২০১৮ সালে মানুষের তৈরি দ্বিতীয় বস্তু হিসেবে আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশে পাড়ি জমায় ভয়েজার ২। এর প্রায় ৬ বছর আগে সৌরজগতের সীমানা ছাড়িয়ে যায় ভয়েজার ১। বর্তমানে ভয়েজার ১ পৃথিবী থেকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি কিলোমিটার (২৪ বিলিয়ন) দূরে আছে। আর ভয়েজার ২ আছে প্রায় ২ হাজার কোটি কিলোমিটার (২০ বিলিয়ন) দূরে। গত বছর নভেম্বর থেকে ভয়েজার ১-এর সঙ্গে আর অর্থপূর্ণ যোগাযোগ করা যাচ্ছে না পৃথিবী থেকে। তবে পৃথিবীর সঙ্গে এখনও যোগাযোগ অটুট আছে ভয়েজার ২-এর।
ভয়েজার ২-সহ অন্যান্য নভোযানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা ব্যবহার করে ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক বা ডিএসএন। এটা মূলত পৃথিবীজুড়ে স্থাপিত ৩টি রেডিও অবজারভেটরি বা বেতার মানমন্দির।
পৃথিবীর সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে শুধু দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে ভয়েজার ২-এর সাড়া পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়ায় স্থাপিত ডিএসএস-৪৩ নামের অ্যান্টেনা থেকে শুধু ভয়েজারে সিগন্যাল পাঠানো যায় ও রিসিভ করা হয়।
প্রায় ২ হাজার কোটি কিলোমিটার দূর থেকে সিগন্যাল পাঠাতে ভয়েজার ২-তে ব্যবহার করা হয় ২৩ ওয়াটের ট্রান্সমিটার। বলা প্রয়োজন, আমাদের মোবাইল ফোনের তুলনায় এই ট্রান্সমিটারের ক্ষমতা মাত্র ৮ গুণ বেশি।
যাই হোক, ভয়েজারের পাঠানো বেতার সংকেত খুবই দুর্বল অবস্থায় ধরা পড়ে পৃথিবীর অ্যান্টেনায়। কত দুর্বল? মূল সিগন্যালের বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ভাগের দশ ভাগের এক ভাগ।
দুর্বল এই সিগন্যাল শনাক্ত করার জন্য ডিএসএস-৪৩ এবং ভয়েজারের ট্রান্সমিটারকে একই দিকে থাকতে হয়। ব্যবহার করতে হয় ন্যারো ব্যান্ডের উচ্চ কম্পাংকের সিগন্যাল। এই সিগন্যাস খুবই ধীর হারে সঞ্চালিত হয়। ভয়েজারের তরঙ্গ শনাক্তের পর জটিল সিগন্যাল প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয় মূল বার্তা।
অনেক প্রতিবন্ধকতার পরও এত বিশাল দূরত্ব পাড়ি দেওয়া বেতার সংকেত ধরতে পারার অর্থ, ডিএসএস-৪৩-এর জন্য দূরত্ব কোনো বাধা নয়। অন্যদিকে ভয়েজার থেকে কোনো সংকেত রিসিভ করতে যে শক্তি ব্যয় হয়, তারচেয়ে বহু গুণ বেশি শক্তি লাগে পাঠাতে। প্রায় ৪০ হাজার ওয়াট ব্যয় করে দূরের এসব মহাকাশযানে শক্তি পাঠানো হয়। বেশি শক্তি ব্যয় করে পাঠানোর কারণে খুব সহজেই তা শনাক্ত করতে পারে মহাকাশযানগুলো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।