রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের কৃষকরা এখন খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন পার করছে। গম, ক্যানোলা, জব, রাইসহ বিভিন্ন শস্য তারা উৎপাদন করে থাকে। তবে তা সময় মতো মার্কেটে বিক্রি করা বা শস্য কেটে ঘরে আনা ইত্যাদি কাজে যুদ্ধের কারণে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। তার উপরে করোনার পর থেকেই সারের দাম বাড়তে শুরু করে এবং যুদ্ধের কারণে সারের দাম আরো বেড়ে যায় যা কৃষকদের জন্য মাথা ব্যথার কারণ। এ সমস্ত পরিস্থিতির ফলে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট চরম মাত্রায় দেখা দিতে পারে।
নাসা হার্ভেস্ট হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠান যারা দীর্ঘ সময় ধরে ইউক্রেনে ফসল উৎপাদন এবং বন্টন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গবেষণা করছে এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করছে। তারা এজন্য মূলত স্যাটেলাইট ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে। যুদ্ধের সময় এ ধরনের গবেষণা বৈশ্বিক খাদ্য এবং দুর্ভিক্ষের পূর্ভাবাস দিতে এবং সংকট এড়াতে সহায়তা করতে পারে।
রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের কারণে শস্যপণ্য উৎপাদন এবং বিতরণে ইতিমধ্যে সমস্যা তৈরি হয়েছে। আফ্রিকা মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ মূলত শস্যপণ্যের জন্য রাশিয়া এবং ইউক্রেনের উপর নির্ভরশীল। এসব দেশে এখন থেকেই খাদ্য সমস্যার বিষয়টি প্রকট আকারে দেখা দিতে শুরু করেছে।
ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল খাদ্য পণ্য উৎপাদন এবং বিতরণের কাজ করে থাকে তার একটা বড় অংশ এখন রাশিয়ার সেনাদের নিয়ন্ত্রণে। কৃষি জমিতে মাইন থাকার কারণে ইউক্রেনের কৃষকরা ফসল উৎপাদনের কাজ করতে পারছে না। রাশিয়ার সেনারা মাইন অপসারণে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।
ইউক্রেনের যে সমস্ত বন্দর দিয়ে শস্যপণ্য বিশ্বব্যাপী রপ্তানি হয়ে থাকে তা এখন বন্ধ আছে। ইউক্রেন সরকার ভয় পাচ্ছে যে যদি এসব বন্দর এখন খুলে দেওয়া হয় তাহলে তা রাশিয়া নিজেদের স্বার্থে এবং যুদ্ধে জয়ী হতে ব্যবহার করবে। অন্যদিকে রাশিয়া বলছে তারা বন্দর খুলে দিতে প্রস্তুত এবং মাইন অপসারণ করতেও রাজি আছে তবে তাদের শর্ত ইউক্রেনকে মেনে চলতে হবে।
ইউক্রেন সরকার চেষ্টা করছে যাতে বন্দর দিয়ে না হলেও ট্রেন এবং ট্রাকের মাধ্যমে যতটা সম্ভব শস্যপণ্য বিতরণ করা যায়। তবে এ পদ্ধতি অবলম্বন করে দূরের রাষ্ট্রে শস্যপণ্য বিক্রি করা সম্ভব নয়। বৈশ্বিক খাদ্য সংকট এড়াতে যেন কৃষি জমি এবং কৃষি পন্যকে অস্ত্র হিসেবে যাতে ব্যবহার করা না হয় এ বিষয়ে জাতিসংঘ জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতালি সরকার জানিয়েছে যে খাদ্য সরবরাহ এভাবে দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকলে বিশ্বের অনেক জায়গায় নারী এবং শিশু অনাহারে মারা যেতে পারে এবং দুর্ভিক্ষ শুরু হতে পারে।
ইউক্রেনের কৃষকরা সাধারণত জুন থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে কৃষি পণ্য উৎপাদন এবং ফসল কেটে ঘরে নিয়ে আসার কাজ করে থাকে। ইউক্রেনের কৃষকরা ফসল উৎপাদন এবং বাজারে বিক্রি করতে না পারার কারণে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।যদি রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে এই যুদ্ধ আরো দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত থাকে তাহলে বর্তমান বছরের এই সময়ে কৃষকরা তেমন ফসল উৎপাদন করতে পারবে না এবং বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবে না। ফলে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট এবং দুর্ভিক্ষ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।