২০২৫ সালের ১০ই মে বিকেল ৫টা থেকে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সমস্ত ধরনের সামরিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে দুই দেশের সামরিক অপারেশন মহাপরিচালক (ডিজিএমও)। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে এই সিদ্ধান্ত একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি এমন এক সময় এসেছে যখন দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছিল এবং সীমান্তে একাধিক প্রাণঘাতী হামলা ঘটেছিল।
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ: যুদ্ধবিরতির পেছনের ঘটনাপ্রবাহ
কাশ্মীরের পাহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের জবাবি সামরিক অভিযানের মাধ্যমে উত্তেজনার সূচনা হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এ সময় বাহাওয়ালপুরে একটি অভিযান পরিচালনা করে আইসি-৮১৪ হাইজ্যাকের মাস্টারমাইন্ড ইউসুফ আজহারকে হত্যা করা হয় বলে দাবি করা হয়।
Table of Contents
পাকিস্তানের ডিজিএমও বিকেল ৩:৩৫ মিনিটে ভারতের ডিজিএমও-কে ফোন করেন এবং উভয় পক্ষ সম্মত হয় বিকেল ৫টা থেকে সামরিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার বিষয়ে। এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, এই শান্তিচুক্তি তাদের মধ্যস্থতার ফল। ট্রাম্প ছাড়াও মার্কো রুবিও এবং আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
বিকাল ৫টা থেকে ‘যুদ্ধবিরতি’ কার্যকর করেছে ভারত : বিক্রম মিশ্রি
যুদ্ধের অংশ হিসেবে পাকিস্তান চালায় প্রতিশোধমূলক অভিযান ‘অপারেশন বুনিয়ান উল মারসুস’ নামক হামলা। এতে ভারতীয় সামরিক ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য করে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। ভারত পাল্টা জবাবে পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং রাডার স্টেশনগুলোকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
কাশ্মীর, বিশেষত সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে এই সংঘর্ষবিরতির খবর স্বস্তি এনেছে। হুররিয়ত কনফারেন্সের নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুক, জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তবে ভারতের প্রতিরক্ষা সূত্র জানিয়েছে, এটি শুধুমাত্র একটি “দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়া”, পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি নয়। ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে এবং ইন্দাস জলচুক্তি এখনও স্থগিত অবস্থায় রয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও উভয়েই এই যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান অটল থাকবে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও জনমনে প্রতিক্রিয়া
শ্রীনগরসহ কাশ্মীর উপত্যকায় সাম্প্রতিক গোলাবর্ষণ ও ড্রোন হামলার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সংঘর্ষবিরতির ফলে সেখানে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। স্থানীয়রা এখন শান্তির আশায় দিন গুনছেন।
অন্যদিকে পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির পরপরই তাদের আকাশপথ পুনরায় উন্মুক্ত করে। পাকিস্তান এয়ারপোর্টস অথরিটি জানিয়েছে, সব রুটে পুনরায় ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়েছে।
ভারতের রাজনৈতিক মহলেও প্রতিক্রিয়া ছিল ভিন্নতর। বিজেপি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্ব এবং সেনাবাহিনীর সাহসিকতাকে প্রশংসা করে। সিপিআই(এম) জানায়, এই সংঘর্ষবিরতি ইতিবাচক, তবে পাকিস্তানের মাটি থেকে সন্ত্রাস বন্ধ হওয়া জরুরি।
কৌশলগত ও কূটনৈতিক দিক
সাবেক এয়ার ভাইস মার্শাল কপিল কাক বলেন, এই শান্তি উদ্যোগ বাস্তবায়নে ট্রাম্প ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতের সংলাপ নির্ভর করবে বাস্তব পরিস্থিতির উপর।
এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ নিয়ে সংঘর্ষবিরতি একটি মূল্যবান সুযোগ তৈরি করেছে শান্তি ও নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
এই যুদ্ধের কারণ কী?
কাশ্মীরে পাহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে।
এই কি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি?
না, ভারত বলছে এটি শুধুমাত্র একটি বোঝাপড়া, পূর্ণাঙ্গ চুক্তি নয়।
কে মধ্যস্থতা করেছে?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও প্রধান মধ্যস্থতাকারী ছিলেন।
ইন্দাস জলচুক্তির বর্তমান অবস্থা কী?
ভারত এখনো এই চুক্তি স্থগিত রেখেছে।
ভবিষ্যৎ আলোচনার সম্ভাবনা আছে কি?
হ্যাঁ, ১২ই মে ডিজিএমও পর্যায়ে পুনরায় আলোচনা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।