আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইতালিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একদিনেই মারা গেছে ১৩৩ জন। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৬৬ জনে। দেশটির কর্তৃপক্ষ এখবর নিশ্চিত করেছে। খবর বিবিসি বাংলার।
সরকারি সুরক্ষা সংস্থার হিসাবে, একদিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ২৫%। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৮৮৩ থেকে বেড়ে ৭৩৭৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
রবিবার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে লাখ লাখ মানুষ স্বাস্থ্য বিষয়ক সতর্কতা গ্রহণের মধ্যেই প্রাণহানি ও আক্রান্তের এই সংখ্যা বাড়লো।
নতুন জারি করা কোয়ারেন্টিন নিয়ম অনুযায়ী ১৪টি প্রদেশের এক কোটি ৬০ লাখ মানুষকে ভ্রমণ করতে হলে বিশেষ অনুমতি লাগবে।
প্রধানমন্ত্রী জুজেপ্পে কন্টে দেশ জুড়ে সব ধরণের স্কুল, ব্যায়ামাগার, জাদুঘর, নাইটক্লাব, এবং অন্যান্য জনসমাগম স্থান বন্ধ ঘোষণা করেছেন।
আগামী ৩রা এপ্রিল পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।
নতুন করে সংখ্যা বাড়ার কারণে গত ডিসেম্বরে সংক্রমণ শুরু হওয়া চীনের বাইরে ইতালিতেই সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা রয়েছে। আক্রান্তের দিক থেকে দক্ষিণ কোরিয়াকেও পেছনে ফেলেছে ইতালি যেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭৩১৩ জন।
নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীর প্রধানও রয়েছেন। সালভাতোর ফারিনা বলেন, তিনি সেরে উঠছেন এবং নিজে থেকেই আইসোলেশনে রয়েছেন।
নতুন করে চালু হওয়া কোয়ারেন্টিনের কঠোর পদক্ষেপ দেশটির মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের উপর প্রভাব ফেলেছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা রয়েছে সমৃদ্ধ উত্তরাঞ্চলে যা দেশটির অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।
ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে যেভাবে হাত ধুতে হবে
লম্বার্ডিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর বড় ধরণের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। উত্তরাঞ্চলীয় ওই এলাকায় এক কোটির মতো মানুষ বাস করে। সেখানে আক্রান্তদের হাসপাতালের করিডরে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
“আমরা আমাদের জনগণের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে চাই। আমরা বুঝি যে, এই ব্যবস্থার কারণে ছোট-বড় নানা ধরণের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে,” শনিবার মধ্যরাতে কড়াকড়ি আরোপের সময় দেয়া ভাষণে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী কন্টে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, মানুষ নির্বিঘ্নে লম্বার্ডিতে প্রবেশ বা বেরিয়ে যেতে পারবে না। ওই এলাকার প্রধান শহর মিলান।
একই ধরণের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আরো ১৪টি প্রদেশে: মদেনা, পারমা, পিয়াচেনসা, রেজিও এমিলিয়া, রিমিনি, পেজারো এন্ড উরবিনো, আলেসান্দ্রিয়া, আস্তি, নভারা, ভেরবানো কুজিও ওসোলা, ভারসেই, পাদুয়া, ত্রেবিসো ও ভেনিস।
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এসব এলাকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর।
রবিবার আক্রান্ত এসব এলাকায় কিছু যান চলাচল ছিল। কিছু নিয়মিত ফ্লাইট বাতিল করা হলেও মিলানের মালপেনসা ও লিনাতে বিমানবন্দরে এখনো কিছু ফ্লাইট চলাচল করছে।
যাই হোক, ইতালির জাতীয় বিমান সংস্থা অলইতালিয়া বলেছে, সোমবার থেকে মালপেনসা থেকে সব ধরণের ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হবে এবং লিনাতে শুধু অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু থাকবে। আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল রোম থেকে পরিচালিত হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেডরস আধানম ঘেব্রেয়েসাস ইতালির এমন পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন।
রবিবার পর্যন্ত ইতালির উত্তরাঞ্চলে ৫০ হাজার মানুষকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
গত সপ্তাহে সরকার দেশের সব স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় ১০ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।
অন্যান্য স্থানের অবস্থা কেমন?
বিশ্ব জুড়ে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক লাখ সাত হাজার এবং মৃতের সংখ্যা ৩৬০০ জন।
বেশিরভাগ প্রাণহানি হয়েছে চীনে। কিন্তু রবিবার দেশটি জানিয়েছে যে, জানুয়ারির পর থেকে গতকাল দেশটিতে সবচেয়ে কম সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে দেশটিতে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ধীরে ধীরে কমে আসছে।
ইরান যেখানে চীনের পর সবচেয়ে বেশি প্রাদুর্ভাব আক্রান্ত দেশ, সেখানে ১৯৬ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং ৬৫৬৬ জন সংক্রমিত হয়েছে।
তবে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা এর চেয়ে আরো বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। রবিবার এক সরকারি কূটনীতিকের উদ্ধৃতি দিয়ে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু উত্তরাঞ্চলীয় গিলান প্রদেশেই ২০০ জন মারা গেছে। কিন্তু পরে এই সংখ্যা সরিয়ে নেয়া হয়।
ফ্রান্সে, পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যেও ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। রবিবার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, জাতীয় পরিষদের আরো দুই সদস্য নতুন করে ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে।
এনিয়ে মোট চার জন নির্বাহী সংক্রমণের শিকার হলো। এছাড়া রবিবার ফ্রান্সে ১১২৬ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে, যা একদিনে ১৯% বেশি এবং ইউরোপে ইতালির পর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা।
এক সাথে এক হাজারের বেশি মানুষ জমায়েত হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ফ্রান্স সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রে ৪৭০ জনেরও বেশি মানুষকে কোভিড-১৯ এর কারণে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে।
অন্যান্য যেসব দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে সেগুলো হলো: জার্মানি(৯৩৯), স্পেন(৫৮৯), যুক্তরাজ্য(২৭৩), নেদারল্যান্ডস(২৬৫)। আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, মালদ্বীপ, মাল্টা ও প্যারাগুয়ে-তে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্তের খরব নিশ্চিত করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।