জুমবাংলা ডেস্ক : যশোর জেলার তিনটি উপজেলায় বিষাক্ত মদপানে গত পাঁচ দিনে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এক অবৈধ দেশি মদ ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ।
মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য, হাসপাতাল ও পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মিলিয়ে অ্যালকোহল পানে মৃত্যুর এমন সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে যশোর সদর, চৌগাছা ও মণিরামপুর উপজেলার বাসিন্দারা রয়েছেন। ইতিমধ্যে মাহমুদুল হাসান নামে আটক ব্যক্তির দেশি মদের দোকানে তল্লাশি করে সেখান থেকে মদের স্যাম্পল উদ্ধার করে পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ভেজাল বা বিষাক্ত মদপানে রবিবার (২৬শে এপ্রিল) নতুন করে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে,তারা হলেন,যশোর শহরের রেলগেট চোরমারা দীঘির পাড়ের মৃত কুরবান গাজীর ছেলে ওলিয়ার ও বিকাশ সাহানি বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকার দামোদর সাহানির ছেলে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ব্রাদার মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, রবিবার সকাল দশটা আট মিনিটে বমি, মাথা ঘোরাসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ওলিয়ার। আসলে তিনি অ্যালকোহল পয়জনিংয়ের শিকার। জরুরি বিভাগ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ওলিয়ারকে মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন কর্তব্যরত ডাক্তার।সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে রিপোর্ট আসার পরে জরুরি বিভাগের খাতায় তথ্য সংশোধন করে ‘অ্যালকোহল পয়জনিং’ লেখা হয় বলেও জানান এই ব্রাদার।
অপরদিকে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক রুবেল হাওলাদার বলেন, বিকাশ সাহানি রবিবার রাত দুইটা ২৫ মিনিটে শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি হতে আসে।তখন আমার সন্দেহ হয়েছিল। রোগীর কেস হিস্ট্রি জেনে চিকিৎসা দেওয়ার স্বার্থে বিকাশের পরিবারের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তারা জানায়, সে মদ খেয়েছে। ভোর চারটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকাশ সাহানি মারা যায়।
পান করা অ্যালকোহলে পয়জন থাকার কারণে বিকাশের মৃত্যু হয় বলে মনে করছেন ডাক্তার রুবেল।
যশোর কোতয়ালি মডেল থানার (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আগে থেকেই পুলিশ বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখছে।অপরদিকে চৌগাছায় শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে দুই ট্রাকচালকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।হাসপাতালে আনার সময় তাদের মৃত্যু হয়।
এর আগে শনিবার বিকেলে খলিলুর রহমান নামে এক ট্রাকচালকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। স্থানীয়দের ধারণা,বিষাক্ত মদপানে এই দুই ট্রাকচালক মারা গেছেন। পুলিশের সন্দেহও তেমনই। যদিও থানার প্রধান পুলিশ কর্মকর্তা এই বিষয়ে খোলসা করে কিছু বলেননি।
এছাড়া শরিফুল ইসলাম (৩৬) নামে আরেক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনিও মাদকসেবী হিসেবে পরিচিত। তার বাড়িতে শনিবার রাতেই জনপ্রতিনিধিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা গিয়েছিলেন।
শনিবার মৃত্যু হয়েছে চারজনের। তারা হচ্ছেন যশোর সদর উপজেলার শেখহাটির আরশাদ আলীর ছেলে শাহিন হোসেন (৩৫), চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের খিতিবদিয়ার শাহজাহান সরদারের ছেলে ইনামুল হোসেন (৩৯), ঝিকরগাছা উপজেলার কাটাখাল গ্রামের সাহেব আলী (৬৫) ও মণিরামপুর উপজেলার মদনপুর গ্রামের তপন হালদার (৪০)। যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাদের।
বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার মৃত্যু হয় মণিরামপুর উপজেলার মদরপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মোমিন (৪৮), একই গ্রামের মুক্তার হোসেন (৪৭), যশোর শহরের গরীব শাহ মাজার এলাকার শরিফ উদ্দিন ওরফে মনি বাবু (৪৫), ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের সাবুর (৪৬), বেজপাড়ার নান্টু (৩৫), ঝুমঝুমপুর মান্দারতলার ফজলুর রহমান চুক্কি (৫০), চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলার বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান (৪৫) ।
এদিকে, এ সব মৃত্যুর ঘটনায় বহুল আলোচিত ভেজাল ও বিষাক্ত মদের কারবারি মাহমুদুল হাসান ওরফে হাসানের বিরুদ্ধে যশোর কোতয়ালি মডেল থানায় মোট পাঁচটি মামলা হয়েছে যাহার মামলা নম্বর — ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬ ও ৫০, তারিখ ২৫.৪.২০) হয়েছে।এর মধ্যে তিনটি মামলায় মদ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।অন্য দুটি মামলায় অবৈধভাবে মদ বিক্রির অভিযোগ আনা হয়েছে।
যশোর কোতয়ালি মডেল থানার(ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, একটি মামলার বাদী যশোর শহরতলীর ঝুমঝুমপুর বালিয়াডাঙ্গা এলাকার মৃত ফজলুর রহমান চুটকির স্ত্রী সাথী বেগম (৪০)। অন্য দুটি মাদক মামলার বাদী থানার এসআই কাইয়ুম মুন্সি ও এসআই হারুনার রশিদ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।