জুমবাংলা ডেস্ক : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গত ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচনের পর আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার দুঃশাসনের প্রকোপ বৃদ্ধির জন্য আরও মরিয়া হয়ে উঠেছে। দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ছিটেফোঁটাও নেই। ভোটারবিহীন অবৈধ ক্ষমতার গরিমায় মন্ত্রীরা জুলুমের তীব্রতা বৃদ্ধির হুমকি দিয়ে জনসমাজে ভীতি ছড়ানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ডামি সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে বলেছেন—‘মিথ্যা তথ্য ও মিথ্যা খবর দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি বন্ধে সংসদে আইন আনা হবে’। তিনি আরও বলেছেন, ‘অলরেডি একটি আইন আছে যেটা হচ্ছে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, আরও কিছু আইন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই সংসদে আসবে’। অর্থাৎ নাগরিকদের ওপর নজরদারি আরও তীব্র হবে, এটি সমগ্র জাতিকে পর্যবেক্ষণে রাখার এক নতুন কালো আইন প্রণয়নের আলামত। মূলত সরকারের দুঃশাসন, লুটপাট ও বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কেউ যাতে কোনো কথা বলতে না পারে সেজন্যই একের পর এক ‘ড্রাকোনিয়ান (কঠোর) আইন’ তৈরি করছে সরকার।
রিজভী বলেন, বর্তমানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ছিটেফোঁটাও নেই। সরকারি সংস্থাগুলোকে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের জন্য নানাভাবে কাজে লাগিয়ে তাদের মিথ্যা জয়গান প্রচার করেও শান্তি পাচ্ছে না তারা। তারপরেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ দেশি ও বিদেশি কিছু মিডিয়ায় তাদের অনেক অপকর্ম প্রকাশিত হয়। সেটিও যাতে প্রকাশ হতে না পারে সেজন্য কিছুদিন আগে সাইবার সিকিউরিটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এবার ডামি নির্বাচনে জনগণ কতৃর্ক প্রত্যাখাত হয়ে মানুষের কন্ঠকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে আইনমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে হুমকি দিচ্ছেন।
রিজভী বলেন, দেশে মতপ্রকাশ বা বাকস্বাধীনতা প্রয়োগের জন্য অনেক মানুষকে যেভাবে মামলা ও জেল-জুলুম ভোগ করতে হয়েছে, এবার জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিবে। ডামি সরকারের বিরুদ্ধে কেউ সমালোচনা করতে পারবে না।
নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কলুষিত করে জবাবদিহিহীন অসীম ক্ষমতাশালি ডামি সরকার মানুষের ন্যূনতম অধিকার দিতে রাজী নয়। এদের কাছে জনগণ নিতান্তই গৌণ, উপেক্ষিত তাচ্ছিল্যের একটি বিষয়। ১৯৭৫ সালে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে সরকার নিয়ন্ত্রিত ৪টি পত্রিকা ছাড়া সকল পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতা দখল করে প্রতিনিয়ত গণবিরোধী কালা-কানুন করছে। আবারও নতুন করে শুরু হয়েছে গ্রেপ্তার, সভা-সমাবেশে পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের হামলা, আক্রমণ চালিয়ে গণতন্ত্রমনা নেতাকর্মীদের রাস্তার ওপর ফেলে শারীরিক অত্যাচার করা। গতকাল গণতন্ত্র মঞ্চের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা চালিয়ে জোনায়েদ সাকিসহ ৫০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করা হয়েছে। এই সরকারি নিষ্ঠুর যাঁতাকলে এ দেশে মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
রিজভী বলেন, সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস দশার কথা বিবেচনা না করে সম্পূর্ণ গণদুশমন আওয়ামী ডামি সরকার আবারও বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করেছে। বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী গত মঙ্গলবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ১লা মার্চ থেকে বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি সর্বনিম্ন ৩৪ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৭০ পয়সা বৃদ্ধি কার্যকর হবে।
তিনি বলেন, জনগণের জীবন-জীবিকার কোনো তোয়াক্কা করেন না এই সরকার। এই কর্তৃত্ববাদী একনায়কের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের তীব্র লড়াই গড়ে তোলার পাশাপাশি গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
এসময় গাইবান্ধা, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা ও ঢাকা জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান রিজভী। একইসঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. মোঃ আবদুল কুদ্দুস, অধ্যাপক ড. শাহিদা রফিক, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, আমিনুল ইসলাম, তরিকুল আলম তেনজিং, কাজী রফিক, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, শ্রমিক দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, স্বেচ্ছাসেবক দলের অধ্যাপক ইমতিয়াজ বকুল, ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ, যুবদলের জাকির হোসেন সিদ্দিকী, কামরুজ্জামান দুলাল, মেহবুব মাসুম শান্ত, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এজমল হোসেন পাইলটসহ অনেকেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।