পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। এই একটি মহাজাগতিক বস্তুই পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে প্রায় ৪ লাখ কিলোমিটার দূর থেকে। মহাকাশ জয়ের ক্ষেত্রেও তাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য চাঁদ। এর পরেই মঙ্গল। পৃথিবীর মতো এটাও গ্রহ। ধারণা করা হয়, পৃথিবীর মতো মঙ্গলের বুকেও বহু আগে বইত নদী।
ছিল জীবন ধারণের উপযোগী পুরু বায়ুমণ্ডল। পৃথিবী থেকে গ্রহটির দূরত্ব সাড়ে ৫ (সবচেয়ে কাছে থাকা অবস্থায়) থেকে সাড়ে ২২ কোটি কিলোমিটারের (দূরতম অবস্থায়) মতো। লাল এ গ্রহ নিয়ে আমাদের আগ্রহের শেষ নেই। কেমন হতো যদি চাঁদের জায়গায় মঙ্গল গ্রহ থাকত? একমাত্র উপগ্রহ হিসেবে মঙ্গল পৃথিবীর ওপর কেমন প্রভাব ফেলত? সুনামি, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কি বেড়ে যেত? নাকি নতুন চাঁদের উজ্জ্বল আলোয় শুধু আপ্লুত হতাম আমরা? আসুন, যুক্তির সুতোয় বোনা কল্পনার রথে চড়ে অসম্ভব সেই দৃশ্যপট থেকে ঘুরে আসি।
চাঁদের ব্যাস প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার, মঙ্গলের সাড়ে ৬ হাজারের একটু বেশি। অর্থাৎ আকারের দিক থেকে মঙ্গল চাঁদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।
মঙ্গল পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ হলে তার প্রভাব পড়ত সৌরজগতের এ অংশের ওপর। বাড়ত এর পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা। বর্তমানে লাল এ গ্রহের পৃষ্ঠের প্রায় গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে এর মেরুতে জমা বরফ গলে যেত। সম্ভাবনা আছে, এর ফলে বেরিয়ে আসত ভূ-গর্ভস্থ পানি। মঙ্গল হয়ে উঠত বসবাসের জন্য চমৎকার জায়গা। এ প্রসঙ্গে একটু পরে আবার আসছি।
গঠনগত কারণে চাঁদের ওপরের অংশ অনেকটা ধূসর। ফলে চাঁদে প্রতিফলিত হয়ে রাতের বেলা পৃথিবীতে যে আলো এসে পড়ে, তা আবছা কোমল নীল-সাদা রঙের হয়। চাঁদের জায়গায় মঙ্গল থাকলে জোছনার আলোয় বাড়ত রঙের মিশ্রণ। অনেকটা কমলা আলোয় ঢেকে যেত রাতের পৃথিবী। তা ছাড়া আয়তনে বড় হওয়ায় জোছনা রাতের উজ্জ্বলতা বাড়ত এখনকার চেয়ে প্রায় চার গুণ। এগুলো সবই ভালো দিক।
অন্যদিকে চাঁদ-সূর্যের মহাকর্ষের কারণে পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটা হয়। সূর্যের কিছুটা প্রভাব থাকলেও এখানে মূল খেলোয়াড় চাঁদ। ভর ও আয়তনের কারণে মঙ্গলের মহাকর্ষ শক্তি স্বাভাবিকভাবে চাঁদের চেয়ে বেশি। এটি পৃথিবী উপগ্রহ হলে সেই শক্তি পৃথিবীতে বসে টের পাওয়া যেত। পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেট বা মহাদেশীয় পাতের সক্রিয়তা বেড়ে যেত কয়েক গুণ।
পৃথিবীর উপরিভাগ বেশ কিছু আলাদা খণ্ডে বিভক্ত। এসব খণ্ড ভাসছে নিচের গলিত ম্যাগমার ওপর। এগুলোকে বলা হয় টেকটোনিক প্লেট বা মহাদেশীয় পাত। আমাদের মহাদেশ ও মহাসাগরগুলো রয়েছে এসব টেকটোনিক প্লেটের ওপরে। টেকটোনিকের প্লেটের সক্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার অর্থ এদের নড়াচড়া বেড়ে যাওয়া।
আর এসব প্লেটের নড়াচড়ার কারণে পৃথিবীতে তৈরি হয় ভূমিকম্প, সুনামি, অগ্ন্যুৎপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। টেকটোনিক প্লেটের সক্রিয়তা বাড়ার কারণে এসব দুর্যোগও বাড়ত আশঙ্কাজনক হারে। জোয়ার-ভাটার সময় পানির উচ্চতার হ্রাস-বৃদ্ধি হতো অনেক গুণ বেশি। তবে এসবের মধ্যে টিকে থাকা মানুষের জন্য একদম অসম্ভব হতো না।
বসতি স্থাপনের প্রসঙ্গে ফিরি। কাল্পনিক এ দৃশ্যপটে পৃথিবী থেকে মঙ্গলের দূরত্ব মাত্র ৩ লাখ ৮৫ হাজার কিলোমিটারের মতো। তাই অবধারিতভাবে মানুষ এখানে বসতি স্থাপনের ব্যবস্থা করত। বিজ্ঞানীদের মতে, মঙ্গল আমাদের উপগ্রহ হলে বর্তমান প্রযুক্তিতে মাত্র ৮ বছরের মধ্যেই বসতি স্থাপন সম্ভব হতো সেখানে।
তবে মঙ্গলে বসতি স্থাপনের চেষ্টায় পৃথিবীর শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে হয়তো শুরু হতো নতুন স্নায়ুযুদ্ধ। বসতি স্থাপনের অগ্রদূত হওয়ার গৌরব তো নিছক কম নয়। মহাকাশ জয়ের তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে আবিষ্কার-উদ্ভাবনের গতি বাড়ত, তাতে সন্দেহ নেই। তবে ভয়ংকর লড়াইও বেঁধে যেত এসব নিয়ে। চাঁদ মঙ্গলের মতো বৈচিত্র্যময় হলে এখনও অবশ্য এমন চিত্র দেখা যেত।
মঙ্গল আমাদের উপগ্রহ হলে কিছু সুবিধা হতো নিশ্চয়ই। সঙ্গে কিছু অসুবিধাও হতো। সবমিলিয়ে সৌরজগৎ এখন যে অবস্থায় আছে, সেটাই আসলে আমাদের জন্য সবদিক থেকে সুবিধাজনক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।