ঈদুল আজহা এবং ব্যাংক খাত নিয়ে নানা গুজব ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে চলতি বছরের মে মাস শেষে দেশের বাজারে নগদ টাকার প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মে মাস শেষে নগদ টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা, যা এপ্রিলের তুলনায় ১৬ হাজার ৪১২ কোটি টাকা বেশি।
ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঈদুল আজহা সামনে রেখে মানুষের মধ্যে নগদ টাকার চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ব্যাংক খাত নিয়ে উদ্বেগ।
বিশেষ করে ছয়টি ইসলামী ব্যাংকের একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা এবং কিছু ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার গুজব, যা গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ফলে অনেকে তাঁদের আমানত তুলে নগদ অর্থ রাখার দিকে ঝুঁকেছেন।
আগেও ঘটেছে এমন প্রবণতা : এই প্রবণতা নতুন নয়। চলতি বছরের মার্চ মাসেও ঈদুল ফিতরের আগে একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
তখন এক মাসে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছিল প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। যদিও এপ্রিল মাসে তার একটি বড় অংশ ব্যাংকিং খাতে ফিরে আসে, প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা।
পরিসংখ্যানে নগদের উল্লম্ফন : ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত টানা ১১ মাস নগদ টাকার প্রবাহ বেড়েছিল। এরপর ছয় মাস কিছুটা কমলেও সেটি ছিল সামান্য, মাত্র ২০ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা।
আগস্টে যেখানে নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৯২ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা, সেটি মে ২০২৫-এ বেড়ে দাঁড়ায় দুই লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ কোটিতে।
আমানতের চিত্র : একই সময় মে মাস শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা, যা এপ্রিলের তুলনায় ১১ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা বেশি। বছরে হিসাব করলে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.৭৩ শতাংশ। তবে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সব ব্যাংকের চিত্র এক নয়, কিছু কিছু ব্যাংকে এখনো আমানত উত্তোলনের চাপ রয়েছে।
আস্থার সংকট ও দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ : বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংক খাতে লুটপাট, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে মানুষ ব্যাংকের প্রতি আস্থা হারিয়েছে।
ফলে অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নিচ্ছেন। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে, তবে ঈদ ও অনিশ্চয়তার কারণে নগদ টাকার ওপর মানুষের নির্ভরতা বাড়ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।