ঢাকা শহরের চেনা যানবাহনের তালিকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা আজ একটি অপরিহার্য নাম। আর এই রিকশাকে ঘিরেই নতুন করে শুরু হয়েছে বিতর্ক, আতঙ্ক, ও অসন্তোষ। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণায় এলো এমন এক তথ্য যা ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক, মালিক ও যাত্রী—সব পক্ষের জন্যই উদ্বেগের।
রিকশা: নতুন শুল্ক বাড়ার খবরে নড়েচড়ে বসেছে রিকশা খাত
বর্তমানে বাংলাদেশে রিকশা শুধু একটি পরিবহন মাধ্যম নয়; এটি একটি অর্থনৈতিক সহায়ক শক্তি, যা হাজার হাজার পরিবারকে জীবিকা নির্বাহে সহায়তা করে। কিন্তু ১২০০ ওয়াটের ডিসি মোটরের ওপর কাস্টমস শুল্ক ১% থেকে বাড়িয়ে ১৫% করার প্রস্তাবে শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২ জুন প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করতে গিয়ে বলেন, “ব্যাটারিচালিত রিকশার ১২০০ ওয়াটের ডিসি মোটরের কাস্টমস শুল্ক ১ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে।”
Table of Contents
এই ঘোষণার সাথে সাথেই ধারণা করা হচ্ছে যে, শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ব্যাটারিচালিত রিকশার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। এতে সাধারণ মানুষের চলাচলের খরচ যেমন বাড়বে, তেমনি রিকশাচালকদের আয়েও প্রভাব পড়তে পারে।
শুল্ক বৃদ্ধির সম্ভাব্য প্রভাব: চালক ও মালিকদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে
বাজারে বর্তমানে ব্যাটারিচালিত রিকশার দাম অনেকটাই নির্ভর করে মোটরের খরচের ওপর। নতুন শুল্ক হার কার্যকর হলে প্রতিটি রিকশার দাম গড়ে ৮-১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে নতুন রিকশা কেনা কঠিন হয়ে পড়বে অনেকের জন্য।
চালকরা বলছেন, এমনিতেই প্রতিদিনের আয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। নতুন রিকশার দাম বাড়লে তা ভাড়ায় চালানো বা মালিকদের কাছ থেকে নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়বে। এ বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রতিক প্রতিবেদন তুলে ধরেছে বাজার ও অর্থনীতির বিশ্লেষকরা।
রিকশার বাজারে ব্যাঘাত: ভোক্তা ও নির্মাতাদের দ্বৈত চাপ
নতুন শুল্ক বৃদ্ধির কারণে কেবল চালক বা মালিকরা নন, ব্যাটারিচালিত রিকশা নির্মাতারাও বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে নির্মিত রিকশার উপাদানের বেশিরভাগই চীন বা ভারতের ওপর নির্ভরশীল। এখন শুল্ক বাড়লে সেসব আমদানির খরচও বাড়বে। ফলে নির্মাণ খরচ বাড়ায় নতুন রিকশার চাহিদা কমে যেতে পারে, যা বাজারে ধস নামাতে পারে।
এই অবস্থায় অনেক নির্মাতা হয় উৎপাদন কমিয়ে ফেলবেন, নয়তো নিম্নমানের উপাদান দিয়ে বিকল্প খুঁজবেন। এর ফলে রাস্তায় চলাচলকারী রিকশার মানও কমে যেতে পারে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াবে।
বাজেট ঘাটতি ও সরকারী অবস্থান: প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ ধরা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩.৬২%। এই ঘাটতি পূরণে সরকার বৈদেশিক ঋণ, ব্যাংক ঋণ এবং সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করবে।
এই ঘাটতি মোকাবেলায় সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবেই এই শুল্ক বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে। অর্থাৎ, এটি শুধুই ব্যাটারিচালিত রিকশার ওপর চাপে ফেলা নয়, বরং সামগ্রিক রাজস্ব বৃদ্ধির কৌশলের একটি অংশ।
ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা: বিকল্প সমাধান খুঁজছে সংশ্লিষ্ট মহল
এই প্রেক্ষাপটে সরকার, নির্মাতা ও চালক সংগঠনগুলো এখন বিকল্প খুঁজতে শুরু করেছে। কোনোভাবে শুল্কের হার কমিয়ে বা রেয়াত দিয়ে খরচ নিয়ন্ত্রণে আনা যায় কি না, সে বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। একইসঙ্গে স্থানীয় উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানিনির্ভরতা কমানোর পরিকল্পনাও সামনে আসতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে নীতিনির্ধারকদের আলোচনায় উঠে আসছে প্রযুক্তি হালনাগাদ, স্থানীয় উদ্ভাবনের উৎসাহ এবং শহুরে পরিবহন ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের চিন্তা।
FAQ: রিকশা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
১. নতুন বাজেটে ব্যাটারিচালিত রিকশার ওপর শুল্ক কত বৃদ্ধি পেয়েছে?
প্রস্তাবিত বাজেটে ১২০০ ওয়াট ডিসি মোটরের কাস্টমস শুল্ক ১% থেকে বাড়িয়ে ১৫% করা হয়েছে।
২. এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে রিকশার দাম কতটা বাড়তে পারে?
প্রতিটি ব্যাটারিচালিত রিকশার দাম গড়ে ৮-১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৩. এই সিদ্ধান্ত চালকদের জীবিকায় কিভাবে প্রভাব ফেলবে?
বর্ধিত খরচের কারণে চালকদের আয় কমে যেতে পারে এবং রিকশা মালিকদের কাছ থেকে ভাড়ায় চালানো কঠিন হতে পারে।
৪. নির্মাতাদের জন্য এই শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব কী?
আমদানিনির্ভর উপাদানের খরচ বাড়ায় নির্মাতারা উৎপাদন কমাতে পারেন, যা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৫. সরকারের অবস্থান কী এই শুল্ক বৃদ্ধির পেছনে?
সরকার রাজস্ব আদায় বাড়াতে এবং বাজেট ঘাটতি পূরণে এই শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে।
৬. এর বিকল্প কী হতে পারে?
স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো, প্রযুক্তি হালনাগাদ এবং রেয়াতি নীতিমালার মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।