জুমবাংলা ডেস্ক: শক্তি বাড়িয়ে আরও ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের আকার ধারণ করেছে ‘বুলবুল’। শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানতে পারে। এরই মধ্যে ওইসব এলাকায় থাকা ১ হাজার ৩৭৭টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানার সময় ঝড়ের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১১০-১২০ কিমি। তা বেড়ে ঘণ্টায় ১৩৫ কিমিও হতে পারে। এরপর বুলবুল পাড়ি দেবে বাংলাদেশে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পাঠানো সর্বশেষ বুলেটিনে দেশের মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেতের পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে ৬ নম্বর দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৫৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিলো। এটি আরো ঘনিভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার, যা ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
পূর্বাভাস বলছে, শনিবার সন্ধ্যার পর সাতক্ষীরা-খুলনা অঞ্চলে আঘাত করতে পারে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। এতে কম-বেশি ঝড়ের কবলে পড়বে বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুরসহ উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা। আশঙ্কা আছে ৫-৭ ফুট জলোচ্ছ্বাসেরও।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, উপকূলের ১৩ জেলায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি।
জেলায় জেলায় সভা করে দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন
খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দ্দার বলেন, বিকাল ৪টায় খুলনা সার্কিট হাউজে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাব মোকাবিলা ও সকল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে খুলনা জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা আহ্বান করে জেলা প্রশাসন।
ইতিমধ্যে সরকারি-বেসরকারি ৩৩৮টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলীয় দাকোপ ও কয়রা উপজেলায় সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন, বলেন তিনি।
ভোলার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিকী এক জরুরি সভায় জানান, জেলায় ৬৬৮টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, আটটি কন্ট্রোল রুম, ৪৯ মুজিব কেল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেই সাথে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ৯২টি মেডিকেল দল, ১৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত আছেন।
পর্যাপ্ত শুকনা খাবার মজুদ রাখার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কাজ করার জন্য জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা সংবাদদাতার পাঠানো খবর অনুযায়ী, জেলা প্রশাসক মো. বদিউজ্জামান বলেন, এ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ১৩৭টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে এবং স্বেচ্ছাসেবীরা শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালীগঞ্জ উপজেলার মানুষকে নিরাপদ অঞ্চলে আশ্রয় নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ বলেন, নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে জেলা প্রশাসন সুন্দরবনের দুবলার চরের ঐতিহ্যবাহী ‘রাশ মেলা’ উৎসব স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৯টি উপজেলা ও জেলা সদরে ১০টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে এবং ২৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে যেখানে উপকূলীয় অঞ্চলের ২.২৬ লাখ লোক আশ্রয় নিতে পারবেন, জানিয়েছেন ইউএনবি বাগেরহাট সংবাদদাতা।
যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় মেডিকেল দল, ফায়ার ব্রিগেড, রেড ক্রিসেন্ট সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবীরা প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।