ব্লকচেইন হচ্ছে তথ্য সংরক্ষণ করার একটি নিরাপদ এবং সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে তথ্য বিভিন্ন ব্লকে একটির পর একটি চেইন আকারে সংরক্ষণ করা হয়। এটি একটি অপরিবর্তনযোগ্য ডিজিটাল লেনদেন যা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক লেনদেনের জন্যই প্রযোজ্য নয়।
এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেকোনো কার্য-পরিচালনা রেকর্ড করা যেতে পারে। এটা এমন একটি বন্টনযোগ্য ডাটাবেজ যাতে অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ডকুমেন্ট আকারে ভাগ করে দেওয়া যায়। প্রতিটি লেনদেন আবার সিস্টেমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা দ্বারা যাচাই করা হয়। একবার লেজারে কোনো তথ্য প্রবেশ করলে স্থায়ীভাবে তা থেকে যায় এবং কখনো মুছে ফেলা যায় না। ব্লকচেইন প্রতিটি একক লেনদেনের যাচাইযোগ্য রেকর্ড নিয়ে গঠিত হয়। এই অন্তর্নিহিত প্রযুক্তি নির্ভুলভাবে কাজ করে এবং বিভিন্ন কাজে এটির প্রয়োগ করা যেতে পারে।
বাংলাদেশে দুর্নীতি অনিয়ম অর্থ পাচার এবং আর্থিক লেনদেনের নানা সমস্যার সমাধানে ব্লক চেইন প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্ব রয়েছে। আর্থিক লেনদেনে আরো নিরাপত্তা জোরদার করা, ট্রানজেকশন জনিত সমস্যার সমাধান এবং সময় ও খরচ বাঁচানোর জন্য ব্লক চেইন প্রযুক্তি দরকার।
বাংলাদেশের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে ব্লক চেন এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং অর্থনৈতিক উন্নতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। তাছাড়া বাংলাদেশের নানা প্রশাসনিক কাজে এই প্রযুক্তি কাজে আসতে পারে। নাগরিকের তথ্য সুরক্ষিত রাখ ও নাগরিকদের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করা, গোপন তথ্য যাতে ফাঁস না হয় সে ব্যবস্থা করার জন্য ব্লক চেঞ্জ সিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই এখন স্মার্ট শহর এবং সুখী শহর হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে। ব্লকচেন প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার তাদেরকে আজকের জায়গায় নিয়ে এসেছে। দুবাই এখন পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। অফিসে কাগজ এবং দলিলের ব্যবহার কমছে ও ডিজিটাল সিস্টেমের ব্যবহার বেড়েছে। নাগরিকদের নিরাপত্তার জোরদার হয়েছে। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত বিপ্লব সাধিত হয়েছে। ব্লক চেইন প্রযুক্তি আরব আমিরাতের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।
ভারতে ব্লক চেইন প্রযুক্তি ব্যবহার হওয়া শুরু হয়েছে। ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশ সর্বপ্রথম এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এর আগে ই-গভর্মেন্ট পদ্ধতি চালু ছিল এবং এখনো চালু আছে। এতে করে ২০০ কোটিরও বেশি মার্কিন ডলারের বাজার সৃষ্টি হচ্ছে এবং অনেক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। ভারতে ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কিত কাজকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এতে করে অনেক অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে।
২০২০ সালের জুন মাস থেকেই চীন সারাদেশে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছিল। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জি পিং নিজেই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখেছেন। যখন প্রাণঘাতিক করোনা ভাইরাস এর কারণে চীনে সমস্যা তৈরি হয়েছে তখন ব্লকচেইন কৌশল বেশ কাজে দিচ্ছে। চীনের আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা আমেরিকান ডলারের প্রভাবকে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারবে বলে আশা করছে।
বিশ্বের সেরা দশটি ব্লক চেইন কোম্পানির নামঃ
- সাইন্স সফ্ট
- রিপন ল্যাব
- লিইউ হার্ট
- ব্লক চেঞ্জার
- টেক রেসার
- ক্রমা ওয়ে
- ওপেন লেজার
- ইজট্রাক
- লাইন চেইন
- চেইন
- ইন্টালেক্ট সফট
আপনি জেনে অবাক হবেন যে বিশ্বের সেরা দশটি ব্লকচেইন কোম্পানির মধ্যে ছয়টিই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। এর মানে হলো যুক্তরাষ্ট্রে ব্লক চেইন প্রযুক্তি নিয়ে অনেক কাজ হচ্ছে। আমেরিকায় বর্তমানে সফটওয়্যার এবং আইটি সম্পর্কিত নানা সমস্যার সমাধানে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
নেটওয়ার্ক, অ্যাপ, কারেন্সি, স্মার্ট কন্ট্রাক্ট, ই-ওয়ালেট ইত্যাদি প্লাটফর্মে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়ে আসতেছে। তাছাড়া কোন আমেরিকার নাগরিক যদি আমেরিকার বাহিরের কোম্পানিকে পেমেন্ট করতে চায় সেটা যেন নিরাপত্তা বলের মধ্যে থাকে সেজন্য ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাঙ্কিং এবং আর্থিক সেবা কে আরো আধুনিকায়ন করেছে এই প্রযুক্তি। থার্ড পার্টির সহায়তা ব্যতীত সরাসরি ট্রানজেকশনের ক্ষেত্রে এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই সিস্টেম খুবই কাজে আসছে।
বাংলাদেশকে পুরোপুরি Digital Nation এ পরিণত করতে হলে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে গুরুত্ব দিতে হবে। নতুন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে হবে। কেননা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অন্য জাতি এগিয়ে যাবে আর আমরা পিছিয়ে পড়লে ভবিষ্যৎ এ বাংলাদেশ খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে না।
ব্লকচেইনের কিছু নেতিচাবক দিকও আছে। Transaction History, যিনি ট্রান্সজেকশন করবেন তার পূর্ব ইতিহাস, ভেরিফিকেশন প্রসেস ইত্যাদি বিষয়ে ব্লকচেইন প্রযুক্তি নির্ভুল ও নিখুঁতভাবে কাজ করতে পারবে কিনা বিষয়টি নিশ্চিত করা কঠিন হবে। করপোরেট সেক্টরে এটি নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠতে আরো সময় লাগবে।
ব্লকচেইন নেটওয়ার্কে যত বেশি লোক বা নোড যুক্ত হবে, গতি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। এর সমাধান হল ব্লকচেইনের বাইরে লেনদেন করা এবং শুধুমাত্র তথ্য সংরক্ষণ ও অ্যাক্সেস করতে ব্লকচেইন ব্যবহার করা। ব্লকচেইন সিস্টেমের মধ্যে জমা হওয়া তথ্য মুছে ফেলা প্রায় অসম্ভব। আপনি যদি এমন সাইটে গোপন তথ্য প্রবেশ করান যেটা ব্লকচেইন সিস্টেম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তাহলে সে তথ্য সার্ভারে জমা হয়ে যাবে। যদিও পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষের গোপণীয়তা রক্ষার অধিকার রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।