আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে অত্যাধুনিক সেন্ট্রিফিউজের ব্যবহার শুরু করেছে ইরান। গতকাল শনিবার দেশটির পরমাণু সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি এ কথা জানিয়েছেন। ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে করা পরমাণুচুক্তি থেকে পর্যায়ক্রমে সরে দাঁড়ানোর অংশ হিসেবে ইরান এ যন্ত্রের ব্যবহার শুরু করল।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে ২০১৫ সালে পরমাণু চুক্তি করে ইরান। চুক্তিতে বলা আছে, পরমাণু কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার শর্তে ইরানের ওপর থেকে পর্যায়ক্রমে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। গত বছর চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি চুক্তিটি বাঁচিয়ে রাখতে ইরানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে সেন্ট্রিফিউজ (তরল পদার্থের বস্তুকণা ঘূর্ণনগতির দ্বারা আলাদা করার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র) ব্যবহারের কথা জানাল ইরান।
তেহরানে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বেহরুজ কামালভান্দি জানান, প্রতিশ্রুতি থেকে সরে দাঁড়ানোর অংশ হিসেবে ‘২০ আইআর-ফোর’ এবং ‘২০ আইআর-সিক্স’ নামের দুটি অত্যাধুনিক সেন্ট্রিফিউজ সক্রিয় করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এসব যন্ত্র ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রাখবে।’
কামালভান্দি বলেন, ‘আগে যেসব যন্ত্র ব্যবহার করা হতো, সেগুলোর তুলনায় নতুন সেন্ট্রিফিউজ দুটির কার্যক্ষমতা অনেক বেশি। শুক্রবার থেকে নতুন যন্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়েছে।’ তবে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা যেকোনো মুহূর্তে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের প্রকল্প পরিদর্শন করতে পারবেন বলেও জানিয়েছেন ওই মুখপাত্র।
২০১৫ সালের ওই চুক্তিতে বলা আছে, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে কেবল ‘ফার্স্ট জেনারেশন’ কিংবা ‘আইআর-ওয়ান’ মডেলের সেন্ট্রিফিউজ ব্যবহার করা যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার বলেছেন, ‘ইরান যে চুক্তি লঙ্ঘন করবে, এটা অনুমেয় ছিল। তারা অনেক বছর ধরেই চুক্তি অমান্য করে আসছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’
এদিকে তেল চোরাচালানের অভিযোগে হরমুজ প্রণালি থেকে গতকাল একটি নৌকা জব্দ করেছে ইরান। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ফিলিপাইনের ১২ নাগরিককে। ইরানের আধারাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা ‘আইএসএনএ’র খবরে বলা হয়, ‘জাহাজ টানার ওই নৌকায় (টাগবোট) দুই লাখ ৮৩ হাজার লিটার পেট্রল ছিল, যার আনুমানিক বাজারমূল্য দুই কোটি ডলার।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, পরমাণুচুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে দাঁড়ানোর পর হরমুজ প্রণালিতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, নৌকা জব্দের ঘটনা এরই একটা অংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন দাবি করেছেন, ইরানের তেলবাহী একটি ট্যাংকার সিরিয়ার টারটাস বন্দরে পৌঁছেছে। ‘আদ্রিয়ান দারিয়া-১’ নামের ট্যাংকারটি যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকাভুক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞার পরও ইরান সরকার গোপনে সিরিয়ায় জ্বালানি তেল সরবরাহ করে।
স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি সংযুক্ত করে এক টুইট বার্তায় বোল্টন বলেন, ‘যারা বলছে যে ইরানের ট্যাংকার সিরিয়ার পথে যায়নি, তারা মিথ্যা বলছে। ইরানের ট্যাংকারটি টারটাস বন্দর থেকে দুই নটিক্যাল মাইল দূরে রয়েছে।’ বোল্টন আরো বলেন, ‘তেহরান মনে করে, নিজ দেশের জনগণের চেয়ে সিরিয়ার খুনি আসাদ সরকারকে সহায়তা করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মিথ্যা বলার অভ্যাস বাদ না দিলে এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ না করলে ইরান একটি নিষেধাজ্ঞা থেকেও রেহাই পাবে না।’ সূত্র : এএফপি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।