আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের রাষ্ট্রপতি পদ অলঙ্করণ করতে যাচ্ছেন সাঁওতাল নারী রাজনীতিবিদ দ্রুপদি মুরমু। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি রাষ্ট্রপতি পদের জন্য তাদের প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করেছে।
দিল্লিতে তিনি ২০২২ সালের আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য শুক্রবার তার মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। আগামী ১৮ জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সাবেক শিক্ষক ৬৪ বছর বয়সের দ্রৌপদী ওড়িশার মেয়ে। গত কয়েক দশক ধরে তিনি বিজেপি’র জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
যদি দ্রৌপদী নির্বাচিত হন, তবে তিনি হবেন ভারতের প্রথম আদিবাসী নারী যিনি দেশটির সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হবেন। ভারতে প্রেসিডেন্ট পদটি অনেকটা অলঙ্কারিক। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ হলেও দেশ পরিচালনায় প্রেসিডেন্টের তেমন কোনো ভূমিকা নেই।
ভারতের সংসদে বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। ফলে দ্রুপদি মুরুম নিশ্চিতভাবে ভারতের রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, উপজাতি সম্প্রদায়ের হওয়ায় দ্রুপদি মুরমুকে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য ভোট দেবে অন্যন্য দলগুলোও।
মঙ্গলবার (২১ জুন) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে বিজেপির সংসদীয় বোর্ড সভা হয়। সেখানেই দ্রুপদি মুরমুকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়।
বিজেপির প্রেসিডেন্ট জে পি নাদ্দা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, তাদের মনে হয়েছে একজন উপজাতি নারীর ভারতের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়া প্রয়োজন।
এদিকে দ্রুপদি মুরমুই ভারতের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হবেন সেই আশা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইটে বলেছেন, দ্রুপদি মুরমু সমাজসেবা, গরীবদের, নিপীড়িতদের এবং প্রান্তিক মানুষদের জীবনমান উন্নত করতে তার জীবনকে উৎসর্গ করেছেন।
টুইটে মোদি আরও বলেছেন, তার আছে দক্ষ প্রশাসনিক ও শাসক-সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা। আমি নিশ্চিত তিনি আমাদের জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হবেন।
ভারতের সবথেকে প্রাচীন এবং বৃহৎ আদিবাসী গোষ্ঠী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মেয়ে দ্রৌপদীর জন্ম ভারতের ওড়িশার ময়ূরভাঁজ জেলার বায়দাপোসি গ্রামে ১৯৫৮ সালের ২০ জুন। গ্রাম পঞ্চায়েতপ্রধানের এ মেয়ে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে পড়াশোনা করেন রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বরের রমাদেবী উইমেন’স কলেজে। ক্যারিয়ার শুরু করেন ওড়িশা সরকারের করণিক হিসেবে।
দ্রৌপদীর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। সেবার তিনি রাইরংপুরে স্থানীয় নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
বিজেপির হয়ে রাইরংপুর আসন থেকে তিনি ২০০০ ও ২০০৯ সালে দুইবার বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০০-২০০৪ সালে তিনি রাজ্যের জোট সরকারের একজন মন্ত্রীও ছিলেন।
প্রথমে বাণিজ্য ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করলেও পরে তিনি মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় সামলান। ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি রাজ্য বিজেপির ‘পিছিয়ে পড়া আদিবাসী’ শাখার প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
ঝাড়খণ্ড রাজ্যের প্রথম নারী রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর ২০১৫ সালে তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে বিদায় নেন। দ্রৌপদী ওড়িশার প্রথম আদিবাসী নেত্রী যিনি রাজ্যপালের দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত টানা ছয় বছর তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। বিবিসি জানায়, দ্রৌপদী মুর্মু বেশ সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার কার্যালয়ের দরজা সব সময় সব শ্রেণীর মানুষের জন্য খোলা থাকত।
আগামী ১৮ জুলাই ভারতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে এবং ২১ জুলাই ফল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রাম নাথ কোভিন্দের স্থলাভিষিক্ত হবেন। আগামী ২৪ জুলাই প্রেসিডেন্ট রাম নাথ কোভিন্দের মেয়াদ শেষ হবে।
সূত্র: এনডিটিভি, আল জাজিরা, আনন্দবাজার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।