জুমবাংলা ডেস্ক : ভোরের আলো ফোটার আগেই কানায় কানায় ভরে ওঠে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ভাউলারহাট। মরিচের ঝাঁজালো গন্ধ আর ব্যাপারীদের হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। প্রতি শুক্র ও মঙ্গলবার এই হাটে চলে এক মহাযজ্ঞ। জানা যায়, প্রতি হাটে এখানে অন্তত ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার মরিচ কেনাবেচা হয়, যা একে পরিণত করেছে উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম মরিচের বাজারে। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
’৯০-এর দশক থেকে চলে আসা এই ঐতিহ্যবাহী বাজারটি এখন কেবল বিশাল লেনদেনের জন্য নয়, বরং এ বছরের প্রতিকূল বাজার পরিস্থিতি আর কৃষকদের হতাশার কারণেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
ভাউলারহাটের চিত্র বড়ই বিচিত্র। ভোর ৫টা থেকে সকাল ১০টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় বেচাকেনা। এই অল্প সময়েই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকার ও ফড়িয়ারা বস্তা বস্তা মরিচ কিনে নিয়ে যান।
বিশেষ করে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এই হাটের নিয়মিত ক্রেতা। তাঁরা জানান, এখানকার মরিচের মান আর রং এত ভালো যে সারা দেশেই এর চাহিদা রয়েছে।
বাজার কমিটির তথ্য মতে, এই হাটে পাইকারি ব্যবসায়ীদের প্রায় ১০০ থেকে ১৫০টি দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকানে দৈনিক পাঁচ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকার মরিচ কেনাবেচা হয়।
বড় ব্যবসায়ীরা তাঁর থেকেও বেশি মরিচ কিনে থাকেন। সব মিলিয়ে প্রতি হাটে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার মরিচ লেনদেন হয়, আর আবহাওয়া ভালো থাকলে এই অঙ্ক ১৫ থেকে ১৮ কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যায়। এত বিশাল অঙ্কের লেনদেন হলেও, কৃষকদের চোখে নেই সেই উচ্ছ্বাস।
কমেছে দাম, বেড়েছে হতাশা : আব্দুর রহিম, বয়স ষাটের কোঠায়। ছোটবেলা থেকেই এই হাটে আসছেন তিনি।
স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘এই বাজার ঠাকুরগাঁও জেলার মধ্যে মরিচের জন্য বিখ্যাত। প্রতি হাটে ১০ কোটির ওপরে মরিচ কেনাবেচা হয়, আবহাওয়া ভালো হলে এটাও ছাড়িয়ে যায়।’ তাঁর চোখে-মুখে বাজারের প্রতি এক ধরনের গভীর মমতা। কিন্তু এ বছর সেই মমতা আর উচ্ছ্বাস নেই কৃষকদের চোখে।
আক্ষেপ করে আরেকজন বিক্রেতা আব্দুল মজিদ বলেন, ‘গত বছর এই সময়ে প্রতি মণ মরিচ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এবার সেই মরিচ পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকার বেশি উঠছে না। আমাদের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরি-সবকিছুই চড়া। এই দামে মরিচ বিক্রি করে আসল টাকাও উঠছে না, লাভ তো দূরের কথা।’
তিনি আরো যোগ করেন, “অনেক কৃষকই ব্যাংক বা মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মরিচ চাষ করেছেন। বাজার খারাপ হওয়ায় এখন ঋণের বোঝা ঘাড়ে চেপেছে। জানি না কিভাবে শোধ করব।’
মরিচ কিনতে আসা ব্যবসায়ীরা এখানকার মরিচের গুণগত মানের প্রশংসা করেন। ঢাকার মোহাম্মদ রফিক, যিনি প্রায় পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে এই বাজার থেকে মরিচ কিনছেন। তিনি বলেন, ‘ভাউলারহাটের মরিচের মান চমৎকার। রং আর ঝাল দুটিই অন্যান্য অঞ্চলের মরিচের চেয়ে ভালো। তাই আমরা এতদূর থেকেও আসি।’
বাজার কমিটির সভাপতি, আবুল কালাম আজাদ এসব বিষয় নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘ভাউলারহাট উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা সব সময় চেষ্টা করি কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে এবং ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে।’ তিনি স্বীকার করে বলেন, ‘বর্তমানে কৃষকরা মরিচের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এটি বাজারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে আমরা আশা করছি খুব দ্রুত এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা যাবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।