চরিত্রে অভিনয় করার আগে সেই চরিত্রের পেছনের গল্প ও মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ করেন।
‘এক্স’ ছবির জন্য তিনি প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে দীর্ঘ সময় গবেষণা করেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি শুধু স্ক্রিপ্ট পড়ি না, আমি চরিত্রটা অনুভব করি।”
গ্ল্যামার নয়, গল্পপ্রেমিক অভিনেতা
বহু অভিনেতা যেখানে ক্যামেরা, লাইটস ও গ্ল্যামারের পেছনে দৌড়ান, সেখানে ডমনাল বরাবরই নিজের মতো করে থাকেন। তিনি খুব একটা মিডিয়াতে আসেন না, ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও বলেন কম। তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপস্থিতিও ন্যূনতম।
তার মতে, “আমি অভিনয় ভালোবাসি, আলো নয়। আমি গল্প খুঁজি, জনপ্রিয়তা নয়।”
এই দৃষ্টিভঙ্গিই তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে। দর্শকরা তাকে মনে রাখেন অভিনয়ের জন্য, প্রচারণার জন্য নয়।
সিনেমার বাইরেও একজন চিন্তাশীল মানুষ
ডমনাল গ্লিসন একাধারে নাট্যকার ও চিত্রনাট্য লেখকও। তিনি বেশ কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছেন। এমনকি তিনি দানবীর কর্মকাণ্ডেও যুক্ত আছেন। হোমলেস মানুষদের জন্য কাজ করা একাধিক আইরিশ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত তিনি।
ডমনাল গ্লিসন আমাদের শেখান—একজন অভিনেতা কেবল পর্দায় না, বাস্তব জীবনেও হয়ে উঠতে পারেন এক নিঃশব্দ বিপ্লবী। চরিত্র বদলের খেলায় যিনি বারবার জিতেন, সেই যাত্রার মাঝেই লুকিয়ে থাকে তার আসল পরিচয়—একজন প্রকৃত শিল্পী। ‘এক্স’ ছবির অভিজ্ঞতা তাই শুধু একটি সিনেমা নয়, বরং এক সংবেদনশীল অনুসন্ধান, যেখানে আমরা নিজের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাই।
অ্যাপল আইফোনের দাম বাড়ানোর হুমকি: শুল্ক, উৎপাদন স্থানান্তর ও ডিজাইন পরিবর্তন
❓FAQs: এক্স ও ডমনাল গ্লিসনের অভিনয় নিয়ে সাধারণ প্রশ্ন
১. ডমনাল গ্লিসনের ‘এক্স’ ছবিতে চরিত্রের নাম কী ছিল? তিনি ‘কালেব’ নামক চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি এক সফটওয়্যার প্রোগ্রামার ও গবেষক।
২. ‘এক্স’ ছবির মূল বিষয়বস্তু কী? ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মানবিক অনুভূতি ও প্রযুক্তির মধ্যে থাকা সম্পর্ক ও দ্বন্দ্ব নিয়ে নির্মিত।
৩. ডমনাল গ্লিসনের প্রথম বড় বাজেটের সিনেমা কোনটি? ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোজ’ ছবিতে ‘বিল উইসলি’ চরিত্রে তিনি প্রথম বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন।
৪. ‘এক্স’ ছবিতে তার অভিনয়ের বিশেষ দিক কী ছিল? তার সংযত অভিব্যক্তি, মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব প্রকাশ এবং চোখের ভাষা ছিল অনন্য।
৫. ডমনাল গ্লিসন গ্ল্যামার থেকে দূরে কেন থাকেন? তিনি গল্প ও চরিত্রকে প্রাধান্য দেন এবং বিশ্বাস করেন জনপ্রিয়তা নয়, শিল্পই আসল উদ্দেশ্য।
৬. ডমনালের বাবা কে এবং তার পেশা কী? ব্রেনডান গ্লিসন, যিনি নিজেও একজন স্বনামধন্য অভিনেতা এবং বহু সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।