আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইসলামি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে বিভিন্ন দেশের ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে যান সারাবিশ্বের মুসলিম শিক্ষার্থীরা। তবে এখন সেসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন যুক্ত হয়েছে আধুনিক শিক্ষাও। তাই অমুসলিমরাও পড়তে যান সেসব শিক্ষাঙ্গনে।
শিক্ষা, গবেষণা, পড়াশোনার পরিবেশ ও নানাবিধ সুযোগ-সুবিধার কারণে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ তালিকার শীর্ষে থাকে। নিম্নে এমন ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য তুলে ধরা হলো।
আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়
৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত শতাব্দী পর্যন্ত এখানে শুধু ইসলামি বিষয়গুলো পড়ানো হতো। ১৯২০ সাল থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞানসহ আধুনিক অনেক শাখা এতে যুক্ত হয়।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে (http://www.azhar.edu.eg/) বৃত্তি নিয়ে বিশ্বের শতাধিক দেশের শিক্ষার্থীসহ প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। ২৩টি অনুষদে প্রায় ১৫ হাজার ১৫৫ জন শিক্ষক পাঠদান করেন এবং ১৩ হাজার ৭৪ জন কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করছেন।
কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব
১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি (https://www.kau.edu.sa/) সৌদি আরবের জেদ্দা অঞ্চলের দক্ষিণে অবস্থিত। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তা প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও ১৯৭৪ সালে বাদশাহ ফয়সাল এটিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করেন। সৌদি আরবের সর্ববৃহৎ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪টি অনুষদে এক লাখ ১৭ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। তাদের মধ্যে ছেলের সংখ্যা ৫৫ হাজার ৫৭৬ এবং মেয়ের সংখ্যা ৬১ হাজার ৫২০ জন।
টাইমস হায়ার এডুকেশনের তথ্যমতে এটি ১০১-১৫০তম স্থানে এবং আরববিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। প্রতি বছর অসংখ্য শিক্ষার্থী বৃত্তি নিয়ে এখানে পড়তে যান। ধর্মীয় বিষয়ের পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণার জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ খ্যাতি রয়েছে।
কাতার ইউনিভার্সিটি, কাতার
১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি দোহার নর্দান এলাকায় অবস্থিত। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের (http://www.qu.edu.qa/) ১১টি অনুষদে মোট ৯৭টি বিষয় রয়েছে।
এখানে ২৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। ইসলামি বিষয় ছাড়াও এখানে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও গণিত সংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে। তা ছাড়া জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখায় এর গবেষণা কার্যক্রম ব্যাপক অবদান রাখছে।
ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়া
১৯৮৩ সালে ইসলামি চিন্তা ধারণ করে কয়েকটি মুসলিম দেশ ও ওআইসির সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়টি (https://www.iium.edu.my/) প্রতিষ্ঠিত হয়। মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গরের গোম্বাক জেলায় অবস্থিত এর মূল ক্যাম্পাস। উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা ও গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি সারা বিশ্বে সমাদৃত।
এর কারিকুলামকে ইসলাম ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় সাধনের সর্বোৎকৃষ্ট নমুনা মনে করা হয়। এর ১৪টি অনুষদে বিশ্বের শতাধিক দেশের ৭০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। তবে এখানকার বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ার।
ইস্তাম্বুল ইউনিভার্সিটি, তুরস্ক
১৪৫৩ সালে সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ আল-ফাতিহের নেতৃত্বে তা প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি তুরস্কের ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। শিক্ষা ও গবেষণায় এখানকার শিক্ষার্থীদের অবদান অনস্বীকার্য।
এখানকার ১৭টি অনুষদে ৬৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। কলা, বিজ্ঞান, অর্থনীতিসহ এখানে রয়েছে থিওলজি বিভাগ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই শিক্ষার্থী আজিজ সানকার ও ওরহান পামুক নোবেল পেয়েছেন।
তাছাড়া ইসরায়েলের দীর্ঘ ১০ বছরের প্রেসিডেন্ট ইতিজাক বেন-জভি, প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিওন ও মোশে শেরেট এবং তুরস্কের রাষ্ট্রপতি আবদুল্লাহ গুল ও ছয়জন প্রধানমন্ত্রীসহ খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব এখান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব মদিনা, সৌদি আরব
১৯৬২ সালে সৌদি বাদশাহ সাউদ বিন আবদুল আজিজের রাজকীয় নির্দেশনায় ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় মদিনা (https://iu.edu.sa/en-us) প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্বের সব দেশের মুসলিমদের মধ্যে ইসলামি শিক্ষা বিস্তার এর অন্যতম লক্ষ্য।
প্রথমদিকে এখানে শুধু ইসলামি বিষয় যেমন শরিয়াহ, দাওয়াহ, কোরআন, হাদিস বিভাগ থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করা যেত। ২০০৯ সালে প্রকৌশল অনুষদ ও ২০১১ সালে কম্পিউটার সায়েন্স অনুষদ খোলা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি অনুষদে বিশ্বের দেড় শতাধিক দেশ থেকে ২০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। সৌদি সরকারের শিক্ষাবৃত্তি নিয়েই তারা এখানে পড়ে থাকেন। গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়টি সর্বোচ্চসংখ্যক দেশের শিক্ষার্থীর উপস্থিতির জন্য গিনেস বুক রেকর্ড করে।
কায়রো ইউনিভার্সিটি, মিশর
১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি আরববিশ্বের অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। তা কায়রো নগরীর জিজাহ নামক স্থানে অবস্থিত। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইসলাম ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে এর বিশেষ অবস্থান রয়েছে।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে (https://cu.edu.eg/Home) ২০টি অনুষদ ও তিনটি ইনস্টিটিউট আছে, যেখানে দেড় লাখের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। এর সাবেক শিক্ষার্থীদের তিনজন নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। তারা হলেন, মিশরীয় কূটনীতিক ও রাজনীতিবিদ মুহাম্মদ আল-বারাদায়ি, আরবি সাহিত্যিক নাজিব মাহফুজ এবং ফিলিস্তিন আন্দোলনের অন্যতম নেতা ইয়াসির আরাফাত।
ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব
১৯৫৩ সালে সৌদি আরবের রিয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়টি (https://imamu.edu.sa/en/) প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রথমদিকে তা শুধু শরিয়াহ কলেজ হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৪ সালে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে। মূলত সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল ইবনে আবদুর রহমান আল-সৌদের নির্দেশনায় মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহিম আল-আলে শেখ তা প্রতিষ্ঠা করেন।
এর ১৪ অনুষদ ও ৭০টি অ্যাকাডেমিক ইনস্টিটিউট রয়েছে। তা ছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ইন্দোনেশিয়া ও জিবুতিতে দুটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। মক্কা ও মদিনার পবিত্র মসজিদের ইমাম ও খতিবদের বেশির ভাগ এখানকার সাবেক শিক্ষার্থী।
আল-কাসিমিয়া ইউনিভার্সিটি, সংযুক্ত আরব আমিরাত
বিশ্ববিদ্যালয়টি আমিরাতের শারজাহ এলাকায় অবস্থিত। ২০১৩ সালে শারজার গভর্নর ড. সুলতান বিন মুহাম্মদ আল-কাসিমির নির্দেশক্রমে তা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১০ লাখ ৩৬ হাজার বর্গমিটার আয়োজনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি অনুষদ আছে। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা এখানে বৃত্তিসহ পড়াশোনা করতে আসেন।
ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ইসলামাবাদ, পাকিস্তান
১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয় (https://www.iiu.edu.pk/) উচ্চশিক্ষার জন্য সর্বমহলে সমাদৃত। এখানকার ১০টি অনুষদে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। ইসলামি আইন, শরিয়াহসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিশ্ববিদ্যালয়টি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। এর পুরোনো ক্যাম্পাসে রয়েছে বিশ্ববিখ্যাত ফয়সাল মসজিদ, যা সৌদি বাদশাহ ফয়সালের পক্ষ থেকে উপহার দেয়া হয়েছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।