জানলে অবাক হবেন যে, ভুবনচিল গাছের চেয়ে বেশি বাসা করে টাওয়ার, পানির ট্যাংকির তলায় বা ওপরে। বড় বড় শহরে খুঁজলে ডিশ-অ্যান্টেনার ভেতরেও বাসা পাওয়া যাবে। এরা বছরের পর বছর একই জায়গায় বাসা করতে পছন্দ করে। দুজনে মিলে জায়গা নির্বাচন করে ২-৪ দিনে। বাসা বানায় প্রায়ই গাছের কাঁচা সরু ডাল দিয়ে। গাছের কাঁচা ডাল পায়ে ধরে যখন আকাশে ঘুরে ঘুরে ওড়ে তখন মনে হয় ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। ঢাকার আকাশে এটা দেখা যায়, অন্যান্য শহরেও।
ঢাকার মতিঝিলসহ বড় বড় ভবনগুলোর শীততাপ নিয়ন্ত্রণ বক্সের ওপরে বা আড়ালেও বাসা করে। ডিম প্রায়শ ৩টি। ২টি ও ৪টির সংখ্যা কম। দুজনে পালা করে তা দেয়। ডিম ফোটে ২৯-৩৩ দিনে। বাচ্চারা উড়তে পারে ৩০-৩৬ দিনে। ডিম পাড়ার পর থেকে বাচ্চাদের উড়তে শেখা পর্যন্ত ভুবনচিলদের (বিশেষ করে বড় বড় শহরে) স্বস্তি থাকে না। কাকেরা দলবেঁধে বাসার পাশে বসে, উত্যক্ত করে, জ্বালায়। ডিম-বাচ্চা নষ্ট করতে চায়। একটি পাখিকে তাই ডিম-বাচ্চার সার্বক্ষণিক পাহারায় থাকতে হয়।
ভুবনচিলের প্রিয় খাদ্য মরা-ইঁদুর, মরা-মাছ, কাকের তুলতুলে বাচ্চা। বাসি-পচা খেতে ভালোবাসে। শহরের ডাস্টবিন, ময়লার ভাগাড় থেকে খাদ্যবস্তু তুলে খায়। কসাইখানার পরিত্যক্ত হাড়-মাংস, নাড়িভুঁড়ি খুব পছন্দ। শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ওরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শঙ্খচিলের মতো এরাও বাচ্চাদের খাদ্য খাওয়ায় ঠোঁটে কেটে টুকরো টুকরো করে। ভুবনচিলের কন্ঠস্বর হচ্ছে ‘চিরি চিরি চিরি’।
প্রসঙ্গত, এখানে একটি তথ্য দিচ্ছি। প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হলে কেবল উড়তে শেখা আনাড়ি ভুবনচিলের ছানারা মারা পড়ে। ২০০৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রায় ২০০ বাচ্চা আহত-নিহত হয়। পাখিপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আহত বহু পাখিকে পরম মমতায় চিকিৎসা ও সেবাযত্ন করে সুস্থ করে উড়িয়ে দেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপাশা মুনমুন নামে এক মেধাবী ছাত্রী একটি আহত ভুবনচিলকে পরম মমতায় বাসায় নিয়ে সেবাযত্ন করেন ২০০৮ সালেই। ওটাও ঝড়ে আহত হয়েছিল। তিনি একটি আহত ঘুঘুকেও বাঁচিয়েছিলেন। ভুবনচিল শীতকালেই বাসা করে বেশি, মাঝে-মধ্যে গরমকালেও। শঙ্খচিল বাসা করে শরতে বেশি, শীতে কম। গরমকালেও বাসা করতে দেখা যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।