মুন্না রায়হান : দিন দিন বেড়েই চলছে অতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজের দাম। কিন্তু সেই পেঁয়াজের দাম যখন নাগালের বাইরে চলে যায়, তখন বিপাকে পড়েন ভোক্তারা। বিশেষ করে যখন পেঁয়াজের মৌসুমে অতি নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম দফায় দফায় বাড়তে থাকে, তখন তা ভোক্তাদের জন্য বেশি কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি নতুন দেশি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। পেঁয়াজের এই ভরা মৌসুমে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম এত বেশি কেন? এই প্রশ্ন ভোক্তাদের।
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা পণ্যটির অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারক দেশ ভারতের রপ্তানি কমাতে গত বছরের ২৮ অক্টোবর দেশটির প্রতি টন পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য ৮০০ ডলার বেঁধে দেওয়া ও পরে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়াকে দায়ী করেছেন। যদিও দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় সম্প্রতি ভারত, বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির কথা জানিয়েছে। এছাড়া, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির জন্য ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কথাও বলেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এটা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির জন্য অজুহাত ছাড়া আর কিছুই না। কারণ, দেশের বাজারে ডিসেম্বরের শেষ দিকেই মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠেছে। এক শ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার জন্য বাজারে বেশি দামে এসব পেঁয়াজ বিক্রি করছেন।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ডিসেম্বরে শুরু হওয়া আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজের এবার ভালো আবাদ হয়েছে। উত্পাদন হয়েছে ১০ লাখ টনের বেশি। বর্তমানে বাজারেও এই পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো। এছাড়া, দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রধান মৌসুম আগামী মার্চ-এপ্রিলে শুরু হবে। তাই এখন পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। দেশে বিভিন্ন কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ, খুচরা পর্যায়ে ও পাইকারিতে যৌক্তিক মূল্য কত হওয়া উচিত, তা নির্ধারণ করে কৃষি বিপনন অধিদপ্তর। সরকারের এই সংস্থাটির তথ্য বলছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ হয়েছে ৩৪ টাকা। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের যৌক্তিক মূল্য হওয়া উচিত সর্বোচ্চ ৭০ টাকা ২৮ পয়সা। কিন্তু পাইকারিতেই তা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে ১০৮ টাকা।
সরকারের আরেক সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের খুচরা বাজারদর নিয়ে প্রতিদিন প্রতিবেদন তৈরি করে। সংস্থাটির তথ্য বলছে, গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি নতুন দেশি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু গত বছর এই সময় দেশের বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ২৫ থেকে ৩৫ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে তা যথাক্রমে প্রতি কেজিতে ৮৫ টাকা ও ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেশি।
পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত বছর ১৩ সেপ্টম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের খুচরা বাজারদর ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু তা কার্যকর করা যায়নি। দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ধারাবাহিকভাবে পেঁয়াজের আবাদ বাড়ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ থেকে ২৭ লাখ টন। এই চাহিদার ৮৫ শতাংশই দেশে উৎপাদিত হয়। বাকিটা ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হয়। তবে ভারত থেকেই বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। সূত্র : ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।