আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মানব সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়েছে। প্রথম দিকের অপরাধগুলো এক দলের শিকার চুরি। কিংবা দলনেতা হত্যা করে দলের প্রধান বনে যাওয়ার মত সহজ হলে পরবর্তীতে বদলে যায় অপরাধের ধরন। সভ্যতা সংস্কৃতি এর উন্নতির সাথে সাথে অপরাধের ধরন এবং মাত্রাও পরিবর্তন হতে থাকে। অপরাধীরা প্রতিনিয়তই নিজেদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে অপরাধের নিত্য নতুন পন্থা আবিষ্কার করে যাচ্ছে। যা আইন রক্ষাকারী সংস্থার জন্য একটি মাথাব্যথাই বটে।
অপরাধের ব্যাপারে একটি পুরাতন প্রাবাদ রয়েছে, যেকোনো অপরাধই পুরোপুরি নিখুঁত নয়। তবে অল্প কিছু ক্ষেত্রে এই প্রবাদ ভুল প্রমাণিত হয়। যেখানে অপরাধকারীরা অপরাধ করে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে খুব সহজেই পালিয়ে যায় এবং বিচারবিহীন ভাবেই কাটিয়ে দেয়। ২০০৬ সালে ফ্রান্সে এমনি অনেক ঘটনা ঘটে। যেখানে ভ্যাকুয়াম গ্যাং নামক একটি অপরাধী গ্রুপ ফ্রান্সের বিভিন্ন সুপারশপ থেকে ডাকাতি করে নেয় প্রায় ১ মিলিয়ন ইউরো!
আর এসকল ডাকাতিতে তারা অস্ত্রের বদলে ব্যবহার করেছিল ভ্যাকুয়াম ক্লিনার! কোনো রক্তপাত বা আহত হওয়া ছাড়াই সংগঠিত হওয়া এসকল ডাকাতি অবাক করবে যেকোন মানুষকে। তাহলে জেনে নেয়া যাক ফ্রান্সের ভ্যাকুয়াম হাইস্ট সম্পর্কে-
গ্রোসারি বা সুপার শপ এর দিক থেকে অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর থেকে ফ্রান্স কিছুটা ভিন্ন। ইউরোপ বা আমেরিকায় যেমন কিছু ব্লক পর পরই ছোটখাটো অনেক গ্রোসারি শপ রয়েছে ফ্রান্সে তেমন নেই। বরং ফ্রান্সে সুপার শপকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। পুরো ফ্রান্স জুড়েই রয়েছে বড় বড় সুপারশপ। তাছাড়াও যেসকল গ্রোসারি শপ রয়েছে তাও অন্যান্য দেশের থেকে বড়। আর সুপার শপ হওয়ার কারণে প্রতিটি শহরে এদের সংখ্যাও কিছুটা কম।
এ কারণে প্রতিটি সুপার শপেই জমা হয় অনেক ক্যাশ। এসকল সুপারশপে জমা হওয়া ক্যাশের পরিমাণ কোনো ছোটখাট ব্যাংক থেকে কম নয়। জমা হওয়া এসকল ক্যাশের সিকিউরিটি ব্যাংকের থেকে কম হলেও প্রতিটি সুপারশপের অভ্যন্তরে রয়েছে একটি করে বড় এবং সিকিউরড ভল্ট। এসকল ভল্ট টাকা পরিপূর্ণ হলে আর্মড গার্ডরা ক্যাশ ব্যাংকে নিয়ে যেত।
এসব প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভ্যাকুয়াম গ্যাং এর সবাই অবগত ছিলো। তারা এই ক্যাশফ্লো এর মধ্যে থেকেই ডাকাতির পথ খুঁজছিলেন। কিন্তু সমস্যার কারণ ছিলো সিকিউরিটি নিয়ে। সুপারশপের ভল্টগুলোতে কোনো গার্ড না থাকলেও এসকল ভল্টে কোনো প্রকার আঘাত কিংবা চুরির চেষ্টা হলে সয়ংক্রিয়ভাবে এলার্ম বেজে যাবে এবং ৫ মিনিটের মধ্যেই পুলিশ এসে পড়বে। এছাড়াও আর্মড গার্ডদের কাছ থেকে ডাকাতি করাও ছিল অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। ভ্যাকুয়াম গ্যাং এর সদস্যরা তাদের এইসব সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজতে শুরু করে।
২০০৬ সালের মধ্যভাগে ভ্যাকুয়াম গ্যাং এর সদস্যরা এক অভিনব উপায় খুঁজে বের করে। তা হলো ভ্যাকুয়াম ক্লিনার। সুপারশপে অবস্থিত ভল্টগুলোর পাসওয়ার্ড শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির কাছেই থাকত। তাই সুপারশপগুলো ভল্টে টাকা ঢোকানোর জন্য একটি ফানেল আকৃতির পাইপ ব্যবহার করত। যার সাহায্যে ক্যাশ থেকেই সকল টাকা সয়ংক্রিয়ভাবে ভল্টে চলে যেত। ভ্যাকুয়াম গ্যাং এর সদস্যরা এই পাইপকেই টার্গেট করে।
তাদের পরিকল্পনা ছিলো এই পাইপে ছিদ্র করে তা একটি শক্তিশালী ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের পাইপের সঙ্গে সংযোগ দেয়া। যাতে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ভল্ট থেকে সব টাকা শুষে নেয়। ভ্যাকুয়াম গ্যাং মেম্বাররা পরিকল্পনা অনুযায়ীই কাজ শুরু করে। তারা এই ডাকাতির জন্য সন্ধ্যা রাতকে বেছে নেয়। কারণ তখন সবচেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থ ক্যাশে জমা থাকে। সুপারমার্কেটগুলোর শীততাপ নিয়ন্ত্রণ পাইপের মধ্যদিয়ে ভ্যাকুয়াম গ্যাং মেম্বাররা ভল্টের নিকটে যায়। তারপর তারা ড্রিল ব্যবহার করে ভল্টের পাইপে ছিদ্র করে ভ্যাকুয়াম পাইপ লাগিয়ে দেয়।
মুহূর্তেই তারা ভল্ট থেকে সকল টাকা চুরি করে ফেলে। এভাবে পুরো ভ্যাকুয়াম গ্যাং মেম্বাররা ফ্রান্স জুড়ে প্রায় ছয়টি সুপার শপে ডাকাতি করে। পুলিশ কিংবা সুপার শপ কর্তৃপক্ষ কিছু বোঝার আগেই ভ্যাকুয়াম গ্যাং এর সদস্যরা চুরি করা অর্থ নিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশের কাছে প্রায় প্রতিটি চুরির সিসিটিভি ফুটেজ থাকলেও ভ্যাকুয়াম গ্যাং মেম্বাররা মাস্ক ব্যবহার করার কারণে এই গ্যাং এর কেউকেই গ্রেফতার সম্ভব হয়নি। ২০০৬ সালে সংগঠিত এসকল অপরাধ আজো অমীমাংসিত রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।