জুমবাংলা ডেস্ক : একসময় আকাশপথে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুট দাপিয়ে বেড়ানো বেসরকারি এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের উড়োজাহাজগুলো এখন নির্জীব। পরিত্যক্ত অবস্থায় চূড়ান্ত ক্ষয়ের প্রহর গুনছে। এয়ারলাইন্সটির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর খোঁজ নেই। পরিচালনা পর্ষদ কিংবা মালিকপক্ষের দেখা মেলাও ভার।
দীর্ঘ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটির উড়োজাহাজগুলো হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সবগুলো উড়োজাহাজই এখন অকেজো। চাইলেই আর উড়তে পারবে না। আর উড়তে গেলে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে পার্কিং ও সারচার্জ বাবদ দিতে হবে শত শত কোটি টাকা।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বেসরামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র জানায়, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের মতো রিজেন্ট এয়ারওয়েজের দুটি, জিএমজি এয়ারলাইন্সের একটি ও এভিয়েনা এয়ারলাইন্সের একটি করে উড়োজাহাজ প্রায় এক যুগ ধরে শাহজালালের পার্কিংয়ে পড়ে রয়েছে। অকেজো এসব উড়োজাহাজ সরিয়ে নিতে মালিকপক্ষকে বারবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পার্কিং ও সারচার্জ জমা দেওয়ার ভয়ে সরিয়ে নেয়নি কেউ।
গত ১১ বছরে এই ১২টি উড়োজাহাজের পার্কিং ও সারচার্জ বাবদ বকেয়া প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বকেয়া জিএমজি এয়ারলাইন্সের। জিএমজির কাছে ৩শ ৬০ কোটি টাকা পায় বেবিচক। ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট স্থগিত করে জিএমজি এয়ারলাইন্স। এরপর আর কখনো আকাশে ডানা মেলেনি। আর রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছে বেবিচকের পাওনা ২০০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের মার্চে বন্ধ হয় রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। তবে তার আগেই বেশ কয়েকটি রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয় সংস্থাটি।
এর বাইরে পার্কিং চার্জ ও সারচার্জ বাবদ ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে বকেয়া ৩শ ৫৫ কোটি টাকা। দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একমাত্র উড়োজাহাজ কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বন্ধ ২০১৬ সাল থেকে। এখন এসব এয়ারলাইন্স থেকে পাওনা টাকা আদায়ে উড়োজাহাজগুলো নিলামে বিক্রির সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বেবিচক।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো নিলামে বিক্রির জন্য যে যে ধাপ রয়েছে, সেগুলো শেষ। আর এসব উড়োজাহাজ যে এখন উড়তে পারবে না, এ বিষয়ে টেকনিক্যাল মিটিং করেছি। আমাদের জব্দ তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি বেবিচক চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। কারণ, এসব উড়োজাহাজ থেকে যে আমাদের রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়নি তা জানানো হয়েছে।’
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পরিচালানা পর্ষদের সদস্যরা জানান, ইউনাইটেডের কার্যক্রম ফের শুরু করতে হলে এয়ার অপারেটিং সার্টিফিকেট (এওসি) নবায়ন করতে হবে। কিন্তু বকেয়া পরিশোধ না করায় এওসি দিচ্ছে না বেবিচক।
বেবিচক সূত্র জানায়, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে বেবিচকের পাওনা ৩৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল দেনা ৫৫ কোটির মতো, বাকি টাকা সারচার্জ। এ টাকা পরিশোধ না করলে এওসি ইস্যু করা যাবে না। যদিও ইউনাইটেডের পক্ষ থেকে সারচার্জ মওকুফের অনুরোধ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় তা নাকচ করে দিয়েছে। ফলে ইউনাইটেডের জন্য আর কোনো দরজা খোলা রইলো না।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘আমরা ৩শ কোটি টাকা সারচার্জ মওকুফের জন্য আবেদন করেছিলাম। আর মূল বকেয়া ৫৫ কোটি টাকা এয়ারলাইন্স চালু হওয়ার পর ক্রমান্বয়ে দেবো বলেছিলাম। এ প্রস্তাবে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মতি দেয়নি। ফলে এয়ারলাইন্স পরিচালনায় এওসি নবায়ন করতে পারিনি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।