আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গ্রিনল্যান্ড বরফ দ্বারা আচ্ছাদিত একটি বিশাল এলাকা। তবে পরিস্থিতি সবসময় এমন ছিল না। ডেনমার্কের গবেষকেরা জানান, দুই মিলিয়ন বছর আগে এখানে তাপমাত্রা ছিল ১১ থেকে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। বিজ্ঞানীরা তখন থেকেই প্রাণী, উদ্ভিদ ও জীবাণু থেকে ডিএনএ শনাক্ত করেছেন। তাদের মতে, এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রাচীন পরিচিত ডিএনএ সনাক্তকরণ। খবর আর্থ ডট কমের।
প্রতিবেদনে বলা হয়য়, গ্রিনল্যান্ডে সংগৃহীত পলি থেকে এই ডিএনএ শনাক্ত করেছেন ড্যানিশ গবেষকরা। তাদের মতে, গ্রিনল্যান্ড এক সময় বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের রাজ্য ছিল।
কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বুধবার (৭ ডিসেম্বর) জানান, তারা মাস্টোডন, রেইনডিয়ার, খরগোশ, পপলার, বার্চ, বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও শৈবালসহ বিভিন্ন প্রাণীর ডিএনএ সনাক্ত করেছে। ডিএনএ মূলত স্ব-প্রতিলিপিকারী উপাদান যা জীবিত প্রাণীর জেনেটিক তথ্য বহন করে।একে জীবনের নীলনকশাও বলা হয়।
মাস্টোডন মূলত আধুনিক হাতির মতোই একটি প্রাণী ছিল। এটি একসময় উত্তর ও মধ্য আমেরিকাজুড়ে বিচরণ করত। দশ হাজার বছর আগে বরফ যুগ শুরু হওয়ার পর অন্যান্য বড় স্তন্যপায়ী প্রাণীর সঙ্গে মাস্টোডনও বিলুপ্ত হয়ে যায়। গবেষকদের নতুন আবিষ্কার মাস্টোডনের বিস্তৃত পরিসর সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করেছে।
গবেষণা নিবন্ধটি নেচার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষক দলের নেতৃত্বে থাকা ডেনমার্কের লান্ডবেক ফাউন্ডেশন জিওজেনেটিকস সেন্টারের পরিচালক এসকে উইলারস্লেভ জানান, মাস্টোডনের ডিএনএ প্রাপ্তি একটি দুর্দান্ত বিস্ময় ছিল। গ্রিনল্যান্ডে এর আগে কখনও পাওয়া যায়নি।
তবে সবচেয়ে বড় চমক হলো সেখানে একটি অনন্য ইকোসিস্টেম খুঁজে পাওয়া। সেখানে শীতল ও নাতিশীতোষ্ণ উভয় প্রজাতির জন্য অনন্য বাস্তুতন্ত্র তৈরি হয়েছিল।
উইলারস্লেভ বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ডে এমন বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ ও প্রাণীর অস্তিত্ব যে দুই মিলিয়ন বছর আগেও ছিল তা কেউ ভাবেনি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে, আগামী কয়েক বছরে আমরা গ্রিনল্যান্ডে যা দেখতে যাচ্ছি সেখানে ঠিক তাই হয়েছে।’
গবেষকেরা জানান, তারা ৪১ ধরনের খনিজ সমৃদ্ধ পলি থেকে ডিএনএ শনাক্ত করেছে। সেখানে ১০০ ধরনের প্রাণী ও উদ্ভিদের ডিএনএ পাওয়া গেছে। ২০০৬ সালে গ্রিনল্যান্ডে খনন করে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু এত দিন ওই নমুনা থেকে কোনো ডিএনএ শনাক্ত করা যায়নি। আজ উন্নত ডিএনএ সনাক্তকরণ পদ্ধতির জন্য সেই নমুনাগুলোতে দুই মিলিয়ন বছর আগের প্রাণী, উদ্ভিদ ও জীবাণুর ডিএনএ পাওয়া গেছে।
উইলারস্লেভ জানান, শনাক্ত করা ডিএনএ ব্যবহার করে বিলুপ্ত প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনা যায় না। কিন্তু তাদের গবেষণা কিভাবে বিভিন্ন গাছপালা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য আরও সহনশীল হতে পারে সে সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করবে।
এর আগে ১.২ মিলিয়ন বছর আগের হাতি পরিবারের আরেকটি প্রাণী ম্যামথের প্রাচীনতম ডিএনএ সনাক্ত করা হয়েছিল। এটি গ্রিনল্যান্ডের বরফ পরিস্থিতিতে টিকে ছিল। মানব প্রজাতি হোমো সেপিয়েন্স ম্যামথের চেয়ে তিন লাখ বছর আগে উদ্ভূত হয়েছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।