আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বৈচিত্র্যময় বিশ্বের একেক স্থানে লুকিয়ে আছে একেক রহস্য। আর তা নিজ চোখে দেখতে ও সাক্ষী হতে সেসব স্থানে পৌঁছে যান পর্যটক ও কৌতূহলীরা। তেমনই এক স্থান বা দেশের নাম হলো গ্রিনল্যান্ড। এই দেশের নাম শুনতেই সবার চোখে ভেসে ওঠে হয়তো সবুজে মোড়ানো কোনো এক স্থান, তবে অবাক করা বিষয় হলো বিশ্বের এই স্থান সব সময় তলিয়ে থাকে বরফে।
‘গ্রিনল্যান্ড’র নামকরণ হয় যেভাবে
এরিক দ্য রেড, যিনি একজন আইসল্যান্ডীয় খুনি, তিনিই প্রথম স্থানটির নাম দেন। তিনি এই দ্বীপে নির্বাসিত হয়েছিলেন। বসতি স্থাপনকারীদের আকৃষ্ট করবে এই আশায় তিনি এটিকে ‘গ্রিনল্যান্ড’ নামে অভিহিত করেছিলেন। তবে বিজ্ঞানীদের মতে, ২.৫ মিলিয়ন বছর আগে গ্রিনল্যান্ড বেশ সবুজ ছিল।
গ্রিনল্যান্ড বর্তমান বিশ্বের বৃহত্তম স্থানগুলোর মধ্যে একটি। এটি মূলত বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ। গ্রিনল্যান্ড দ্বীপটির আয়তন ২.১৬ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার (৮ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩০ বর্গ মাইল)। আর ২০১৭ সালের আদমশুমারি অনুসারে, বৃহত্তম এই দ্বীপে বসবাসরত জনসংখ্যা মাত্র ৫৬,৪৮০ জন। সে হিসাবে এটি বিশ্বের সবচেয়ে কম ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি।
ইতিহাস অনুযায়ী, সাড়ে ৪ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে গ্রিনল্যান্ডে মানুষ বসবাস করছেন। ঐতিহাসিকদের মতে, ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে গ্রিনল্যান্ডে প্রথম মানুষ এসেছিলেন। অভিবাসীদের দলটি মারা যায়, তবে উত্তর আমেরিকা থেকে অভিবাসী আরও কয়েকটি দল তাদের উত্তরাধিকারী হয়েছিল।
এরপর ইনুইটরা ১৩ শতকে এশিয়া থেকে এখানে স্থানান্তরিত হয়েছিল ও তাদের বংশধর আজো টিকে আছে। বেশিরভাগ ইনুইট গ্রিনল্যান্ডাররা তাদের প্রত্যক্ষ বংশধর ও তারা কয়েক শতাব্দী পুরানো ঐতিহ্যের চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে গ্রিনল্যান্ডের জনসংখ্যার ৮৮ শতাংশই ইনুইট (প্রধানত কালাল্লিট) বা মিশ্র ডেনিশ ও ইনুইট। বাকি ১২ শতাংশ ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত, প্রধানত ড্যানিশ।
গ্রিনল্যান্ডে বসবাসকারীদেরকে ইনুইট বা কালাল্লিত বলা হয়, যার প্রকৃত অর্থ হলো ‘গ্রিনল্যান্ডার’। আর স্থানীয় ইনুইট ভাষায় একে বলে কালাল্লিসুট। গ্রিনল্যান্ডের ইনুইটদের মতো কানাডা ও আলাস্কার মতো বিশ্বের অন্যান্য বরফাচ্ছন্ন অংশে বসবাসরত ইনুইটদের ভাষা ও সংস্কৃতিতেও কিছুটা মিল আছে।
তবে গ্রিনল্যান্ডের জনসংখ্যার অধিকাংশই গ্রিনল্যান্ডিক (প্রধানত কালাল্লিসুট) ও ড্যানিশ উভয় ভাষায় কথা বলে। ১৯৭৯ সালে গৃহ শাসন প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই দুটি ভাষা জনসাধারণের কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমানে সেখানকার তরুণ প্রজন্ম স্কুলে ইংরেজির পাশাপাশি উভয় ভাষাই শেখে।
গ্রিনল্যান্ড ভ্রমণে কোথায় ঘুরবেন?
গ্রিনল্যান্ডের জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ রাজধানী নুউকে বাস করে। প্রাণবন্ত শহরটি এই দ্বীপের সবচেয়ে বড়। সেখানে অনেকগুলো জাদুঘর, হিপ ক্যাফে ও ফ্যাশন বুটিক হাউজ আছে। সেখানে গেলে গ্রিনল্যান্ডের জাতীয় জাদুঘর, কাটুয়াক কালচারাল হাউজের পাশাপাশি নুউক আর্ট মিউজিয়াম দেখতে ভুলবেন না।
কেন সেখানে রাস্তা নেই?
তবে জানলে অবাক হবেন, গ্রিনল্যান্ডে কোনো রাস্তা নেই। ২.১৬ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটারের ভূমি থাকা সত্ত্বেও, সেখানে এমন কোনো রাস্তা বা রেলপথ নেই যা সেখানকার জনগণের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে পারে। যদিও শহরের মধ্যে রাস্তা আছে, তবে সেগুলো শেষ হয় উপকণ্ঠে।
সেখানে ভ্রমণের মাধ্যম হলো- প্লেন, নৌকা, হেলিকপ্টার, স্নোমোবাইল বা কুকুর দ্বারা চালিত গাড়িগুলো। যদিও নৌকায় চলাচল ব্যবস্থা সেখানকার পরিবহন ব্যবস্থার সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম।
মাছ ধরা গ্রিনল্যান্ডের একটি প্রধান শিল্প। দেশটি মাছ, সামুদ্রিক খাবার ও গ্রিনল্যান্ডে শিকার করা অন্যান্য প্রাণী যেমন- তিমি ও সীল ছাড়া প্রায় সবকিছুই আমদানি করে। প্রতিটি প্রশাসনিক এলাকায় তিমি, সীল ও মাছের একটি নির্দিষ্ট কোটা আছে, যেন অতিরিক্ত মাছ ধরা না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য। তবে নীল তিমি ধরায় নিষেধাজ্ঞা আছে।
সত্যিই কি সেখানে রাত নামে না?
গ্রিনল্যান্ডের আরও এক বিস্ময়কর বিষয় হলো সেখানকার আকাশে মধ্যরাতেও দেখা যায় সূর্য। আর এই অভূতপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী হতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা গিয়ে ভিড় করেন সেখানে। প্রতিবছর ২৫ মে থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত আইসল্যান্ডে সূর্য অস্ত যায় না।
ফলে ২৪ ঘণ্টাই দিন থাকে একটানা তিন মাস। ২১ বছরের দীর্ঘতম দিন হওয়ায় গ্রিনল্যান্ডে গ্রীষ্মকালীন অয়নকাল ও জাতীয় ছুটির দিন। ওইদিন স্থানীয়রা মধ্যরাতে সূর্যের আলোতে বারবিকিউসহ উৎসবে মেতে ওঠেন খোলা আকাশের নিচে।
সূত্র: ভিজিট গ্রিনল্যান্ড.কম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।