জুমবাংলা ডেস্ক : এবছর করোনা শঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে কিছুটা হলেও ঘুরে দাড়িয়েছে ফুলের রাজধানী যশোরের গদখালীর ফুলবাজার। বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসে দ্বিগুন বেড়েছে ফুলের দাম। বিক্রিও বেড়েছে সেই হারে। এই দু’ই দিনে ইতোমধ্যে কয়েক কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। আগামী দু’দিনে আরও কয়েক কোটি টাকা ফুল বিক্রির আশা এই অঞ্চলের ফুলচাষিদের।
গদখালী ফুলবাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে চাষিরা ফুল নিয়ে বাজারে এসেছেন। পাশাপাশি দূর-দূরান্তের ক্রেতারাও হাজির হয়েছেন সেখানে।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণা আর হাঁকডাকে মুখর হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা। গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা ফুলের পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন শত শত ফুলচাষি। কেউ ভ্যান, কেউ সাইকেল বা ঝুড়ির মধ্যে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ফুলের দরদামে ব্যস্ত।
গত চারদিন ধরে ফুলের চাহিদা বাড়তি থাকায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি ফুল কিনছেন এই বাজার থেকে। একইসঙ্গে বেশি দাম পাওযায় ফুলচাষিরাও বাজারে দ্বিগুণ ফুল এনেছেন।
সবমিলিয়ে উৎসবের এই মাসে আবারও ফুল-বেচাকেনা জমে ওঠায় ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের মনে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
এদিন গদখালীতে প্রতিপিচ গোলাপ ফুল বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। আর চায়না রোজ বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। এছাড়া রজনীগন্ধা স্টিক বিক্রি হয়েছে ৯-১০ টাকা, গ্লাডিওলাস ৮-১২ টাকা, জারবেরা প্রতিটি ১০-১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে প্রতিহাজার ৬/৭শ টাকা। দু’সপ্তাহ আগেও এই ফুলের দাম অর্ধেকেরও কম ছিল।
পহেলা ফাল্গুনসহ তিন দিবসে ফুলের বাজার চাঙা হওয়ায় প্রায় দুই বছর পর মুখে হাসি ফুটেছে গদখালীর চাষিদের। তারা বলছেন, এই তিন দিবস যত কাছে আসবে ফুলের দামও তত বাড়বে।
তারা আশা করছেন, গত দুই বছর ধরে করোনায় লাগাতার যে ক্ষতির শিকার হয়েছেন তারা, এ বছর ফুল বিক্রি করে কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন।
গদখালী বাজারে ফুল নিয়ে আসা পানিসারার হাড়িয়া নিমতলা এলাকার তরুণ ফুলচাষিরা জানায়, অনেক দিন পর বেচাকেনা অনেক ভালো হচ্ছে। ভালোবাসা দিবস ও বসন্তবরণ উপলক্ষে বিক্রি বাড়ায় তিনি খুশি।
গদখালীতে প্রথমবারের মতো টিউলিপ চাষ করেছেন পানিসারা গ্রামের ইসমাইল হোসেন। তার পাঁচ শতক জমিতে ফুঠেছে বিভিন্ন রঙের সাত প্রকারের টিউলিপ ফুল। তিনি জানান, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে তার জমিতে টিউলিপ ফোটা শুরু হয়েছে। ভালোবাসা দিবসে এসব টিউলিপ বিক্রি করা হবে। করোনা আর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের রেশ কাটিয়ে চাষিরা আশার আলো দেখছেন।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, সরকারের বিধি নিষেধে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে ফুলের বাজার। মানুষ ফুল কিনছে।
বিভিন্ন কারণে এবার ফেব্রুয়ারিতে ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোয় এ পর্যন্ত বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস ঘিরে প্রায় ১০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। পরিস্থিতি ভালো থাকলে আগামী দু’দিনে আরও কোটি টাকার ফুল বিক্রি হওয়ার আশা রয়েছে।
আব্দুর রহিম আরও জানালেন, দ্বিগুণ দামে ফুল বিক্রি হওয়ায় এবং বাইরে থেকে প্রচুর ক্রেতা আসায় ফুলচাষিরা খুশি। আবহাওয়া ও পরিবেশ ভালো থাকলে একুশে ফেব্রুয়ারি ঘিরে আরও ভালো বেচাকেনার আশা করছেন তারা।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্যমতে, যশোরে প্রায় ৬ হাজার ফুলচাষি রয়েছেন। তারা অন্তত ১৫শ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষ করেন। ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলার বিভিন্ন মাঠে অন্তত ১১ ধরনের ফুল চাষ হয়ে থাকে।
তবে সামপ্রতিক সময়ে শীত প্রধান দেশের ফুল টিউলিপ ফুল চাষের মাধ্যমে গদখালীতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে প্রতিবছরই গদখালীর ফুলচাষিরা নতুন জাতের ফুল উপহার দিয়ে থাকেন। এবারের ভালোবাসা দিবসে ফুলপ্রেমীদের জন্য নতুন উপহার টিউলিপ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।