জুমবাংলা ডেস্ক : মধ্যরাতে থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েছিলেন বোচাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আফসার আলী। কিন্তু সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। মৌখিকভাবে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। এরপর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মামলায় তাঁকে সেখানেই গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল শুক্রবার রাতে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ থানা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল দিবাগত রাত সোয়া ১২টায় দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ থানায় ছাত্র–জনতার পক্ষ থেকে ফয়সাল মোস্তাক (২৭) বাদী হয়ে ওই মামলা করেন। মামলায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার হুকুমদাতা হিসেবে মামলার এজাহারভুক্ত ২ নম্বর আসামি উপজেলা চেয়ারম্যান আফসার।
এ মামলায় দিনাজপুরের বিরল-বোচাগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে।
থানা সূত্রে জানা গেছে, বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ নিয়ে থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান। থানায় আগে থেকেই উপস্থিত ছিল বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল। উপজেলা চেয়ারম্যানকে দেখে তাঁরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এ সময় শিক্ষার্থীদের হুমকি দেন তিনি। খবর পেয়ে কয়েক শ শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে চেয়ারম্যানকে ঘিরে ধরে। শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগণের তোপের মুখে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের মৌখিক ঘোষণা দেন আফসার। পরে শিক্ষার্থীদের মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
বোচাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আফসার আলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদেও রয়েছে। এবারই প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন।
চেয়ারম্যানের নামে করা ওই মামলার বাদী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল মোস্তাক। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সেতাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করে। এ সময় সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও উপজেলা চেয়ারম্যান আফসার আলীর নির্দেশে ছাত্রলীগের কিছু নেতা–কর্মী মিছিলে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। মারধর করে, গুম করে ফেলার হুমকি দেয় এবং মেয়েদের শ্লীলতাহানি করে। তাদের ভয়ে আহত শিক্ষার্থীরা এলাকার কোনো চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে পারেননি।
এ মামলায় সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও দিনাজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব আব্দুল বাশারসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরও ৭০–৭৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গতকাল রাতের ঘটনার বর্ণনায় মামলার বাদী ফয়সাল মোস্তাক বলেন, ‘আমরা থানায় ওসির সঙ্গে দেখা করতে যাই। এ সময় খবর পাই উপজেলা চেয়ারম্যান সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে থানায় আসছেন। পরে আমরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এ সময় তিনি আমাদের হুমকি–ধমকিও দেন। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমি একটি মামলা করি। সেই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
এ বিষয়ে বোচাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক মোহাম্মদ রাসেল বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান থানায় এসেছিলেন। এ সময় থানায় আগে থেকেই উপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের কথা-কাটাকাটি হয়। পরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে তিনি মৌখিকভাবে পদত্যাগ করেন। শিক্ষার্থীদের করা একটি মামলায় চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।