স্পোর্টস ডেস্ক : ভারতে যে এই মুহূর্তে লেজেন্ডস লিগ ক্রিকেট যে চলছে, কজনই-বা আর তার খবর রেখেছেন। টুর্নামেন্টটাকে আলোচনায় আনতেই বুঝি মাঠে এভাবে ঝগড়া লেগে গেল ভারতের দুই সাবেক ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর ও শান্তকুমারন শ্রীশান্তর মধ্যে। দুই সাবেক ক্রিকেটারই অবশ্য নানা কারণে শিরোনামে থাকেন সব সময়। সাবেক ব্যাটসম্যান গৌতম গম্ভীর তো নিয়মিতই আলোচনায় থাকেন, কখনো কোহলিকে নিয়ে নেতিবাচক কিছু বলে, কখনো-বা ক্রিকেটবিষয়ক কোনো বিশ্লেষণের কারণে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা ইউটিউবে কম সরব নন সাবেক পেসার শান্তকুমারন শ্রীশান্তও।
এবার ঝগড়া লাগল কী নিয়ে? শ্রীশান্তর অভিযোগ, গতকাল ভারতের সুরাতে টুর্নামেন্টের এলিমিনেটরের এক পর্যায়ে হঠাৎই নাকি শ্রীশান্তকে ‘ফিক্সার’ বলে গালিগালাজ শুরু করেছেন গম্ভীর। মাঠের এই ঝগড়া এরপর ইনস্টাগ্রামে গড়িয়েছে। গম্ভীর সরাসরি শ্রীশান্তর নাম না নিলেও বললেন, আলোচনায় থাকতে অনেকেই অনেক কিছু বলে। আর এই ঝগড়ায় জড়িয়ে গেছেন শ্রীশান্তর স্ত্রী ভুবনেশ্বরী। তিনি খোঁচা মেরেছেন গম্ভীরের ছোটবেলায় সঠিক শিক্ষা পাওয়া নিয়ে সংশয় জানিয়ে।
লেজেন্ডস লিগে ইন্ডিয়া ক্যাপিট্যালসের হয়ে খেলছেন গম্ভীর, শ্রীশান্তর দল গুজরাট জায়ান্টস। গতকাল এলিমিনেটরে গুজরাটকে ১২ রানে হারিয়ে দ্বিতীয় প্লে-অফে উঠেছে ইন্ডিয়া ক্যাপিট্যালস।
গতকাল ঝগড়া কী নিয়ে শুরু হয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে মাঠে দুজনের কথা কাটাকাটি চোখে পড়ে। এরপর ম্যাচের পর মাঠ থেকেই ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক ভিডিও পোস্টে শ্রীশান্ত লিখেছেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই ও আমাকে এমন কিছু বলেছে যেটা খুব বাজে ছিল, এমনটা বলা মি. গৌতম গম্ভীরের উচিৎ হয়নি। আমার কোনো দোষ নেই। আমি ঘটনাটা পরিষ্কারভাবে জানাতে চেয়েছি এখানে। টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত একটা ম্যাচে ক্রিকেটে মাঠে ও এমন কিছু বলেছে যেটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
গম্ভীর আসলে কী বলেছেন, সেটা সেই ভিডিওবার্তায় পরিষ্কার করে জানাননি শ্রীশান্ত, জানিয়েছেন ম্যাচের পরদিন – অর্থাৎ, আজ – ইনস্টাগ্রামে দেওয়া আরেক ভিডিও পোস্টে। সেখানে শ্রীশান্তর অভিযোগ, ‘ও সরাসরি সম্প্রচারিত ম্যাচে আমাকে পিচের মধ্যে বারবার এটা-সেটা বলছিল। আমি একটা বাজে শব্দও উচ্চারণ করিনি। আমি শুধু বলেছি, ‘তুমি এসব কী বলছ!’ আমি বরং বিদ্রুপাত্মক হাসি দিচ্ছিলাম বারবার, কারণ ও আমাকে বারবার বলে যাচ্ছিল, ‘ফিক্সার, ফিক্সার, তুমি ফিক্সার, দূরে সরো, ফিক্সার!”
গম্ভীর কেন হঠাৎ এমন কিছু বলতে শুরু করলেন, সেটাও জানেন না জানিয়ে শ্রীশান্ত বললেন, ‘ও সরাসরি সম্প্রচারিত একটা ম্যাচে এসব বলছিল! আমি ওখান থেকে সরে গেছি, কিন্তু ওর কথা থামছিলই না। একই শব্দ বারবার উচ্চারণ করেই যাচ্ছিল। আমার কোনো ধারণাই নেই কেন ও হঠাৎ এভাবে বলতে শুরু করল! ঘটনাটা ঘটেছে একটা ওভারের শেষে, সে সময়ে ওর এমন কিছু বলার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।’
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে আইপিএলে স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগে রাজস্থান রয়্যালসের তিন খেলোয়াড় নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলেন, তাঁদের একজন শ্রীশান্ত। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর ভারতের ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) শ্রীশান্তর শাস্তি কমিয়ে ৭ বছরে নামিয়ে আনে। সে শাস্তি শেষ হয়েছে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে। শ্রীশান্ত ভারতের জার্সিতে সব সংস্করণ মিলিয়ে ৯০টি ম্যাচ খেলেছিলেন, এর ৪৯টিতে গম্ভীরের সঙ্গে একই দলে ছিলেন। ভারতের ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী দুই দলেই ছিলেন গম্ভীর ও শ্রীশান্ত।
তা সতীর্থদের প্রতি যে গম্ভীরের কোনো শ্রদ্ধাবোধ নেই, সেটি জানিয়েও খোঁচা দিয়েছেন শ্রীশান্ত। সে প্রসঙ্গে টেনে আনলেন কোহলির কথাও, ‘…আপনি একটা দলে মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন, কিন্তু সেটার কী অর্থ থাকল যদি আপনি নিজের সতীর্থদেরই সম্মান করতে না জানেন? টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোতেও ওকে যখন বিরাটকে (কোহলি) নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করা হয়, ও বিরাটকে নিয়ে ভালো কিছু বলে না, অন্য কিছু নিয়ে বলতে থাকে। ‘
এর মধ্যে গম্ভীর আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি কোনো জবাব দেননি। তবে আজ দুপুরে এক্স-এ (সাবেক টুইটার) নিজের হাসিমুখের একটা ছবি দিয়ে ক্যাপশনে শুধু লিখেছেন, ‘হাসি আসে যখন দেখি দুনিয়াতে সবকিছুই আসলে আলোচনায় থাকার জন্যই করে মানুষ!’ ইঙ্গিতটা শ্রীশান্তর দিকে বলেই ধরে নিচ্ছেন সবাই।
এসবের মধ্যে শ্রীশান্তর স্ত্রী ভুবনেশ্বরীও জড়িয়ে গেছেন। তিনি ইনস্টাগ্রামে শ্রীশান্তর পোস্টের নিচে কমেন্টে লিখেছেন, ‘আশ্চর্য হলাম যখন শ্রী-র (শ্রীশান্ত) কাছ থেকে শুনলাম যে একজন খেলোয়াড় যিনি কিনা ভারতের হয়ে এত বছর খেলেছেন তিনি এত নিচে নামতে পারলেন! এবং সেটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের এত বছর পর! আসলে কে কোন পরিবেশে বেড়ে উঠেছে সেটাই দিন শেষে পার্থক্য গড়ে দেয়। মাঠে এমন আচরণের ক্ষেত্রে ওই বেড়ে ওঠার ধরনই প্রকাশ পায়। খুবই হতাশাজনক।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।