আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দেশের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি শুধু সাধারণ মানুষকেই ভোগাচ্ছে না, ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্যও বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। তাই আগামী ১২ মাসের জন্য মূল্যস্ফীতিকেই প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন দেশের বিভিন্ন কম্পানির ৪৭ শতাংশ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। সেই সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে দুই বছর ধরে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, সেটাকেও ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম বাধা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারসের (পিডাব্লিউসি) বার্ষিক বৈশ্বিক সিইও জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এতে বাংলাদেশের বিভিন্ন কম্পানির সিইওরা তাঁদের এই মতামত দিয়েছেন। প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ৩৬ শতাংশ সিইও। যেখানে গত বছরের জরিপে এই আশাবাদ ছিল ৩১ শতাংশ সিইওর। অর্থাৎ দেশের ইতিবাচক অগ্রগতি হচ্ছে।
তবে জরিপে অংশ নেওয়া ৪৭ শতাংশ সিইও মূল্যস্ফীতিকে মূল হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- গত বছরের জরিপেও ৪৭ শতাংশ সিইও মূল্যস্ফীতিকে ব্যবসার মূল হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। গত বছরের মার্চ থেকে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ওপরে। এই পরিস্থিতিতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন।
মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমলে বেচাকেনা কমে যায়; স্বাভাবিকভাবে বিষয়টি তখন ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে যায়। ২০২২ সাল থেকেই দেশে সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। গত বছরের সিইও জরিপেও এ বিষয়টি উঠে আসে। তবে চলতি বছর ৪৫ শতাংশ সিইও এটিকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছেন; গত বছর এই হার ছিল ৩৪ শতাংশ। তৃতীয় হুমকি হিসেবে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার বিষয়টি উঠে এসেছে এবং এ ক্ষেত্রে উদ্বিগ্ন সিইওদের হার বেড়েছে।
২০২৪ সালে যেখানে ২৯ শতাংশ প্রধান নির্বাহী ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাকে ব্যবসা-বাণিজ্যের হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, ২০২৩ সালে সেখানে ২২ শতাংশ প্রধান নির্বাহী এ কথা বলেছিলেন। অর্থাৎ প্রধান নির্বাহীদের মানসিকতায় এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে বলে দেখা যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও সংকট নিরসনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে হামাস-ইসরায়েলের সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য আরো যেসব হুমকি প্রধান নির্বাহীরা চিহ্নিত করেছেন, সেগুলো হলো সামাজিক অসমতা, সাইবার ঝুঁকি, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যের ঝুঁকি।
জরিপে অংশ নেওয়া ১৭ শতাংশ সিইও সামাজিক অসমতাকে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন; গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে যা ছিল ১৬ শতাংশ। সাইবার নিরাপত্তা হুমকিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন ১৭ শতাংশ সিইও। গত বছর এ হার ছিল ৯ শতাংশ।
এবার জলবায়ু পরিবর্তনকে ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ১৪ শতাংশ প্রধান নির্বাহী; আগের বছর যা ছিল ১৩ শতাংশ। এ ছাড়া স্বাস্থ্যের ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ১৪ শতাংশ প্রধান নির্বাহী; আগের বছর যা ছিল ১৬ শতাংশ।
এ ছাড়া প্রধান নির্বাহীরা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন মূল্যস্ফীতি, সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সাইবার ঝুঁকি, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্যের ঝুঁকি ও সামাজিক অসমতা।
জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিগত ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক প্রবণতার প্রভাব বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে পড়ছে। সে জন্য দেশের বাজারব্যবস্থা প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে।
জরিপে অংশ নেওয়া ৯৫ শতাংশ প্রধান নির্বাহী বলেছেন, গত পাঁচ বছরে তাঁরা কোনো না কোনো পরিবর্তন এনেছেন। শুধু তাই নয়, ৭২ শতাংশ বলেছেন যে গত পাঁচ বছরে তাঁরা অন্তত এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যার বদৌলতে কম্পানির ব্যাবসায়িক মডেলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে।
জরিপে অংশ নেওয়া ৫৭ শতাংশ বাংলাদেশি সিইও মনে করেন না, এখন তাঁরা যে মডেলে ব্যবসা করছেন, আগামী এক দশক বা ১০ বছর পর তা বিশেষ সহায়তা ছাড়া টিকে থাকতে পারবে। এর আগের বছর এই হার ছিল ৫০ শতাংশ।
পিডাব্লিউসি বাংলাদেশের কান্ট্রি ক্লায়েন্ট ও মার্কেট লিডার মামুন রশিদ বলেন, ‘বাংলাদেশের সিইওরা তাঁদের ব্যবসার জন্য স্বল্পমেয়াদি চ্যালেঞ্জ এবং দীর্ঘমেয়াদি সুযোগ মোকাবেলা করে চলেছেন। ক্রমবর্ধমানসংখ্যক সিইও প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের রূপান্তরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, প্রভাবশালী পরিবর্তনগুলো পরিচালনা করছেন এবং তাঁদের স্টেকহোল্ডারদের জন্য অর্থপূর্ণ ফলাফল প্রদান করছেন।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।