জুমবাংলা ডেস্ক : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) মরদেহ বহনকারী কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা মাইক্রোবাস সুবিধা নেই। যে কারণে একটি সিন্ডিকেট লাশ বা রোগী আনা নেওয়ার কাজে মাইক্রোবাস বা অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা দিয়ে হাসপাতাল ও সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ফেলেছে। চাঁদা আদায় বা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকে সিন্ডিকেটটি।
চাঁদা বা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে অ্যাম্বুলেন্স বা মাইক্রোবাস মালিকদের সিন্ডিকেটটির সদস্যদের অবস্থা এখন পোয়াবারো। আজ সোমবার দুপুরে এই সিন্ডিকেটটির ৭ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। জানা গেছে, দুস্থ, সাধারণ, নিম্নবিত্ত পরিবারকে চাহিদা মোতাবেক বা জোর করে অ্যাম্বুলেন্স বা মাইক্রোবাস সুবিধা দিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে তারা। গতকাল রোববার এক রোগীর মরদেহ বহন নিয়ে মৃতের স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্তি অর্থ আদায়ের পর মূল বিষয়টি সামনে আসে।
আটক সাত সদস্য হলেন মো. আব্দুল্লাহ (৩২), মো. রাজন (৩৫), মো. বাদশা (৪০), এমদাদুল হক (৪০), মো. বিপ্লব (৫০), জাহিদ হাসান (২৬) ও জানারুল ইসলাম (২৮)। তারা রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেন।
দুপুরে এসব তথ্য জানান রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস। তিনি আরও জানান, রোববার বিকেলে মহানগরীর লক্ষীপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয়নাল আবেদীন নামে মেহেরপুরের এক ব্যক্তি মারা যান। স্বজনরা নিজস্ব গাড়িতে করে মরদেহটি নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় আব্দুল্লাহ ও রাজন তাদের বাধা দেন। তারা ওই মরদেহ আটকিয়ে চাঁদা দাবি করে বলেন, এখান থেকে কোনো মরদেহ নিজ এলাকায় নিয়ে যেতে হলে তাদের মাইক্রোবাসে করেই নিয়ে যেতে হবে। তা না হলে মরদেহ বহনকারী মাইক্রোটির জন্য স্থানীয় সমিতিকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে। এভাবে তারা মরদেহ আটকে রাখেন। পরে বাধ্য হয়ে মৃত ব্যক্তির স্বজনেরা আরএমপির গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) খবর দেয়। এরপর প্রথমে আব্দুল্লাহ ও রাজনকে আটক করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্য পাঁচজনকে আটক করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশবহনকারী সরকারি কোনো অ্যাম্বুলেন্স নেই। এই সুযোগে লাশবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন থেকে মৃতব্যক্তির স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। এমনকি বাহির থেকে যদি কেউ লাশ বহনকারী গাড়ি নিয়ে আসে সেক্ষেত্রে তারা মৃতব্যক্তির স্বজনদের থেকে চাঁদা আদায় করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহীর এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে আমি পর্যবেক্ষণ করছি, মৃতব্যক্তিকে নিয়ে তারা যা করছে তা খুবই অমানবিক। এটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি ভালোভাবে দেখা উচিৎ। এই লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স চক্রের লাগামহীন অমানবিকতা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনালের শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘আমার জানামতে সরকারি কোনো হাসপাতালে লাশবাহী সরকারি কোনো অ্যাম্বুলেন্স থাকে না। তবে লাশবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আমরা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যেই রামেক হাসপাতালের ৮টি গেটের পাঁচটি বন্ধ করে দিয়েছি। এ ছাড়া বাহিরপথ ও প্রবেশপথ আলাদা করা হয়েছে।’
শামীম ইয়াজদানী আরও বলেন, ‘লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স কিংবা রোগী বহণকারী অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে আমরা পরিকল্পনা করেছি। ২০-৩০টি অ্যাম্বুলেন্সকে রামেক হাসপাতাল কর্তৃক বিশেষ স্টিকার দেওয়া হবে। শুধু তারাই লাশ কিংবা রোগী বহন করতে পারবে। আর রামেক হাসপাতাল চত্বরে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়ানোর জায়গা থাকবে। আমরা কিলোমিটার প্রতি ভাড়াও নির্ধারণ করে দেব। যাতে করে অতিরিক্ত ভাড়া কেউ আদায় করতে না পারে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।