নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: পরিবারের বাবা মা ভাই বোনদের সুখ শান্তির কথা ভেবে গত বছরের ৮ মার্চ (১৬ রমজান) ওভারসিজের মাধ্যমে ফ্রি ভিসায় সৌদি আরবে পাড়ি জমান মো. মেহেদী হাসান। সেখানে তিনি ইলেকট্রনিক টেকনিশিয়ান হিসাবে কাজে যোগ দেন। মাসে বেতন পাচ্ছিলেন দেড় লাখ টাকা। পর পর দুই মাস তিনি দেশে টাকাও পাঠিয়েছেন। বাবা মা ভাই বোন পরিবারের সকলের প্রিয় মেহেদী আজ দেশে আসছেন।
কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ১৪ মাস পর পিতা মাতার আদরের সন্তান, প্রাণের প্রিয় ভাই দেশে আসলেও তার পরিবারে নেই আনন্দ। পুরো পরিবার ও আশপাশের সকলের মাঝে প্রিয়জন হারানোর বেদনা। চারপাশে শোকের মাতম। আজ মেহেদী নয়, আসছে মেহেদীর মরদেহ।
পরবাসে মৃত্যুবরণকারী মো: মেহেদী হাসান (২২) গাজীপুর মহানগরীর দেশীপাড়া এলাকার মো. উসমান আলীর ছোট ছেলে।
আদরের ধন, বুকের মানিকের মরদেহ আনতে বিমান বন্দর গেছেন মেহেদীর পিতা মো. উসমান আলী (৭০)। পৃথিবীতে একজন পিতার কাছে সবচেয়ে ভারী যে বস্তু, তা হলো নিজের কাধে সন্তানের মরদেহ। তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বস্তুকে পরম মমতায় বাড়ীতে ফিরিয়ে আনতে বিমান বন্দর গিয়ে অপেক্ষা করছেন।
প্রিয় সন্তানের লাশের জন্য তার এ অপেক্ষা শুধু আজকের নয়, দীর্ঘ সাড়ে চার মাস তিনি ও তার পরিবার মরদেহের জন্য অপেক্ষা করছেন। পিতা মাতার আদরের সন্তান, বোনের প্রিয় ভাইয়ের মরদেহের জন্য স্বজনদের এ অপেক্ষা আজ শেষ হবে, প্রিয় মেহেদীকে চিরদিনের জন্য শেষ বিদায়ের মাধ্যমে।
হতভাগ্য পিতা মো. উসমান আলী বিমান বন্দর ছেলের মরদেহ আনতে যাওয়ার আগে জানান, ছোট থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন মেহেদী। গত বছরের ৮ মার্চ (১৬ রমজান) ওভারসিজের মাধ্যমে ১২ লাখ টাকা খরচ করে ফ্রি ভিসায় সৌদি আরবে যান মেহেদী। সেখানে তিনি ইলেকট্রনিক টেকনিশিয়ান হিসাবে কাজে যোগ দেন। ভালো বেতন ছিল তার। ব্যয়ভারও বহন করতেন পরিবারের। তিনি ছিলেন পরিবারের সকলের প্রিয় মানুষ।
তিনি দীর্ঘস্বাস নিয়ে বলেন, গত বছরেই ১১ডিসেম্বরের কাজ করার সময় ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আঘাত পায় মেহেদী। দুর্ঘটনার পর ৩দিন জ্ঞান ফিরেনি তার। পরে ২৮ দিন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৬ জানুয়ারি মারা যায় মেহেদী।
নিহত প্রবাসীর বড় বোন শারমিন আক্তার বলেন, চিকিৎসা নিয়ে আমার ভাই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেছিল। কিন্তু তার পর একদিনে ৩বার স্টোক হয় তার। তারপর আর সুস্থ হয়নি ভাই। আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পর আমরা অনেক চেষ্টা করেছি ভাইয়ের মরদেহ দেশে আনতে। একটি বার প্রিয় ভাইয়ের মুখটি দেখতে। অবশেষে সৌদি প্রবাসী মামাতো ভাই আজিজুলের সহায়তায় মরদেহটি দেশে আনা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকালে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরবে মো. মেহেদী হাসানের মরদেহ। বিকাল ৩টার দিকে তার লাশটি দেশে ফিরলে প্রয়োজনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পরে মরদেহ বাড়ীতে আনার পর জানাজার নামাজ শেষে পারিবারীক কবরস্থানে দাফন করার কথা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।