আবু সাঈদ, বেরোবি প্রতিনিধি : রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক প্রক্টর এবং ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে ৩৮ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে একই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সীমা আক্তারকে বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই সংক্রান্ত সংলাপের স্ক্রিনশটের একটি প্রিন্ট কপি আমাদের হাতে এসেছে।
যাতে সীমা বলেন, আসসালামু আলাইকুম স্যার, স্যার আমি সীমা। এটা আমার নতুন নাম্বার স্যার। তারপর শিক্ষক গোলাম রাব্বানী বলেন, মেনেজ করেছো? উত্তরে সীমা বলেন, ২৮ লাখ করেছি স্যার। তখন শিক্ষক রাব্বানী বলেন, না না ৩৮, আমি একা হলে কম হতো এখানে ভিসি, এক্সপার্ট, নেতা, আরো অনেকে আছে সবাইকে ম্যানেজ করতে হবে। তখন সীমা বলেন, জি স্যার এরশাদ লোন করবে। ইনশাল্লাহ হয়ে যাবে স্যার। আপানি শুধু দেখেন আমার যেনো হয়। বাসায় সবাই টেনশন করে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষিকা সীমা আক্তার বলেন, “প্রথমত এই বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। আর যে স্ক্রিনশট আপনাদের হাতে গেছে সেটার কোনো সত্যতা নেই।” তাছাড়া এরশাদ উনার কে হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এরশাদ আমার স্বামী।”
এই বিষয় জানতে চাইলে শিক্ষক মোঃ গোলাম রাব্বানী বলেন, “এসব স্ক্রিনশটের আমার কাছে চার পয়সার দাম নেই। এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট একটা ষড়যন্ত্র।”
উল্লেখ্য যে, অভিযুক্ত সীমা আক্তার তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. হাসীবুর রশীদের আমলে ২০২৩ সালে নিয়োগ পান। ১৯ সেপ্টেম্বর ২৩ নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন মোট ৪৭ জন। যেখানে লিখিত পরীক্ষায় পাস করেন মোট ৭ জন প্রার্থী। ভিসিসহ গোলাম রব্বানীর পাতানো বোর্ডে ১ টি পদের বিপরীতে কম যোগ্যতা সম্পূর্ণ একাধিক প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। যা ২৪ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কার্যকর হয়।
সীমা আক্তার ছাড়াও অপরজন হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম। অথচ এই বিভাগের শিক্ষার্থী হয়েও নিজ বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষায় ডাক পাননি জোবেদা আক্তার।
প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ঐ শিক্ষার্থী যোগ্য প্রার্থী হিসেবে আবেদন করলেও লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় তাঁকে ডাকা হয়নি। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী চাকরি প্রার্থী জোবেদা আক্তার। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেন।
জানা যায়, জোবেদা আক্তার ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ২০১৭ সালে স্নাতকে (সম্মান) সিজিপিএ ৩.৬২ (৪ স্কেলে) এবং ২০১৮ সালে স্নাতকোত্তর সিজিপিএ ৩.৫৫ (৪ স্কেলে) পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। এ কারণে ওই বছর তিনি প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক পান। এ নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জোবেদা জানিয়েছেন, স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদন করি। কিন্তু গত ২১ সেপ্টেম্বর সেই নিয়োগ পরীক্ষার লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর নিয়োগ সম্পন্ন করা হলেও আমাকে কোনো চিঠি, মেসেজ বা মোবাইল কল করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, আমাকে মেসেজ ও কল করা হয়েছিল। কিন্তু আমি মোবাইল বার বার চেক করেছি। গ্রামীণফোন অফিস থেকে এক মাসের কল ও মেসেজ লিস্টও বের করে দেখেছি। সেপ্টেম্বর মাসের ১ থেকে ২৫ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো কল বা মেসেজ আসেনি। এ ঘটনায় বিচার চাওয়ার পর ভুক্তভোগীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকরি ‘খেয়ে দেওয়া’র হুমকি দেন তৎকালীন প্রক্টর প্রক্টর শরিফুল ইসলাম ও ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী। ওই নিয়োগ প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়।
মূলত সীমা আক্তার ও ছাত্রলীগের নেতা মনিরুল ইসলামকে নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত জোবেদা আক্তারকে নিয়োগ পরীক্ষায় ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।