নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: লোকমুখে ডাক শুনলেই মাথা ঘুরিয়ে তাকায় সে। চোখে কৌতূহল, পায়ে রাজকীয় ভঙ্গি। ‘ভাওয়াল রাজা’ নামে ডাকলেই যেন সাড়া দেয় এক প্রাচীন রাজ্যের প্রাণী। তবে এটি কোনো কল্পকাহিনির চরিত্র নয়, ভাওয়াল রাজা আসলে একটি ষাঁড়, যার ওজন এখন ১২০০ কেজি বা ৩০ মণ। বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার লোহাগাছ গ্রামে, মাস্টার এগ্রো নামের একটি খামারে।
ভাওয়াল রাজার কাহিনি যেন পশুপ্রেম, পরিশ্রম আর স্নেহের এক অনন্য নিদর্শন। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এখন সে আলোচনার কেন্দ্রে।
খামারটির মালিক মাহফুজুর রহমান জানালেন, “তিন বছর আগে মাত্র ৮৫ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছিলাম। প্রথমে সাধারণই মনে হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে তার চলাফেরা, আচরণ আর ভাবসাব দেখে মনে হলো এটি আর দশটা গরুর মতো নয়। তখনই নাম দিই ‘ভাওয়াল রাজা’।”
সেই নামই হয়ে ওঠে তার পরিচয়। গরুটিকে বড় করতে কোনো কৃত্রিম বা ক্ষতিকর উপকরণ ব্যবহার করা হয়নি। দেশীয় খাবা খুদের ভাত, ঘাস, ভুসি আর ছোলা দিয়ে রাজাকে পোষা হয়েছে। কোনো স্টেরয়েড, হরমোন বা কৃত্রিম মোটাতাজাকরণ প্রয়োগ করা হয়নি।
ভাওয়াল রাজার একান্ত সঙ্গী ও পরিচর্যাকারী জুয়েল বলেন, “ও আমার সন্তানের মতো। দিনে তিনবার খাওয়ানো, নিয়মিত গোসল, শরীর পরিষ্কার সব নিজের হাতে করি। আমি ডাক দিলে সাড়া দেয়, আমার সঙ্গে খেলে। এখন ঈদে বিক্রি হবে। মনে হচ্ছে নিজের সন্তানকে হারিয়ে ফেলছি।”
জুয়েল জানান, ভাওয়াল রাজার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক শুধুই কাজের নয়, আবেগেরও। অনেক সময় খামারে নিঃসঙ্গ মুহূর্তে রাজাকেই সঙ্গী মনে করেন।
ভাওয়াল রাজাকে ঘিরে এখন গাজীপুরের লোহাগাছ গ্রামে উৎসবের আমেজ। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন রাজাকে দেখতে। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন, কেউ আবার দরদাম করছেন।
মাহফুজুর রহমান বলেন, “সাড়ে ৮ লাখ টাকা দাম চেয়েছি। তবে রাজাকে এমন কারও হাতেই দিতে চাই, যিনি ওকে স্নেহ করবেন, বোঝেন পশু মানে শুধু মাংস নয় এটা একটা জীবন, একটা ভালোবাসা।”
এখনকার অনেক খামারে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পশু বড় করা হয়। কৃত্রিম খাদ্য, স্টেরয়েড ইত্যাদিতে পশুর শরীর বাড়ে ঠিকই, কিন্তু কমে যায় তার আয়ু, স্বাভাবিকতা, এমনকি প্রাণচাঞ্চল্যও। ভাওয়াল রাজার গল্প সে দৃষ্টিভঙ্গিকে পাল্টে দেয়। দেশীয় পদ্ধতিতে, স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে, ধৈর্য নিয়ে পশু পালন করলে কীভাবে একটি ষাঁড় হয়ে উঠতে পারে একটি রাজসিক আইকন।
ভাওয়াল রাজার বিক্রি হবে—এটাই বাস্তবতা। ঈদ মানেই কোরবানি। কিন্তু যারা তাকে লালন করেছেন, তাদের চোখে এ যেন রাজাকে বিদায় দেওয়ার মুহূর্ত। সে চলে যাবে, কিন্তু রেখে যাবে একটি গল্প—যেটা শুধু গরু পালন নয়, এক মানবিক সম্পর্ক গড়ার অনন্য উদাহরণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।