আন্তর্জাতিক ডেস্ক: লেবাননের রাজধানী বৈরুতে মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) ভয়াবহ দুটি বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত তিন হাজারেরও বেশি। আহতদের হাসপাতালে ভর্তির জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব জানিয়েছেন, বেইরুট বন্দরের একটি ওয়্যারহাউসে বা গুদামে দুই হাজার ৭৫০ ম্যাট্রিক টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুত করা ছিল। তার থেকেই বিস্ফোরণ হয়েছে। এটি নাশকতামূলক ঘটনা নয়।
আহতদের মধ্যে বাংলাদেশের নৌসেনার ১৯ জন কর্মীও আছেন। বাংলাদেশের নৌবাহিনীর জাহাজ বিএনএস বিজয় বৈরুত বন্দরে নোঙর করা ছিল।
বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি আবদুল্লাহ আলি মামুন নিউ এজ সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের ফলে তারা আহত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, গত ছয় বছর ধরে ওই গুদামে এই পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুত করে রাখা হয়েছিল। ২০১৪ সালে একটি মালবাহী জাহাজে করে ওই রাসায়নিক এসেছিল। কাগজপত্রে গণ্ডগোল থাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজের জিনিস বাজেয়াপ্ত করে। তারপরই ওই রাসায়নিক গুদামে মজুত করা হয়। ঠিক ছিল পরে নিলামের মাধ্যমে ওই রাসায়নিক বাজারে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু গত ছয় বছরে সে কাজ করা যায়নি। শুধু তাই নয়, এই পরিমাণ রাসায়নিক যেখানে মজুত ছিল, সেখানে যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না।
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জমিতে সারের কাজে লাগে। খনিতে কাজে লাগে। আবার বোমা তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়। সহজেই এর থেকে বিস্ফোরণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। মঙ্গলবার সে ঘটনাই ঘটে বৈরুতে।
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, যাদের গাফিলতিতে এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে, তাঁদের সকলকে কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে। তবে আপাতত আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করাই সরকারের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য।
এদিকে বৈরুতে এই বিস্ফোরণের চার-পাঁচ ঘণ্টা পরেও গোটা শহরে কেবলই অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন শোনা যাচ্ছিলো। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, প্রায় প্রতিটি হাসপাতালই ভর্তি হয়ে গিয়েছে। ফলে আহতদের ভর্তি করা যাচ্ছে না। প্রাথমিক চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।
লেবাননের এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের পরে বহু দেশই সমবেদনা জানিয়েছে। জার্মানির বিদেশমন্ত্রী সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রাথমিক ভাবে এটিকে সন্ত্রাসী হামলা বলে মনে করেছিলেন।
হোয়াইহাউসে সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছিলেন, তার জেনারেলরা বিস্ফোরণের খবর তাঁকে দিয়েছেন। জেনারেলদের ধারণা, অত্যন্ত শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। রাসায়নিক থেকে এত বড় বিস্ফোরণ হতে পারে না বলেই তাঁদের মনে হয়েছে। ট্রাম্পের আশঙ্কা, এটি সন্ত্রাসী হামলা।
ঘটনার পরেই অবশ্য ইসরায়েল বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেয়, এই ঘটনার সঙ্গে কোনও ভাবেই তারা জড়িত নয়। হেজবোল্লাহও এই ঘটনার সঙ্গে ইসরায়েলের যুক্ত থাকার দাবি করেনি।
গত কয়েক দিন ধরে ইসরায়েল-লেবানন-সিরিয়া সীমান্তে উত্তেজনা চলছে। ফলে প্রাথমিক ভাবে অনেকেই মনে করেছিলেন, বৈরুতের বিস্ফোরণের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষের বিষয়টি জড়িত।
বছরখানেক ধরে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে লেবানন। দেশ জুড়ে বহু বিক্ষোভও হয়েছে। করোনাকালে সংকট আরও বেড়েছে। তারই মধ্যে এই ঘটনা সরকারকে আরও সমস্যায় ফেলল।
বুধবার (৫ আগস্ট) দেশজুড়ে ইমার্জেন্সি ঘোষণা করা হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে আগামী দুই সপ্তাহ জরুরি অবস্থা থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।