জুমবাংলা ডেস্ক: নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যের মধ্যে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। এক পর্যায়ে মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার বিলাশবাড়ি ইউনিয়নের শিবপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় এ ঘটনা ঘটে। ভরা মজলিসে সাবেক সংসদ সদস্য ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীর কাছ থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেয় সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার। এমন ঘটনায় নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও পাওয়া গেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, বর্তমান সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার উত্তেজিত স্বরে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পর একই সারিতে বসে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীর সামনে মাইক্রোফোন ফেলে দিয়ে কেন বক্তব্য দিলেন তার ব্যাখ্যা জানতে চান। তখন আকরাম হোসেন চৌধুরী আবার মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বক্তব্য দিতে গেলে জোর করে কেড়ে নেন ছলিম উদ্দিন তরফদার। এবং উত্তেজিত হয়ে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন তিনি।
যা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত :
ঠিক কী কারণে এমনটা ঘটল বিষয়টি নিয়ে কথা হলে সাবেক সংসদ সদস্য ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ( বিএমডিএ) ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী বলেন, ওইদিন আমাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। প্রতিপক্ষরা ছোট করার জন্য অনেক সময় গালিগালাজ করে। কিন্তু যদি তিনি বুঝতেন, এ গালিগালাজ তাকেই ছোট করবে তাহলে বলত না ।
ড.আকরাম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুটি ভাগ হয়ে গেছে। অথচ সকলেই বলে বিলাশবাড়ি আওয়ামী লীগের ঘাটি। যদি এমনটাই হয়, তাহলে গত নির্বাচনে নৌকা কেন পরাজিত হলো। আমার প্রশ্ন হলো- যেখানে ঘাটি ছিল, তাহলে হঠাৎ করে ভেঙে গেল কেন। তখন উদাহরণ দিয়ে বলি- সত্যিকার অর্থে দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন অনেক সময় আমরা অবহেলা করি। দল নিয়ে চিন্তা করি না। কিন্তু বিরোধী দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন আমাদের অনেক চিন্তা করতে হয়। মরহুম ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী নান্নু ১৭ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তার সময়ে দুই উপজেলায় তেমন উন্নয়ন হয়নি। আমার সময়ে অনেক উন্নয়ন করেছি। উন্নয়ন হচ্ছে আমার সরকারের আমলে, আর বিএনপি সত্য-মিথ্যা বলে মানুষকে জাগ্রত করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেছিলাম- প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকলে মন্ত্রী ও সচিবসহ বিভিন্ন দপ্তর সহযোগিতা করে। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ছলিম উদ্দিন তরফদার মাইক্রোফোন কেড়ে নেন। তাকে আমি বোঝাতে পারিনি এ বক্তব্যের শেষ পয়েন্টটা আসলে কী ছিল। মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে তিনি নানা ধরনের তর্কবিতর্ক শুরু করে দিলেন। তার মনে হয়তো আঘাত লাগায় তিনি এমনটা করেছেন। কিন্তু তাকে কটাক্ষ বা লক্ষ্য করে কিছু বলিনি বা বলতে চাইনি। তিনি আমার প্রতি অবিচার করেছেন এবং লাঞ্ছিত করা হয়েছে সবার সামনে। তিনি হয়তো আমাকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেছিল। আমি ধৈর্য্য ধরে ছিলাম।
কী বলছেন বর্তমান সংসদ সদস্য :
এ বিষয়ে নওগাঁ-৩ (বদলগাছী-মহাদেবপুর) আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার বলেন, আমি সেদিন বলেছিলাম সামনে সম্মেলন উপলক্ষে যে উদ্দেশে বর্ধিত সভা হচ্ছিল সে বিষয়ে আপনি (ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী) কথা বলেন। কিন্তু তিনি বর্ধিত সভার বিষয়ে না বলে, তার সময়ে কি কি উন্নয়ন করেছেন সেসব বিষয়ে কথা বলছিলেন। তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলছিলেন। ওই ইউনিয়নে ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী সিলেকশনে যদি ভুল হয় তাহলে ২০১৪ সালে আপনি নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের পরও কেন আমার কাছে পরাজিত হলেন। এর জবাবটা কে দেবে? একজন ভালো এমপি হতে গেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক বা যোগাযোগ রাখতে হবে। এতে করে মন্ত্রী ও সচিবরা গুরুত্ব দেবেন। এটা দিয়ে তিনি আসলে কী বুঝাতে চেয়েছেন। এ কারণে তাকে ভাষা ঠিক রেখে কথাগুলো বলতে বলেছিলাম। কোন জায়গায় কী বক্তব্য দিচ্ছেন আপনি। জনগণ হচ্ছে ক্ষমতার উৎস ও মালিক। জনগণ চাইলে সম্মান দিয়ে চেয়ারে বসাতে পারে, আবার নামিয়েও দিতে পারে।
মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি সেলিম বলেন, নৌকার জন্য যখন আপনার এতো ভালোবাসা তাহলে মাইক্রোফোন নিয়ে একটু বলেন ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় কোথায় কার জন্য ভোট চেয়েছেন কি না। তার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবেন। তখন তিনি মাইক্রোফোন নিয়ে বললেন- ওই সময় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান থাকায় ভোট চাওয়া সম্ভব হয়নি। তখন আমি মাইক্রোফোন তার কাছ থেকে নিয়ে নেই। এটাই ছিল মূল কথা। তবে মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়ার মতো আসলে ঘটনা হয়নি বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে যদি কোনো সংবাদ হয়, আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কোনো সংবাদ আমরা চাই না।
যা বলছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয়রা :
জাহাঙ্গীর আলম নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, বর্তমান এমপি অযোগ্যতার প্রমাণ দিলেন। তিনি এমপি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। সবার সামনে সাবেক এমপির কাছে থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়া উচিত হয়নি।
ইউসুফ আব্দুল্লাহ নামের স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, এমন ঘটনার ধিক্কার ও নিন্দা জানাই। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি সঠিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
স্থানীয় বিলাশবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেনের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, এটা দলীয় বিষয়। তাই এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু খালেদ বুলু বলেন, ওইদিন অনুষ্ঠানে আমিও উপস্থিত ছিলাম। সাবেক ও বর্তমান এমপির মধ্যে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে সামান্য ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল। পরে ওটা নিরসন হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।