ভবিষ্যদ্বাণী: নেপচুনে হীরার বৃষ্টি হতে পারে

নেপচুনে হীরার বৃষ্টি

এখন পর্যন্ত পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ, যেখানে প্রাণের সন্ধান মিলেছে। সৌরজগতের অন্য গ্রহগুলো সম্পর্কে আমরা যতটা জানি, তাতে বোঝা যায়, সেগুলোতে প্রাণের অস্তিত্ব নেই। যদিও এ নিয়ে এখনো গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। তাই শেষ কথা বলে দেওয়ার উপায় নেই।

নেপচুনে হীরার বৃষ্টি

প্রাণ থাকুক না থাকুক, প্রতিটি গ্রহই অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। এই যেমন, শনির আছে সবচেয়ে পুরু বলয়। সাধারণ টেলিস্কোপ দিয়েই দেখা যায় পৃথিবী থেকে। মঙ্গল আবার আগাগোড়া লালচে ধুলোয় ঢাকা। বৃহস্পতি আকারে সবার চেয়ে বড়। প্রায় ১৩শ পৃথিবী জোড়া লাগালে, সেটার আকার হবে এই গ্রহের সমান। এমনি ভাবে সব গ্রহের ব্যাপারেই চমকপ্রদ নানারকম তথ্য জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। সাদামাটা নেপচুনও ব্যাতিক্রম নয়। এই গ্যাসদানবের আকাশ ভেঙে নামে হীরাবৃষ্টি! হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, হীরার বৃষ্টি ঝরে এই গ্রহে।

সৌরজগতের একদম প্রান্তে এর অবস্থান। সূর্যের সবচেয়ে দূরের সন্তান। পৃথিবী থেকে যে দুটি গ্রহকে খালি চোখে দেখা যায় না, তার একটা এই নেপচুন। অন্যটি ইউরেনাস। অনেক দূরে হওয়ায় নেপচুন নিয়ে গবেষণা করাটা একটু কঠিন। তা ছাড়া এটা একমাত্র গ্রহ, দেখা পাওয়ার আগেই বিজ্ঞানীরা গাণিতিক হিসেব-নিকেশ করে যার অস্তিত্ব বের করেছিলেন।

মাত্র চার দশক আগে ১৯৮১ সালে মার্কিন পদার্থবিদ মারভিন রস ভবিষ্যদ্বাণী করেন, নেপচুনে হীরার বৃষ্টি হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, এ বিজ্ঞানীর মতে, নেপচুনের মতো আরেক গ্যাস দানো ইউরেনাসের আকাশ থেকেও নামতে পারে হীরার বৃষ্টি। তাঁর সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয় ২০২০ সালে। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রমাণ করেন, সত্যিই হীরার বৃষ্টি নামে এই দুই গ্রহের বুকে।

পরীক্ষাটি করার জন্য স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তাঁদের গবেষণাগারেই তৈরি করেন নেপচুনের বায়ুমণ্ডলের মতো পরিবেশ। এজন্য প্রথমে তাঁরা তরল হাইড্রোকার্বন পলিস্টাইরিনকে উত্তপ্ত করেন প্রচণ্ডভাবে। সেই সঙ্গে প্রয়োগ করেন প্রচণ্ড চাপ। এরপর লেজার ব্যবহার করে তার মধ্য দিয়ে পাঠান শকওয়েভ।

এক্স-রে ব্যবহারের মাধ্যমে তাঁরা দেখেন, পলিস্টাইরিন যৌগটি ভেঙে যাচ্ছে। অর্থাৎ যৌগটি ভেঙে বেরিয়ে আসছে তার গাঠনিক উপাদান মৌলগুলো। তৈরি করছে কার্বন এবং হাইড্রোজেন পরমাণু। প্রচণ্ড চাপের কারণে কার্বন পরমাণুগুলো একত্রিত হয়ে তাঁদের চোখের সামনে পরিণত হচ্ছে হীরার কণায়!

প্রমাণ পেয়ে গেলেন বিজ্ঞানীরা। নেপচুনে যেহেতু একই পরিবেশ, তাই সেখানে এ ঘটনা ঘটছে হর হামেশাই। আমাদের গ্রহে যেমন তাপ ও চাপের কারণে পানি বাষ্প হয়ে আকাশে গিয়ে মেঘে পরিণত হয়, তারপর ঝরে পড়ে বৃষ্টি হয়ে। নেপচুনেও একই ঘটনা ঘটে। পার্থক্য শুধু নেপচুনের পরিবেশ ও গঠন। গঠনের কারণেই আমাদের মতো তরল পানির সমুদ্র বা মহাসমুদ্র নেই সেখানে। আছে তরল হাইড্রোকার্বন পলিস্টাইরিনের সাগর। এর সঙ্গে পর্যাপ্ত তাপ ও চাপ যুক্ত হয়ে কার্বন থেকে তৈরি হয় হীরা।

একবার চিন্তা করে দেখুন তো, এরকম হীরার বৃষ্টি পৃথিবীতে হলে কী অবস্থা হতো? সম্পদ হিসেবে হীরার কথা চিন্তা করতে বলছি না। কারণ, হীরার বৃষ্টি হলে সেটা এখনকার মতো মূল্যবান আর হতো না। চিন্তা করুন, প্রকৃতির সবচেয়ে ভারী পদার্থ হীরার কথা। যা দিয়ে কাচকে কেটে ফেলা যায় নিমিষে। এবার নিশ্চয়ই হীরার বৃষ্টির ব্যাপারটি আর ভালো লাগার কথা নয়। (বুঝতেই পারছেন, মহাবিশ্বের সবচেয়ে ভারী বস্তু আপনার মাথায় ঝরে পড়ছে, বিষয়টা খুব সুখকর নয়।)

১৮৪৬ সালে আবিষ্কৃত হয় নেপচুন। আগে যেমন বলেছি, উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে গ্রহটি সম্পর্কে ইতিমধ্যে অনেককিছু জেনেছি আমরা। তবে জানা বাকি এখনও আরও অনেক কিছু। নেপচুন সূর্যের চারপাশে ৬০ হাজার ১৯০ দিনে একবার ঘুরে আসে। তবে দিনের দৈর্ঘ্য পৃথিবীর চেয়ে কম। মাত্র ১৬ ঘন্টা।

আর সূর্য থেকে গ্রহটির দূরত্ব প্রায় ২৮ হাজার কোটি মাইল। মানুষের তৈরি নভোযান হিসেবে এখন পর্যন্ত শুধু ভয়েজার ২ নেপচুনের কাছে দিয়ে উড়ে গেছে। সৌরজগতের প্রান্তের এই গ্রহটি কিন্তু একেবারে নিঃসঙ্গ নয়। সঙ্গী হিসেবে আছে পাঁচটি রিং ও ১৪টি চাঁদ। তবে চরম আবহাওয়ার কারণে এতে প্রাণের বিকাশ হওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।

নেপচুনের হীরার বৃষ্টি যদি উপভোগ করতে চান, দেখতে চান স্বচক্ষে—আমাদের এখনকার প্রযুক্তিতে হয়তো এমন কিছু চিন্তা করা দুরাশা। তবে এই সম্ভাবনাকে ‘অসম্ভব’ বলে উড়িয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। ভবিষ্যতে হয়তো এমন কোনো প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হবে, যার সাহায্যে নিমিষেই মানুষ যেতে পারবে নেপচুনে। এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে পারেন আপনিও! কে জানে?