জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে কমপক্ষে ৩০টি ভুল ধরা পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির একাদশ শ্রেণির মানবিক শাখার অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষায় বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্রে এসব ভুল ধরা পড়ে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তীব্র সমালোচনা।
এক অভিভাবকের অভিযোগ, বর্তমানে শিক্ষার বারোটা বেজে গেছে। এত স্বনামধন্য স্কুলের এই অবস্থা।
গত বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) থেকে ভিকারুননিসায় একাদশ শ্রেণির অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথম দিনে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা ছিল। এ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে অনেকগুলো শব্দ ভুল বানানে লেখা হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এবং গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভুল বানানের ওই প্রশ্নপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শুরুতে পরীক্ষার যে সময়সীমা উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে “ঘণ্টা” শব্দটি ভুল বানানে লেখা হয়েছে।
প্রশ্নপত্রের এক নম্বরে একটি অনুচ্ছেদ (উদ্দীপক) আছে। সেখানে যথাসময়কে লেখা হয়েছে “যথার্থ সময়”, ভেঙে শব্দের বানান লেখা হয়েছে “ভেঙ্গ”। দাবি বানান লেখা হয়েছে “দাবী”। “মানিবার”কে লেখা হয়েছে “মনিবার”। “নিরূপণ” বানান লেখা হয়েছে ‘‘নিরুপন’’।
ক্রমিকের দ্বিতীয় প্রশ্নে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতার ৬ লাইনে ৫টি ভুল করা হয়েছে। সেখানে ‘‘ম্রিয়মাণ’’কে লেখা হয়েছে ‘‘ম্নিয়মান’’। এভাবে “নিজেরে”র জায়গায় “নিজের”, “যেন”র জায়গায় “যেনো”, “ভর”-এর স্থলে “ভয়” এবং “সংশয়” বানানটি লেখা হয়েছে “সংয়শয়”।
কবিতা সংক্রান্ত প্রশ্নে “গ্রথিত” শব্দের জায়গায় লেখা হয়েছে “প্রথিত”।
দ্বিতীয় উদ্দীপকে “ভাষা আন্দোলন”-কে এক শব্দে লেখা হয়েছে। জ্ঞানতাপস-এর বানান লেখা হয়েছে, “জ্ঞানতাস”। কবিতার মাত্রা বানান লেখা হয়েছে “মাত্র”। আরেক প্রশ্নে তোমার মতামত লিখতে গিয়ে লেখা হয়েছে “মোতার” মতামত।
এছাড়া প্রশ্নপত্রের বিভিন্ন অংশে “ব্যাপক”, “শোষণ”, “ধারণ”, “মোকদ্দমা”, “শূন্য”, “প্রকাণ্ড” ইত্যাদি শব্দ ভুল বানানে লেখা হয়েছে। কিছু জায়গায় ব্যাকরণগত ভুলও দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
পুরো প্রশ্নপত্রে ১৮টি মতান্তরে ২০টি ভুল আছে বলে ফেসবুক পোস্টে বলা হচ্ছে। তবে প্রশ্নপত্রটি ভালো করে যাচাই করে সেখানে ৩০টিরও বেশি ভুল পাওয়া গেছে।
বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা হলে তা সবার নজরে আসে।
এরপর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ অভিভাবক ফোরামের ফেসবুক গ্রুপে প্রশ্নপত্রটি একজন পোস্ট করেন। পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘‘ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রশ্নপত্রের নমুনা দেখুন। বর্তমান অতিথি অধ্যক্ষ ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসলেন!’’
পোস্টে রেজাউল কায়সার সুমন নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘‘বর্তমানে শিক্ষার বারোটা বেজে গেছে। এত স্বনামধন্য স্কুলের এই অবস্থা!’’
মনির হোসেন নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে বলা হয়, ‘‘একটা প্রশ্নে এত ভুল হলে ছাত্রছাত্রীরা কী শিখবে? গ্রুপে কোনো উকিল থাকলে সংশোধিত কপি এবং মূল কপি নিয়ে আদালতে রিট করুন।’’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ আবদুল মজিদ সুজন বলেন, বাংলাদেশের স্বনামধন্য ৫টি কলেজের একটি ভিকারুননিসা। এমন একটি প্রতিষ্ঠানে প্রশ্নপত্রে ভুল থাকা অমার্জনীয় অপরাধ। স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা উচ্চশিক্ষিত, এমনটাই আমরা মানি। কিন্তু তারা ভুল করলে শিক্ষার্থীরা তাদের থেকে কী শিখবে! এমন নয় যে এটাই প্রথম ভুল। গত এক বছর ধরে বিভিন্ন শ্রেণির প্রশ্নপত্রে ভুল পাওয়া যাচ্ছে।
তার অভিযোগ, এখানকার শিক্ষকরা নিজেদের স্বার্থ দেখেন, গ্রুপিংয়ে সময় দেন। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সময় বের করার চিন্তা তাদের নেই। তারা গ্রুপিংয়ে সময় বেশি দেন, মনোযোগ সহকারে প্রশ্নপত্র তৈরি করেন না। এর ফলে প্রশ্নে ভুল থেকে যায়।
এ বিষয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি ড. ফারহানা খানম বলেন, ‘‘সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষায় ড. জাফর ইকবালকে নিয়ে একটা ভুল তথ্য দেওয়ায় একজন শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। এ ঘটনায়ও তেমনই হওয়ার কথা। আমি অসুস্থ, বাসায় আছি। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ ম্যাম ভালো বলতে পারবেন।’’
এসব বিষয়ে জানতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তার অফিসিয়াল ফোন নম্বরে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।