শেখ জাহিদুজ্জামান : বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে প্রায় দেড় বছর মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান চলাচল বলতে গেলে বন্ধ ছিল। তবে এই সময়ে করোনায় কাজ হারিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় অনেক প্রবাসী দেশে ফিরেছেন শূন্য হাতে। আবার কেউ দেশে এসেছেন পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে। অবশেষে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফের বিমান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ফলে আকাশ পথে যাত্রীর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। আর এই সুবিধাটা কাজে লাগিয়ে বিমানের টিকিটের দাম দুই থেকে তিনগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে এয়ারলাইন্সগুলো। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে প্রবাসীদের।
মঙ্গল (২১ ডিসেম্বর) ও বুধবার (২২ ডিসেম্বর) হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একাধিক প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
সৌদি আরবে কাজ করেন রাসেল। তিনি বলেন, ‘আগে ৪০ হাজার টাকায় সৌদি আরবে যাওয়া-আসা করা যেত। সেই সৌদি আরবে যেতেই এখন লাগছে এক লাখ তিন হাজার টাকা। আমার মতো এমন অসংখ্য প্রবাসীদের কয়েকগুণ বেশি টাকা দিয়েই বিমানের টিকিট কেটে বিদেশে যেতে হচ্ছে। কারণ কর্মস্থলে যেতে না পারলে কাজ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। ফলে বাধ্য আর অনেকটা নিরুপায় হয়েই বেশি টাকা বিমান ভাড়া দিয়ে বিদেশ যেতে হচ্ছে।’
আরেক প্রবাসী আবুল কাসেম। গন্তব্য দুবাই। তিনি বলেন, ‘আমরা দুবাই যাচ্ছি কয়েকজন। আগে যা ভাড়া ছিল তার দ্বিগুণ দিয়ে যেতে হচ্ছে। আগে দুবাই যাওয়ার ভাড়া ছিল ৪৫ হাজার টাকা। বর্তমানে সেই ভাড়া গিয়ে ঠেকেছে ৮১ হাজার টাকা।’
জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা টু রিয়াদ বিমান ভাড়া ছিল ৩০-৪০ হাজার টাকার মধ্যে। কিন্তু বর্তমানে সেই ভাড়া গিয়ে ঠেকেছে এক লাখের উপরে। ঢাকা টু দুবাই রুটে রিটার্ন বিমান ভাড়া ছিল ৪০ হাজার টাকা। সেই ভাড়া এখন ৯০ হাজারে গিয়ে পৌঁছেছে। এছাড়া বাহারাইন, কাতার, কুয়েত, আমিরাতসহ বিভিন্ন রুটে ভাড়া বেড়েছে তিনগুণ পর্যন্ত। যেমন: ঢাকা থেকে আবুধাবি আগে বিমান ভাড়া ছিল ৩৫ হাজার টাকা, সেটা এখন গিয়ে ঠেকেছে ৯০-৯৫ হাজার টাকা। তাও টিকিট মিলছে না। ঢাকা থেকে বাহরাইন আগে বিমান ভাড়া ছিল ৩৫ হাজার টাকা, যা এখন ৭০-৮০ হাজার টাকা। ঢাকা থেকে ওমান বিমান ভাড়া আগে ছিল ৩০ হাজার টাকা, যা এখন ৭০-৭৫ হাজার টাকা। ঢাকা থেকে রিয়াদে আগে বিমান ভাড়া ছিল ৩৫ হাজার টাকা, যা এখন ৯৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। ঢাকা থেকে কাতার আগে বিমান ভাড়া ছিল ৩০ হাজার টাকা, যা এখন ৯০ হাজার টাকায় গিয়ে পৌঁছেছে। তারপরও টিকিট মিলছে না।
মধ্যপ্রাচ্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বাংলাদেশে বিমান, বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলা, এমিরেটস এয়ারলাইন্স, ইতিহাদ এয়ারলাইন্স, ফ্লাই দুবাই, সৌদি অ্যারাবিয়ান, কাতার এয়ারলাইন্স, কুয়েত এয়ারলাইন্স ও ওমান এয়ারলাইন্স। বিমানের টিকিটের দাম বাড়া নিয়ে এই সংস্থাগুলোর কেউই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমানবলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের যতগুলো এয়ারলাইন্স আছে সবগুলোর সঙ্গে বসে আলোচনা করেছি। বিষয়টি আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি। এছাড়া ভাড়া সবমন্বয় করতেও অনুরোধ করেছি। এমনকি বেশি ভাড়া নেওয়ায় আমরা কঠোর হতে পারি- সেই কথাও তাদের জানিয়েছি। আমরা আশা করছি ভাড়া সমন্বয় হবে। আমরা এ বিষয়ে আরও কাজ করছি।’
এ বিষয়ে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের বিমান ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ঠ এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমরা ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়েও এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমরা চাচ্ছি, ভাড়াটা যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে। কারণ প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য কষ্টের হয় এমন কিছু আমরা চাই না।’ ইতোমধ্যে এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে বসে ভাড়া সমন্বয় বিষয়ে আলোচনা করতে সিভিল এভিয়েশনকে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি। সূত্র : সারাবাংলা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।