ব্ল্যাক হোল কীভাবে কাজ করে? বিজ্ঞান যা বলছে আজ পর্যন্ত

বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : বিজ্ঞান সব সময়ই মানুষকে মুগ্ধ করেছে তার রহস্যময় ও চমকপ্রদ আবিষ্কারের মাধ্যমে। কিন্তু কিছু কিছু মহাজাগতিক উপাদান রয়েছে যেগুলোর আচরণ এখনও মানববুদ্ধিকে বিস্মিত করে তোলে। ব্ল্যাক হোল এমনই এক মহাজাগতিক অবজেক্ট যা দীর্ঘদিন ধরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয় হয়ে উঠেছে। অনেকে এটি নিয়ে কল্পনাও করেছেন, চলচ্চিত্র বানিয়েছেন, তবে এর পেছনের বিজ্ঞান আজও সকলের জন্য সমানভাবে রহস্যময়। ব্ল্যাক হোল কীভাবে কাজ করে—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আজকের আলোচনা।

ব্ল্যাক হোল কী: রহস্যের গভীরে

ব্ল্যাক হোল কী প্রশ্নটির উত্তর দিতে গেলে আগে জানতে হবে এটি কীভাবে গঠিত হয়। সাধারণভাবে, একটি ব্ল্যাক হোল গঠিত হয় তখন যখন একটি বড় তারা তার জীবনচক্রের শেষ পর্যায়ে এসে ভেঙে পড়ে নিজের মধ্যেই। এই প্রক্রিয়ায় তার কেন্দ্রে ঘটে একটি gravitational collapse। এই পতনের ফলে তারার সকল ভর কেন্দ্রীভূত হয় একটি ছোট অঞ্চলে, যার আকর্ষণ এতটাই প্রবল যে আলো পর্যন্ত সেখান থেকে বের হতে পারে না। এই অঞ্চলকেই বলা হয় ব্ল্যাক হোল।

ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রীয় অংশকে বলা হয় singularity, যেখানে ঘনত্ব অসীম এবং পদার্থবিজ্ঞান অনুযায়ী নিয়ম হারায় কার্যকারিতা। এই singularity কে ঘিরে থাকা একটি অঞ্চলকে বলা হয় event horizon, এটি হল সেই সীমা যার মধ্যে কোনো কিছু একবার প্রবেশ করলে তা আর কখনো বেরিয়ে আসতে পারে না। এই অদৃশ্য সীমাই ব্ল্যাক হোলকে এত রহস্যময় করে তোলে।

ব্ল্যাক হোল কীভাবে কাজ করে?

ব্ল্যাক হোল কীভাবে কাজ করে তা বোঝার জন্য আমাদের কিছু মূল বৈজ্ঞানিক ধারণা পরিষ্কার করতে হবে। ব্ল্যাক হোল মূলত কাজ করে general relativity তত্ত্ব অনুযায়ী, যা NASA সহ বিভিন্ন গবেষণায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

১. Gravitational pull: ব্ল্যাক হোলের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর বিশাল মহাকর্ষ বল। এটি এতটাই শক্তিশালী যে সময় ও স্থান পর্যন্ত বাঁকিয়ে দেয়। এই কারণেই আলোর কণাও এর কবল থেকে মুক্তি পায় না।

২. Time dilation: ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি গেলে সময়ের গতি ধীরে হতে থাকে, যার ফলে বাইরের জগত থেকে দেখা যায় কোনো বস্তুর গতি ধীরে হচ্ছে। এটি Einstein’s Theory of Relativity দ্বারা প্রমাণিত।

৩. Accretion disk: ব্ল্যাক হোলের চারপাশে একপ্রকার ডিস্ক তৈরি হয় যা accretion disk নামে পরিচিত। এটি গঠিত হয় চারপাশের গ্যাস, ধূলিকণা ও অন্যান্য বস্তু ব্ল্যাক হোলের অভ্যন্তরে যাওয়ার পথে ঘূর্ণায়মান অবস্থায় থেকে। এই ডিস্ক থেকে প্রচুর তাপ ও বিকিরণ নির্গত হয়।

৪. Hawking radiation: বিখ্যাত পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং দেখিয়েছেন যে ব্ল্যাক হোল থেকেও নির্দিষ্ট বিকিরণ নির্গত হতে পারে, যাকে বলা হয় Hawking radiation। এটি একটি কোয়ান্টাম স্তরের ঘটনা যা ব্ল্যাক হোলের ধীরে ধীরে বিলীন হওয়ার দিকে নির্দেশ করে।

ব্ল্যাক হোল ও আমাদের মহাবিশ্বে এর প্রভাব

জ্যোতির্বিজ্ঞানে ব্ল্যাক হোলের গুরুত্ব

ব্ল্যাক হোল আজ শুধু এক রহস্যময় বস্তু নয়, বরং এটি মহাবিশ্বের গঠন ও বিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থিত supermassive black hole যেমন Sagittarius A*, তা প্রমাণ করে ব্ল্যাক হোল শুধু ধ্বংস নয় বরং গঠন প্রক্রিয়ার অংশ।

প্রযুক্তিতে ব্ল্যাক হোল গবেষণার প্রভাব

আজকের বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাক হোল নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে শুধু মহাবিশ্ব নয় বরং quantum mechanics এবং theory of everything এর মতো তত্ত্ব গঠনে এগিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি ব্ল্যাক হোলের তথ্য এনক্রিপশন, ডেটা স্টোরেজ এবং ব্ল্যাক হোল-ভিত্তিক time travel এর কল্পনা বিজ্ঞান কল্পকাহিনির গণ্ডি ছাড়িয়ে গবেষণার টেবিলে এসেছে।

ব্ল্যাক হোল নিয়ে সাম্প্রতিক আবিষ্কার ও গবেষণা

২০২০ সালে ESO (European Southern Observatory) ঘোষণা করে, তারা একটি পৃথিবীর কাছাকাছি ব্ল্যাক হোল আবিষ্কার করেছে যা HR 6819 নামে পরিচিত। এছাড়াও, ২০১৯ সালে Event Horizon Telescope ইতিহাসের প্রথম ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলে, যা ছিল M87 গ্যালাক্সির কেন্দ্রে। এই ছবি প্রমাণ করে ব্ল্যাক হোল বাস্তব এবং তা পরিমাপযোগ্য।

James Webb Space Telescope ও ভবিষ্যৎ গবেষণা

নাসার নতুন টেলিস্কোপ James Webb এখন মহাকাশে থাকা ব্ল্যাক হোলের চেয়েও দূরবর্তী বস্তু পর্যবেক্ষণে সক্ষম, যার ফলে আমরা ব্ল্যাক হোল কিভাবে গঠিত হয় তা আরও স্পষ্টভাবে জানতে পারছি।

ব্ল্যাক হোল কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে তা আজও সম্পূর্ণভাবে জানা সম্ভব হয়নি। কিন্তু বিজ্ঞান প্রতিদিন নতুন কিছু তথ্য নিয়ে আসছে যা আমাদের ভবিষ্যতের গবেষণাকে সমৃদ্ধ করছে। এই বিস্ময়কর মহাজাগতিক বস্তু সম্পর্কে আমাদের জানার আগ্রহ কখনো কমবে না।

নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে প্রতিদিন এই একটি কাজ করুন

জেনে রাখুন-

• ব্ল্যাক হোল কীভাবে কাজ করে? ব্ল্যাক হোল gravitational pull, time dilation, accretion disk ও Hawking radiation এর মাধ্যমে কাজ করে।
• ব্ল্যাক হোল কিভাবে গঠিত হয়? বড় তারার মৃত্যুতে gravitational collapse এর ফলে ব্ল্যাক হোল গঠিত হয়।
• Event horizon কী? এটি সেই সীমা যেখান থেকে কোনো বস্তু বা আলো ব্ল্যাক হোল থেকে আর ফিরে আসতে পারে না।
• Hawking radiation কী? এটি একটি কোয়ান্টাম স্তরের বিকিরণ যা ব্ল্যাক হোল থেকে নির্গত হয় এবং এটি ব্ল্যাক হোল ধীরে ধীরে ক্ষয় করে।
• ব্ল্যাক হোলের ছবি কি সত্যি? হ্যাঁ, Event Horizon Telescope দ্বারা তোলা M87 ব্ল্যাক হোলের ছবি তা প্রমাণ করেছে।