একের পর এক নতুন আবিষ্কারের ধারা অব্যাহত রেখেছে নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। সম্প্রতি অদ্ভুত এক ছায়াপথ গুচ্ছের খোঁজ দিয়েছে এটি, যা ব্ল্যাক হোল তৈরির রহস্য উন্মোচনে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করেছে বলে দাবি তাদের।
বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘ইনফিনিটি গ্যালাক্সি’। তারা বলছেন, পদার্থবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ এক তত্ত্বকে সমর্থন করেছে এটি, যে তত্ত্বে বলা হয়েছে, কিভাবে কিছু সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল তৈরি হয়।
‘ইনফিনিটি গ্যালাক্সি’ নামটি শুনলে মনে হতে পারে কমিকের এক পাগল দানব ‘থ্যানোস’-এর মতো কোনো চরিত্রের আড্ডা দেওয়ার জায়গা এটি। তবে বিজ্ঞানীরা নামটি আসলে কেবল ছায়াপথের চেহারার ওপর নির্ভর করেই দিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট এনগ্যাজেট।
এতে দুটি ছোট ও লাল কেন্দ্র রয়েছে, যেগুলোর আশপাশে রয়েছে রিং বা বৃত্ত। এ গঠন একসঙ্গে দেখতে অনেকটা ‘∞’ অক্ষরের মতো, যা অনন্তের প্রতীক। তাই এমন নাম এ ছায়াপথের।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর ভেতরের বিষয়টি আরও চমকপ্রদ। এর ছবিটি ওয়েব টেলিস্কোপের অন্যান্য চোখ ধাঁধানো ছবির চেয়ে অনেক কম রেজুলিউশনের। ইনফিনিটি গ্যালাক্সি তৈরি হয়েছে দুটি সর্পিল ছায়াপথের সংঘর্ষের ফলে, যার কেন্দ্রের মাঝখানে রয়েছে তরুণ এক সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল, যা বিশাল এক গ্যাসের মেঘে ঘেরা।
বিভিন্ন সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের আকার আমাদের সূর্যের চেয়ে লাখ, এমনকি কোটি বা শত কোটি গুণ বড় হতে পারে। এই নির্দিষ্ট ব্ল্যাক হোলটির আকার প্রায় আমাদের সূর্যের ১০ লাখ গুণ বড়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ব্ল্যাক হোল তৈরির ‘ডাইরেক্ট কলাপ্স থিয়োরি’ বা সরাসরি পতন তত্ত্বকে জোরালোভাবে সমর্থন করেছে ‘ইনফিনিটি গ্যালাক্সি’। বেশিরভাগ ব্ল্যাক হোল তৈরি হয় বিশালাকার বিভিন্ন তারা ভেঙে পড়লে। তবে বিভিন্ন সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল কীভাবে তৈরি হয় সে বিষয়টি বোঝা অনেক কঠিন।
তত্ত্বটিতে বলা হয়েছে, ছোট আকারের বিভিন্ন ব্ল্যাক হোল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একত্র হয়ে বড় এক সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল তৈরি করে। তবে সমস্যা হচ্ছে, কিছু সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল বিগ ব্যাংয়ের পর খুবই দ্রুত গঠিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, গ্যাসের বিশাল মেঘ সরাসরি ভেঙে পড়ার মাধ্যমে তৈরি হয়েছে কিছু সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল, ঠিক যেমনটি ‘ইনফিনিটি গ্যালাক্সি’তে দেখা যাচ্ছে। সরাসরি পতন তত্ত্বের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ হতে পারে ‘ইনফিনিটি গ্যালাক্সি’।
গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক পিটার ভ্যান ডোকুম বলেছেন, “ইনফিনিটি গ্যালাক্সি থেকে প্রাপ্ত তথ্য দেখে আমাদের অনুমান, এখানে কিভাবে সরাসরি পতন তত্ত্ব কাজ করতে পারে তার এক গল্প খুঁজে পেয়েছি আমরা।
“দুটি ডিস্ক আকৃতির ছায়াপথ সংঘর্ষে মিলিত হয়। যার ফলে আমরা তারার যেসব বৃত্তাকার বা বলয় গঠন দেখছি সেটি তৈরি হয়। সংঘর্ষের সময়, এই দুই ছায়াপথের মধ্যে থাকা গ্যাস একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে সংকুচিত হয়। এই সংকোচন এতটাই ঘন হতে পারে যে, সেটি ঘন এক গাঁটের মতো বস্তু তৈরি করে, যা পরে ভেঙে পড়ে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়।”
বর্তমান প্রাপ্ত তথ্য থেকে পতন তত্ত্বটি পুরোপুরি নিশ্চিত করতে না পারলেও গবেষক ডোকুম বলেছেন, “আমরা এইটুকু বলতে পারি, এসব নতুন তথ্য আমাদের ধারণাকে শক্তিশালী করছে যে, আমরা সদ্যজাত এক ব্ল্যাক হোল দেখতে পাচ্ছি। একইসঙ্গে কিছু বিকল্প ব্যাখ্যাও বাদ দিয়ে দিয়েছে এটি।
“এসব তথ্য আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে এর বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে যাব আমরা।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।