ধর্ম ডেস্ক : লকডাউনের জেরে কলকাতার দুর্গোৎসবের জৌলুস কমতে চলেছে৷ ব্যবসার ক্ষতি হওয়ায় মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন বিজ্ঞাপনদাতারা৷ সব মহলেই ঘিরে ধরেছে বড় অনিশ্চয়তা৷
নিছক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের গণ্ডি পেরিয়ে বৃহত্তর বাঙালির প্রাণের উৎসব হয়ে উঠেছে দশভুজার আরাধনা৷ কিন্তু, এবার সেই উৎসবে প্রশ্নচিহ্ন পড়ে গিয়েছে৷ পুজো সর্বত্রই হবে, কিন্তু উৎসবের জাঁকজমক কমতে চলেছে অনেকটাই৷
সরকারের খাতায় নথিভুক্ত কলকাতার পুজোর সংখ্যা ২ হাজার ২৭৬৷ এছাড়াও হাজার দেড়েক পুজো হয়৷ মোট সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারের বেশি৷ বড় পুজোগুলির ক্ষেত্রে ডিসেম্বর থেকেই তৎপরতা শুরু হয়ে যায়৷ সবকিছুই প্রায় চূড়ান্ত হয়ে যায় বৈশাখে৷ কিন্তু, এখন কলকাতা করোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় ব্যস্ত৷ পশ্চিমবঙ্গের যে তিনটি জেলাকে সবচেয়ে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে সরকার, তার মধ্যে রয়েছে কলকাতা৷
ফোরাম ফর দুর্গোৎসব-এর সম্পাদক শাশ্বত বসু বলেন, ‘‘আমাদের পুজোর বিপুল খরচ আসে বিজ্ঞাপন বা স্পনসরশিপ থেকে৷ এই বিজ্ঞাপন দেয় মূলত মুম্বই, পুনে, বেঙ্গালুরু, দিল্লির সংস্থা৷ অর্থনীতি যদি ভেঙে পড়ে, ব্যবসা ঠিক না চলে, তাহলে বিজ্ঞাপন দেবে কেন? টাকার উৎস শুকিয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই বিপুল খরচ করে উৎসবের আয়োজন করা যাবে না৷ শুধু পুজো হবে নিয়ম মেনে৷”
হাতিবাগান সর্বজনীনের সঙ্গে যুক্ত শাশ্বতের সুর পাওয়া গেল দক্ষিণ কলকাতার বিখ্যাত পুজো কমিটি বাদামতলা আষাঢ় সংঘের উদ্যোক্তা সন্দীপ চক্রবর্তীর কথায়৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা যতটা খরচ ধরে এগোচ্ছিলাম, সেটা অনেকটা কমিয়ে ফেলতে হবে৷ পুজো হবে, থিম থাকবে, তবে আড়ম্বর কমে যাবে৷ এখন যা পরিস্থিতি তাতে বিজ্ঞাপনের হাল যে ভালো হবে না বুঝতে পারছি৷’’
২০২০ সালে উত্তর কলকাতার টালা বারোয়ারি তাদের ১০০ বছর উদযাপন করছে৷ অন্যতম উদ্যোক্তা অভিষেক ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা দুটো পরিকল্পনা তৈরি রেখেছি৷ শতবর্ষ হিসেবে যে আয়োজন করার কথা ভাবা হয়েছিল, তা এখনই বাতিল হয়নি৷ কিন্তু, লকডাউনের মেয়াদ যদি বাড়তে থাকে, তাহলে বাতিল করতেই হবে৷ সেজন্য আমরা বিকল্প পরিকল্পনা করে রেখেছি৷’’ তবে তিনি আশাবাদী, লকডাউনের পর বিভিন্ন সংস্থা বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে খরচ একেবারে শূন্যতে নামিয়ে আনবে না৷ কলকাতার পুজো তাদের কাছে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনের সুযোগ এনে দেয়৷
কলকাতার বড় বাজেটের একাধিক পুজো ইতিমধ্যেই খরচ কমানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে৷ কলেজ স্কোয়্যার ৯০ শতাংশ ও চেতলা অগ্রণী ৮০ শতাংশ খরচ কমাচ্ছে৷ বালিগঞ্জ কালচারাল ৬০ শতাংশ কমাচ্ছে৷ একডালিয়া এভারগ্রিন ও নাকতলা উদয়ন সংঘ খরচ নামিয়ে আনছে অর্ধেকে৷ একডালিয়ার কর্তা, রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘পুজো নমঃ নমঃ করে হবে৷ জাঁকজমক করে হবে না৷’’ ত্রিধারা সম্মিলনীর কর্তা, কলকাতার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারের বক্তব্য, ‘‘পরিস্থিতির উপর সব নির্ভর করছে৷ ঘটপুজোর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷’’ ইতিমধ্যে প্রতিমার বায়না বাতিল করেছে ত্রিধারা৷
এর ফলে দুর্গোৎসব নামক শিল্পের সঙ্গে জড়িত সকলেরই চরম আর্থিক ক্ষতি হতে চলেছে৷ শাশ্বতর দাবি, ‘‘প্রতি বছরের উৎসবে শুধু কলকাতায় ৪০-৫০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়৷ প্রতিমা, মণ্ডপ ও আলোর শিল্পী থেকে ঢাকি, পুরোহিত— কত পেশার মানুষ এই উৎসবের দিকে তাকিয়ে থাকেন৷ ইতিমধ্যে কুমোরটুলিতে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে৷ কিন্তু, অর্ডার বাতিল হতে থাকায় ভেঙে পড়ছেন মৃৎশিল্পীরা৷’’ পুজোর মুখে বাজার থেকে মল, সর্বত্রই বিক্রিবাটা বাড়ে৷ পুজোর দিনগুলিতে রাস্তার ধারে খাবার থেকে নানা জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেন অনেকে৷ সব মিলিয়ে উৎসব নামক শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষের সংখ্যা কত, তার হিসেব করা সম্ভব নয়৷ সূত্র : ডয়চে ভেলে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।