চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রমশ তা সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করছে। ফলে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এমন অসহনীয় পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে পড়েছেন বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীরা।
ভাতার টাকায় এখন আর তাদের জীবন-জীবিকা চলছে না। ফলে জীবন জীবিকা তাগিদে কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছেন ভিক্ষাবৃত্তিতে। এমন করুন পরিস্থিতির মুখোমুখি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত শিমুলবাড়ী গ্রামের বিধবা ভাতাভোগী সুখ জাদী বেওয়া। তার বয়স ৮০ ছুঁই ছুঁই। পাঁচ বছর আগে মারা যান স্বামী হ্যাসপেসু মিয়া। স্বামীর রেখে যাওয়া ৪ শতক জমির ভিটাটুকুও বারোমাসিয়া নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। গ্রামের শাহালম মিয়ার বাড়ির পেছনে একটি টিনের চালা তুলে মেয়ে মরিয়মসহ কিছু দিন ছিলেন তিনি।
সুখ জাদী বেওয়ার পায়ে গোদরোগ। তাই তাকে কেউ কাজে নিতে চায় না। অনেক কষ্টে বিধবা ভাতা ভোগীর তালিকায় নাম ওঠে সুখ জাদীর। একমাত্র সম্বল এই বিধবা ভাতার কার্ডের কল্যাণে সামান্য কয়টা টাকা পান তিনি। কিন্তু সেই টাকাও পান প্রতি তিন মাস পরপর। বর্তমানে চাল-ডালসহ প্রয়োজনী নিত্যপণ্যের দামের অস্থিরতায় জীবন-জীবিকা চালাতে চরম নাভিশ্বাস উঠছে তার। বিধবা ভাতার টাকায় খাবারও জুটছে না সুখ জাদীর।
ভাতাভোগী সুখ জাদী বেওয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, একতো অসুস্থ শরীল। তবুও দুইটা জীবন বাঁচার তাগিদে এই বৃদ্ধা বয়সেও পায়ে গোদরোগ নিয়ে ভিক্ষা করা লাহে। দিনে এক থেকে দেড় সের চাউল জোটে। সেই চাউলে আদা পাগলী মেয়েডা নিয়া কোনো রকমেই দু-মুঠো ডাল-ভাত জুটে। মাছ-মাংস তো দূরে থাক সবজির কেনার সামার্থ্য নাই। মাসেও জোটেনা একটু মাছ মাংস।
তিনি আরও বলেন, যেদিন খাবার পাই, সেদিন খাই। যেদিন পাই না, সেদিন খাই না। কীভাবে যে চলতেছি, সেটা আমি আর আমার উপরওয়ালা জানেন।
বর্তমানে সুখ জাদী ওই এলাকায় বারোমাসিয়া নদীর তীর সংলগ্ন হামিদুল ইসলামের জমিতে ছোট একটি টিনের চালা করে স্বামী পরিত্যক্ত মেয়ে মরিয়মকে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে কোন রকমেই মানবেতর জীবন জীবিকা পাড় করছেন। তিনি ভাতা বৃদ্ধিসহ একটি সরকারি ভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সু-সৃষ্টি কামনা করেছেন।
এদিকে অবস্থা সংকটে পড়েছেন উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের নগরাজপুর গ্রামের আবুল কাসেম (৭৫)। তার একমাত্র আয়ের উৎস বয়স্ক ভাতার টাকাটুকু। সম্পদ বলতে মাত্র চার শতক জমিতে ভিটেবাড়ি। ১৫ বছর ধরে পঙ্গুত্ব জীবনযাপন করছেন তিনি। কোন রকম লাঠি ভর দিয়ে বাড়িতে চলাফেরা করেন। ছেলে ও ছেলের বউ অসুস্থ হাঁটাচলা করতে পারে না। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে অসুস্থ হয়। নাতি-নাতনিসহ ৬ সদস্যের সংসারে করুন দুর্দশা নেমেছে। বাপ-ছেলে কর্মহীন হয়ে পড়ায় তাদের এই করুন অবস্থা। বর্তমানে বয়স্ক ভাতার টাকা ও প্রতিবেশীদের সহায়তায় কোন রকমেই খেয়ে না খেয়ে দিন পাড় করছেন বৃদ্ধা কাসেম আলীসহ তার পরিবার।
কাসেম আলী জানান, খুবই কষ্টে আছি বাহে। আপনারাতো স্ব-চোখে দেখছেন আমাদের এই করুন দুদর্শা। প্রতিবেশী ও নিকট আত্মীয় স্বজন সহায়তায় না করলে না খেয়ে মরতে হতো। তিনি ছেলে ও ছেলের বউয়ের প্রতিবন্ধী ভাতার দাবী জানান।
একই অবস্থা উপজেলার হেলিপ্যাড এলাকার জমিলা বেওয়া ( ৯০)। তিনিও ভাতার টাকার জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে না পাড়ায় ভিক্ষাবৃত্তি করছেন। খুবই করুন অবস্থায় দিন পাড় করছেন তিনি। শুধু এরাই নন উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে অধিকাংশ ভাতা ভোগী অসহায় পরিবারগুলোর ভাতার টাকায় জীবন চলছে না। ফলে কোন রকমেই খেয়ে না খেয়ে চরম দুচিন্তায় জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন ওই ভাতাভোগীরা। তারা ভাতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. জামাল হোসেন জানান, ভাতাভোগীরা ভাতাভুক্ত হওয়া ও ভাতার টাকা উত্তোলন করতে আগে টুকিটাকি সমস্যা থাকলেও এখন অনলাইন সুবিধা আসায় ভাতা প্রদানে স্বচ্ছতা ফিরেছে। কোন ধরণের ভোগান্তি ছাড়াই বাড়িতে বসেই ভাতার টাকা পাচ্ছেন।
ভাতাভোগীদের ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ভাতাভোগী এসব সুবিধা পান আসলেই এই টাকা নিয়ে তাদের সংসার চালানে খুবই কঠিন। আসলে ভাতা বাড়ানোর বিষয়টি একান্তই সরকার ও সমাজ সেবা মন্ত্রণালয়ের বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, উপজেলার ৬ ইউনিয়নে বয়স্ক ভাতাভোগী ১১ হাজার ৫৪৫ জন, বিধবা ভাতাভোগী ৫ হাজার ১২৫ জন ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী ৪ হাজার ৭৪৯ জন। এছাড়াও বিশেষ ভাতাভোগী (দলিত সম্প্রদায়) ৪২ জন, শিক্ষা উপবৃত্তি পান ১০৯ জন এবং প্রতিবন্ধী উপবৃত্তি পান। সব মিলিয়ে মোট ভাতাভোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ১১৮ জন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।