বিশ্বে বায়ু দূষণে শীর্ষে ঢাকা, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য
জুমবাংলা ডেস্ক : বিশ্বের অন্যতম দূষিত বাতাসের শহরে পরিণত হয়েছে রাজধানী ঢাকা। গেল কয়েক মাসে বিশ্বের প্রথম চারটি দূষিত বায়ুর শহরের একটি। মাঝেমধ্যে ঢাকা উঠে আসছে এক নম্বরে। উন্নয়ন কাজ ও সেবাপ্রতিষ্ঠানের যথেচ্ছ খোঁড়াখুঁড়ির কারণে জনবহুল শহরটির বাতাসের মান এখন খুবই অস্বাস্থ্যকর। বিশেষজ্ঞরা এ জন্য প্রকল্প প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকে দায়ী করেন।
‘মাস্ক পড়ে কাজ করতে গেলে আমাদের অনেক সময় দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তাই অনেক সময় মাস্ক খুলে রাখি। এ সময় ধুলাবালি আমাদের কানে, নাকে ও মুখে যায়। পরে তা কাশির সঙ্গে বের হয়ে আসে।’ এভাবেই নিজেদের অসাহায়ত্বের কথা বলছিলেন মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ চার রাস্তার মোড়ের এই ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, এটি একটি ব্যাপক সমস্যা। এসব ধুলাবালির আমাদের ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। আমরা শ্বাসকষ্টের স্বীকার হই।
রাজধানীর ব্যস্ত মোড়গুলোর অন্যতম এটি। কয়েক মাস ধরে এই ধুলোর মধ্যে দিনের বেশির ভাগ সময় কাজ করে বারবার অসুস্থ হয়েছেন তিনি।
এই ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যারা আছেন, তারা যদি একটু সুদৃষ্টি দেন তাহলে আশা করি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ সাধারণ মানুষ এই ধুলা থেকে রেহাই পাবে।
এই ট্রাফিক কর্মকর্তার মতোই অবস্থা এলাকার ব্যবসায়ী ও পথচারীদের।
শুধু মোহাম্মদপুর না, রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকার একই হাল। প্রধান সড়কগুলোতে চলছে ছোট-বড় উন্নয়ন কাজ। সঙ্গে যোগ হয়েছে সেবা সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি। যেসব রাস্তায় কাজ শেষ হয়েছে, তা সংস্কার না করেই মাসের পর মাস ফেলে রাখা হয়েছে। শুধু জনজীবন নয়, ধুলার কারণে ধ্বংস হচ্ছে রাজধানীর প্রাকৃতিক পরিবেশও।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, ঢাকা শহরে এমনিতেই সবুজের পরিমাণ কম। কিন্তু ধুলা ও বায়ু দূষণের কারণে গাছগুলো সঠিকভাবে সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে না। এ ছাড়া শহরের প্রত্যেকটা প্রাণীও নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
এর ফলে বিশ্বের আর সব দূষিত বায়ুর শহরকে পেছনে ফেলে এক নম্বরে উঠে এসেছে ঢাকা। গত ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি পর পর দুদিন ছিল সবার শীর্ষে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজুয়ালের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শনিবার ঢাকার একিউআই স্কোর ছিল ২৭২, রোববার ২৬৩, সোমবার ২৮৭ ও মঙ্গলবার ২১৬, যা খুবই অস্বাস্থ্যকর। বায়ুর সহনীয় মাত্রা হচ্ছে একিউআই ৫০ এর নিচে।
আবু নাসের খান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বায়ু দূষণের মাত্রা সাংঘাতিকভাবে বেড়ে গেছে। এই বায়ু দূষণের কারণে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকিতে পড়ে। শহরের প্রত্যেকটা নাগরিক এই বায়ু দূষণ দিয়ে নানান রকমে আক্রান্ত হয়। এই বায়ু দূষণের প্রাধান কারণ হলো নিয়ম না মেনে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ করা। দ্বিতীয়ত, দূষণ নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান যেমন পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, রাজউক বা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করছে না।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকার বায়ু দূষণ ধারাবাহিকভাবেই উদ্বেগজনক। কিন্তু শীতকালে এ দূষণ অতি বিপজ্জনক অবস্থায় আছে। বায়ু দূষণের অনেক উৎসের মধ্যে ইদানীং নির্মাণযজ্ঞও উঠে এসেছে। ভবন বা অবকাঠামো নির্মাণে আদর্শ মান মানা হয় না। সরকারি ও বেসরকারি সব উন্নয়নকাজ উন্মুক্তভাবেই করা হচ্ছে।
রাজধানীর মতোই নাজুক পরিস্থিতি দেশের অন্য বড় শহরগুলোরও। ঢাকার পরই রয়েছে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ।
রাতের ঘুম উড়িয়ে দেবে উল্লুর এই ওয়েব সিরিজ, ভুলেও কারও সামনে দেখবেন না
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।