ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা যেন উপমহাদেশে এক নতুন সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। পহেলগাম হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আর তার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও ভারতীয় বিমানের জন্য একই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই পরিস্থিতি দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কূটনৈতিক জটিলতা ও সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। এমন একটি সময় যখন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও পারস্পরিক যোগাযোগ অপরিহার্য, তখন আকাশসীমা বন্ধ করা ও পানিচুক্তি স্থগিত করা দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনার মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। ভারত পাকিস্তানের মধ্যকার এই উত্তেজনা শুধু দুই দেশের জন্যই নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
ভারত পাকিস্তানের আকাশসীমা নিষেধাজ্ঞা ও সাম্প্রতিক কূটনৈতিক পরিস্থিতি
পহেলগাম হামলার পর ভারতের তরফ থেকে নেয়া সিদ্ধান্তের মধ্যে অন্যতম ছিল পাকিস্তানি বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া। ১ মে থেকে কার্যকর হওয়া এই নিষেধাজ্ঞার ফলে পাকিস্তানে নিবন্ধিত, পরিচালিত বা মালিকানাধীন কোনো বিমান ভারতের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে না। এমনকি সামরিক বিমানও এর আওতার বাইরে নয়। এর ফলে পাকিস্তানি এয়ারলাইনগুলো মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ পূর্ব এশিয়ার গন্তব্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।
Table of Contents
প্রতিউত্তরে পাকিস্তানও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। একইসঙ্গে তারা তৃতীয় দেশের মাধ্যমে ভারতের সাথে বাণিজ্য স্থগিত করেছে এবং ভারতীয় পণ্যের আমদানি সীমিত করেছে। এই পাল্টা পদক্ষেপের ফলে দুই দেশের মধ্যে কার্যকরভাবে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। Wikipedia অনুযায়ী, এরকম নিষেধাজ্ঞা আগেও দেখা গেছে, তবে এবারের মত একযোগে এতগুলো কূটনৈতিক পদক্ষেপের নজির সাম্প্রতিক ইতিহাসে বিরল।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বহু দেশ ও সংস্থা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পৃথকভাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন। তিনি উভয় দেশকে যোগাযোগ পুনরায় শুরু করার জন্য আহ্বান জানান এবং উত্তেজনা প্রশমনের প্রয়োজনীয়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
রুবিও বলেন, “এই ধরনের সহিংস ঘটনার তদন্তে পাকিস্তান যেন সহযোগিতা করে এবং ভারত যেন কূটনৈতিক পদক্ষেপে ফিরে আসে – এটাই আমাদের প্রত্যাশা।” এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও শান্তির বার্তা দিয়েছেন এবং জাতিসংঘের পক্ষ থেকে মধ্যস্থতা প্রস্তাবের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এর পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন এবং রাশিয়া থেকেও দুপক্ষকে সংযত আচরণ এবং সংঘাত এড়ানোর আহ্বান এসেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, এই দ্বিপক্ষীয় বিরোধ আন্তর্জাতিক শান্তির জন্যও হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সামরিক প্রস্তুতি ও যুদ্ধ সম্ভাবনা
ভারতীয় প্রতিক্রিয়া
পেহেলগাম হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুতে ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল তাৎক্ষণিক এবং দৃঢ়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা মন্ত্রীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে সেনাবাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন। ভারতীয় বিমানবাহিনী এরই মধ্যে কাশ্মীর সীমান্তে নজরদারি জোরদার করেছে এবং নৌবাহিনীও সফল ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
এদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ণাঙ্গ সামরিক মহড়া চালিয়েছে এবং সীমান্তে আধুনিক অস্ত্রসহ অবস্থান নিয়েছে। নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানি বাহিনী ভারতের আগ্রাসনের জবাবে প্রস্তুত রয়েছে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রয়াস চালাবে।
গোয়েন্দা তথ্য ও উদ্বেগ
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার জানিয়েছেন, ইসলামাবাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে, আগামী ২৪–৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ভারত সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। এই তথ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও চিন্তিত করে তুলেছে।
পানি, বাণিজ্য ও ভিসা সংকট
ভারতের একতরফা সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত এবং আটারি সীমান্তে বাণিজ্য স্থগিত করার ঘোষণার পর পাকিস্তানও সিমলা চুক্তি স্থগিত করেছে। দুই দেশই প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে বলেছে।
এছাড়া দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কও সীমিত হয়ে এসেছে। দুই পক্ষই কূটনীতিকদের ফেরত পাঠিয়েছে এবং বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনা স্থগিত করেছে।
ইতিহাস যা বলে: সামরিক প্রতিক্রিয়ার রূপরেখা
২০১৬ সালে উরি হামলার পরে ভারত যেভাবে “সার্জিকাল স্ট্রাইক” পরিচালনা করেছিল এবং ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার জবাবে বিমান হামলা চালিয়েছিল – তেমন কিছু ঘটতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ইতিহাস বলছে, ভারত-Pakistan সংঘর্ষে সীমিত সামরিক অভিযানের প্রবণতা বিদ্যমান রয়েছে।
তবে এখনকার পরিস্থিতি অনেক বেশি স্পর্শকাতর এবং পরিণতি হতে পারে অনেক ভয়াবহ। কারণ বর্তমানে উভয় দেশই পরমাণু শক্তিধর এবং সামরিকভাবে বেশ সমসাময়িক ক্ষমতা সম্পন্ন।
দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি রক্ষায় প্রস্তাবিত সমাধান
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংকট থেকে উত্তরণে প্রয়োজন মধ্যস্থতাকারী পক্ষের শক্তিশালী হস্তক্ষেপ। জাতিসংঘ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়কেই এই দায়িত্ব নেওয়া উচিত। ভারতের উচিত কঠোর প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তে আন্তর্জাতিক তদন্তে সহায়তা করা এবং পাকিস্তানের উচিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া।
FAQs
- ভারত পাকিস্তানের আকাশসীমা কবে থেকে বন্ধ?
১ মে ২০২৫ থেকে ভারত পাকিস্তানি বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করে। - পেহেলগাম হামলায় কতজন নিহত হয়েছেন?
এই হামলায় ২৬ জন বেসামরিক পর্যটক নিহত হন বলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানায়। - এই উত্তেজনার আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কী?
যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বহু রাষ্ট্র ও সংস্থা শান্তির আহ্বান জানিয়েছে। - পানি চুক্তি নিয়ে কী সংকট হয়েছে?
ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত করেছে এবং পাকিস্তান তা যুদ্ধ ঘোষণা বলে বিবেচনা করছে। - এতে কি যুদ্ধ হতে পারে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে, তবে আন্তর্জাতিক চাপ ও সংযম সেই সম্ভাবনা কমিয়ে দিতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।