জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্নাতকের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার (৬ নভেম্বর) ক্যাস্পাসে মডিউল-এ ও মডিউল-বি দুই শিফটে এই ভর্তি অনুষ্ঠিত হয়। মডিউল-এ সকাল ১০টা হতে ১২টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টা এবং মডিউল-বি বিকাল ২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গণপরিবহন বন্ধের দ্বিতীয় দিনে আজ গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়ছেন ভর্তিচ্ছু ও তাদের অবিভাবকরা। বিশেষ করে যারা দূর-দূরান্তের জেলা থেকে এসেছেন। তেমনি একজন ভর্তিচ্ছুর অভিভাবক আইনুল হক। পরিবহন ধর্মঘট, কিন্তু তার ছেলের বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা দিতে। তাই দুইশো কিলোমিটার মোটরবাইক চালিয়েই বগুড়া থেকে ছেলেকে নিয়ে বুয়েটে চলে এলেন তিনি।
আইনুল হকের ছেলে আশিক ইকবাল এবার বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। তার ইচ্ছা প্রকৌশল নিয়ে পড়ালেখা করার। বাইকে এতো দূর পথ পাড়ি দিয়ে আসা আইনুল বলেন, এতদূর থেকে বাইকে আসা রিস্কি ছিল। তবে না এসে উপায় ছিল না, পরীক্ষা তো দেওয়া লাগবে।
তিনি জানান, শুক্রবার ঢাকায় রওনা হতে দুদিন আগেই শাহ ফতেহ আলী বাসের টিকেট কেটে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু ধর্মঘটের খবর শুনে বাস কাউন্টারে ফোন করে দেখি নম্বর বন্ধ, কাউন্টারে গিয়ে দেখি তালা। পরে শুক্রবার সকালে বাইকে করেই দুজন রওনা দিই। রাতে ঢাকায় একটি হোটেলে ছিলাম।
তিনি আরও বলেন, ছেলের স্বপ্ন পূরণ হলে এই কষ্ট আমার কাছে কিছুই না। আইনুল হকের মতো অনেক অভিভাবকই পদে পদে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।
নাটোরের বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে পাস করা ছেলে আশীক আলীকে বুয়েটের পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠিয়ে কয়েকটি ব্যাগ নিয়ে রাস্তায় অপেক্ষা করছিলেন মা আরিফা বেগম। তিনি বলেন, নাটোর থেকে ট্রেনে করে এসেছি। বাস না চলায় ব্যাগ-বোচকা নিয়ে আসাটা কষ্টের ছিল।
শনিবার বুয়েটের পরীক্ষায় অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শুক্রবার ঢাকায় আসার টিকেট কেটে রাখলে ধর্মঘটের খবর শুনে বৃহস্পতিবারই ঢাকায় আসতে হয়েছে অনেকের।
সাতক্ষীরা থেকে দুদিন আগেই মেয়ে মুনজেরিনকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন মাজেদুল হক। তিনি বলেন, অনেক স্ট্রাগল করে প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষা দিয়ে মূল পর্বে ৬ হাজারের মধ্যে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে আমার মেয়ে। এটা যদি মিস হত, তাহলে তার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে যেত।
ছেলে অনির্বাণ রায়কে নিয়ে ঝিনাইদহের শৈলকূপা থেকে পরীক্ষা দিতে বৃহস্পতিবারই ঢাকায় চলে আসেন অশোক রায়। তিনি বলেন, অনেক ভোগান্তি সহ্য করে কয়েকবার গাড়ি পরিবর্তন করে ভেঙে ভেঙে ঢাকায় এসেছি। এখন কীভাবে বাড়ি ফিরব সেই চিন্তায় আছি।
ঢাকায় এসেও ভোগান্তিতে পড়েছেন পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। অনেকে আত্মীয়-স্বজনের বাসায়, কেউ হোটেলে থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে হয়েছে সিএনজি, বাইক কিংবা রিকশায়।
চট্টাগ্রাম থেকে মেয়ে তাশফিয়া তাবাসসুমকে নিয়ে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার জন্য আসেন তার বাবা রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে মেয়েকে নিয়ে ঢাকা আসার টিকেট কেটেছিলাম। একদিন আগে অনলাইন মিডিয়ায় জানতে পারলাম, কাল থেকে গণপরিবহন ধর্মঘট। পরে অনেক চেষ্টা করে বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় দুটা টিকেট পেলাম, এও বাসের একদম পেছনে। আত্মীয়ের বাসায় থেকে সকালে সিএনজি করে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে হয়েছে।
এদিকে, বুয়েটের উপদেশ, প্রসারণ ও গবেষণাকার্যক্রম পরিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রেকর্ড পরিমান ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতিতে আজ ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। অধিকাংশ হলেই শতভাগ ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত ছিল। সকালে মডিউল-এ এর উপস্থিতির হার ছিল ৯৯.৪৫৬% এবং বিকালে মডিউল-বি এর উপস্থিতির হার ছিল প্রায় ৯০%।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত বৈশ্বিক মহামারীর কারণে এবছর বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রাক-নির্বাচনী ও মূল ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। গত ২০ ও ২১ অক্টোবর ২০২১ দুদিনে চার শিফটে প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা নেওয়া হয়। বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদনকৃত মোট ১৮ হাজার ৫টি আবেদনপত্র হতে প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের মধ্য থেকে মূল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য মেধার ভিত্তিতে বাছাইকৃত প্রতি শিফটের ১ হাজার ৫০০তম পর্যন্ত জন যোগ্যপ্রার্থী অংশগ্রহণ করে। ভর্তি পরীক্ষা শুধুমাত্র লিখিত আকারে অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, প্রকৌশল, পুরকৌশল, যন্ত্রকৌশল, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল এবং স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদসমূহের অধীনে ১২টি বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হবে। এবারের ভর্তি পরীক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ও অন্যান্য এলাকার ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠিভুক্ত প্রার্থীদের জন্য প্রকৌশল বিভাগসমূহ এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের জন্য মোট ৩টি ও স্থাপত্য বিভাগে ১টি সংরক্ষিত আসনসহ সর্বমোট ১ হাজার ২১৫টি আসনের বিপরীতে প্রার্থী সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৫ জন। এর মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থী ১২ হাজার ৩১৫ জন এবং মেয়ে শিক্ষার্থী ৫ হাজার ৬৯০ জন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।