জুমবাংলা ডেস্ক : ‘ঐ দেখা যায় তাল গাছ, ঐ আমাদের গাঁ। ঐ খানেতে বাস করে কানা বগীর ছা।’ প্রকট শহরায়নের এই যুগেও বাঙালির গান-কবিতা-ছড়ায় গ্রামের যে চিত্রটি ভেসে ওঠে, সেটি তাল তমালের ছায়াঘেরা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো গ্রাম থেকে তাল গাছ যেমন হারিয়ে যেতে বসেছে, এর সঙ্গেই এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে আরেকটি ঐতিহ্যবাহী জলযান তালের ডোঙ্গা। নদী, খাল, বিল, বাঁওড়ের জেলা ফরিদপুরে এক সময় বর্ষাকালে মানুষ যাতায়াত, মাছ ধরা বা শাপলা তোলার মতো কাজে জলে তালের ডোঙ্গা ভাসাত। তাল গাছ মাঝামাঝি দু’ভাগ করে চিরে তার ভেতরের অসার দ্রব্য তুলে গর্ত করে এ বাহন তৈরি করা হয়। তবে বিল-বাঁওড়ে পানি কমে যাওয়া এবং তালগাছের অভাবে এখন একরকম বিলুপ্তির পথে এ বাহন।
ফরিদপুরে এখনও যতটুকু তালের ডোঙ্গা ব্যবহার হয়, তা বিলে মাছ ধরতে ও মৎস্য ঘেরে মাছের খাবার দিতে। কারণ আকারে ছোট আর চালাতে সহজ বলে এ বাহন সবাই ব্যবহার করতে পারেন। একটি ডোঙ্গা সাধারণত ১৫-২০ ফুট লম্বা এবং ১-২ ফুট চওড়া হয়। একটি ডোঙ্গায় দু’জন ওঠা যায়।
স্থানীয় প্রবীণরা জানান, আগে বর্ষাকালে নগরকান্দা, সালথা, বোয়ালমারীসহ বিলের পাড়ের মানুষের এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি যাওয়ার প্রধান বাহন ছিল ডোঙ্গা। কিন্তু জলাভূমিতে এখন আর ডোঙ্গা চোখে পড়ে না। বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ছোট নৌকা বা টিনের তৈরি ডোঙ্গা। কিন্তু এগুলো তালের ডোঙ্গার মতো টেকসই নয়। জেলার নগরকান্দা উপজেলার শসার বিলে সম্প্রতি কয়েকটি তালের ডোঙ্গার দেখা মেলে।
সেখানকার বাসিন্দারা জানান, তাল গাছের অভাবেই হারাতে বসেছে ডোঙ্গার ঐতিহ্য। তাল গাছ পরিপক্ব হওয়ার আগেই সেগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু সে হারে নতুন করে লাগানো হয়নি। গত কয়েক বছরে তাই নতুন ডোঙ্গা ভাসায়নি কেউ, পুরোনোগুলোই চালাচ্ছেন। নগরকান্দার শসা গ্রামের প্রবীণ শিক্ষক আব্দুল জলিল মিয়া বলেন, কয়েক বছর আগেও নগরকান্দার খালবিল ও ঘের এলাকার মানুষের চলাচলের নিয়মিত বাহন ছিল তালের ডোঙ্গা। নগরকান্দা, ঝাটুরদিয়া, চাঁদহাট, পুরাপাড়া, তালমা হাটসহ বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি হতো এটি। ছোট আকারের বৈঠা কিংবা লম্বা চিকন শক্ত বাঁশের টুকরো চৌড় দিয়ে পানির মধ্যে ঠেলে ঠেলে চালাতে হয় এ ডোঙ্গা।
একই গ্রামের কৃষক বাবলু মাতুব্বর জানান, তিনি এখনও তালের ডোঙ্গা চালান। নগরকান্দাসহ বিভিন্ন এলাকায় পরিমাণে অল্প হলেও এখনও অনেকে তালের ডোঙ্গা ব্যবহার করেন। আগে বর্ষাকালে নিম্নভূমি, ডোবা, নালা, খাল, বিল পানিতে থইথই করত। তখন সেসব জলাভূমিতে যাতায়াত ও মাছ ধরার জন্য ডোঙ্গা ব্যবহার করা হতো। এখন খালবিলে পানির অভাবে মানুষ ডোঙ্গার ব্যবহার বাদ দিচ্ছে। বর্ষার শেষে এখন খালবিলে টইটুম্বুর পানি থাকার কথা। অথচ বিলের বেশির ভাগই শুকনো। তাই অনেকের ডোঙ্গা আটকে পড়েছে শুকনো বিলের মধ্যে। নগরকান্দা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল্লাহিল আবরার বলেন, সরকার সারাদেশে ব্যাপক হারে তাল গাছ রোপণের জন্য সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছে। কারণ এ গাছ বজ্রনিরোধক ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। ব্যাপক হারে তাল গাছ রোপণ করে আমরা এ অঞ্চলের ঐতিহ্য পরিবেশবান্ধব তালের ডোঙ্গাকে আবার ফিরিয়ে আনতে পারি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।