কিছুদিন আগেও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে পান করা নিয়ে নানা ধরনের কথা প্রচার হতে দেখা যেত। বলা হতো, বৃষ্টির পানি সবচেয়ে নিরাপদ। কারণ হিসেবে বলা হতো, প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টির পানি জীবাণুমুক্তকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। তাই এটা বিশুদ্ধ। কিন্তু বর্তমানে এ ধরনের কথা প্রচার আর দেখা যায় না। বৃষ্টি পানির ব্যাপারে ভালো ভালো কথা শোনা যায় না এখন আর সেভাবে। প্রশ্ন হলো, কেন? বৃষ্টির পানি কি তাহলে আর নিরাপদ নয়? বিজ্ঞান কী বলে?
অনেকগুলো কারণে বৃষ্টির পানি পান করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে বুঝতে হবে, বৃষ্টি কীভাবে হয়। আমাদের চারপাশের জলাশয়—পুকুর, নদী-নালা, খাল-বিল থেকে সূর্যের তাপে পানি বাষ্পীভূত হয়। ওপরের দিকে বায়ুমণ্ডলের চাপ ও তাপমাত্রা কম। ফলে এই জলীয়বাষ্প ঠান্ডা হয়ে ধীরে ধীরে ওপরে উঠে যায়।
একসময় জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে তৈরি করে মেঘ। ঘনীভূত হওয়ার ফলে মেঘের কণা—বলা উচিত, মেঘের ভেতরে জলীয়বাষ্পের কণাগুলো ভারী হতে থাকে ধীরে ধীরে। ভারী হতে হতে অনেক বেশি ভারী হয়ে গেলে এসব কণা আর বাতাসে ভেসে থাকতে পারে না, ঝরে পড়ে ভূপৃষ্ঠে। খুব সরল করে বললে, এই হলো পানিচক্র বা বৃষ্টি হওয়ার প্রক্রিয়া।
জলাশয় থেকে বাষ্পীভূত হওয়ার সময় পানি প্রাকৃতিকভাবে বিশুদ্ধ হয়ে যায়। বিপত্তি বাঁধে যখন জলীয়বাষ্প বায়ুমণ্ডলের ভেতর দিয়ে ওপরে উঠে যায় এবং বৃষ্টি হয়ে আবার বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে ফিরে আসে ভূপৃষ্ঠে। কারণ, বায়ুমণ্ডলে শুধু বিশুদ্ধ গ্যাসের অণু থাকে না। এর সঙ্গে মিশে থাকে ধুলোবালি, জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসসহ নানা রকম দূষিত উপাদান। এসব উপাদান মিশে যায় বৃষ্টি পানির সঙ্গে।
বর্তমানে বায়ুদূষণ বেড়ে গেছে অনেক। ফলে বৃষ্টির পানিতে এসব উপাদান আরও বেশি মিশছে। অনেকে টিনের চাল বা ছাদের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করেন। সেটা আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, সে ক্ষেত্রে ছাদ বা টিনের চালের ময়লা, পাখির বিষ্ঠা ইত্যাদি পানিতে দ্রবীভূত হয়।
তাই সরাসরি বৃষ্টির পানি পান করা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানাচ্ছে সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণা। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জনস্বাস্থ্য সংস্থা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জোর দিয়ে বলছে, গৃহস্থালী কাজে বৃষ্টির পানি ব্যবহার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। তবে খাদ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়—যেমন আসবাব পরিষ্কার বা ফুল গাছে পানি দেওয়ার কাজে বৃষ্টির পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবু যেসব এলাকায় খাবার পানির প্রচণ্ড সংকট, সেখানকার অধিবাসীরা বৃষ্টির পানি পান করতে বাধ্য হলে কী করবেন? সে জন্য পানি সংরক্ষণ করে, ফুটিয়ে, থিতিয়ে কিংবা অন্য কোনোভাবে বিশুদ্ধ করে নিয়ে পান করতে হবে। তবে যথাসম্ভব বৃষ্টির পানি পান না করাই উচিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।