সাধারণত ডিম পাড়ার আগে স্ত্রী মশাদের প্রচুর রক্ত খাওয়ার দরকার হয়। তাদের পুষ্টির জন্য এটা জরুরি। রক্ত খেলে একটি মশা প্রচুর ডিম পাড়তে পারে, কিন্তু রক্ত খেতে না পারলে সামান্য কয়েকটি ডিম পাড়ে। বংশবিস্তারের জন্যই তাদের রক্ত খেতে হয়। কিন্তু মশা খুব ভালোভাবেই জানে যে সে হুল ফোটালে মানুষের হাতের চাপড় খেয়ে মরতে হবে। প্রথমে আস্তে করে আমাদের হাতে–পায়ে বসে, এরপর প্রথমে তাদের হুল দিয়ে কিছু ঘন তরল ত্বকের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়।
এটা আসলে একধরনের ব্যথানাশক তরল, যা ত্বকের কিছুটা অংশ কিছুক্ষণের জন্য অবশ করে রাখে। এরপর পেট ভরে রক্ত শুষে নিয়ে উড়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আমাদের ত্বকের ওই স্থানের অনুভূতি ফিরে আসে আর আমরা টের পাই, মশা কামড়াচ্ছে। লাগাই চাপড়। কিন্তু ততক্ষণে মশা তো হাওয়া, উড়ে চলে গেছে।
এ জন্যই অধিকাংশ সময়ই আমরা হাতে চাপড় দিয়ে মশা মারতে পারি না। এখন আসছি কেন ফুলে যায় এবং ওই জায়গা চুলকায়। ওই যে বললাম, মশা প্রথমেই কিছু ব্যথানাশক তরল ত্বকে ঢোকায়। এই তরলের ঝাঁজটা কিছু সময় পরেই শুরু হয়। ফলে ত্বকের ওই জায়গা একটু চুলকায় ও ফুলে যায়।
মশার আচরণ নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা হাত দিয়ে অনবরত মশা মারার চেষ্টা করেন, তাঁদের গায়ের গন্ধ ও অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয় মশারা মাত্র ১৫ মিনিটেই বুঝে যায়। তখন আর তাঁকে ঘাঁটায় না। মানে তাঁদের গায়ে হুল ফোটানোর চেষ্টা করে না। বেশি বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ মশাকে আকৃষ্ট করে।
অন্তঃসত্ত্বা নারীরা বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ ঘটান। তাই মশারা তাঁদের কামড়াতে বেশি আগ্রহী। মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া থেকে চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস—কত বিপজ্জনক অসুখ-বিসুখই না হয়। মশার কামড়ে ম্যালেরিয়ার ভয় তো আছেই, আছে ডেঙ্গুরও ভয়। এখন এসেছে জিকা ভাইরাসের ভয়। গত আগস্টে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে যে রিও সামার অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হলো, সেটাও প্রায় অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল
এই ভাইরাসের কারণে। অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সেই আশঙ্কা দূর করেছে। অলিম্পিক ভালোভাবেই হয়ে গেছে। এডিস ইজিপটি (Aedes aegypti) এবং এইডিস আলবোপিকটাস (Aedes albopictus) প্রজাতির মশার মাধ্যমে জিকা ভাইরাস ছড়ায়।
রক্ত চোষার সময় মশা তার শুঁড়ের সাহায্যে লালা ছড়িয়ে দেয়, যেন রক্ত জমাট না বাঁধে। তাদের লালায় যে প্রোটিন থাকে, তা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা শনাক্ত করে বহিরাগত শত্রু হিসেবে তাকে আক্রমণ করে। এ কারণে আমরা মশার কামড়ে চুলকানি অনুভব করি। এডিস মশা সহজেই দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। কারণ, ওরা পেছন দিক থেকে এসে হাতের কনুই বা পায়ের গোড়ালিতে হুল ফোটায়। এসব মশা সাধারণত খুব ভোরে বা সন্ধ্যায় কামড়ায়।
জোরে ফ্যান চালিয়ে ঘুমালে বা ফ্যানের বাতাসে বসে কাজ করলে মশারা সহজে কাছে আসতে পারে না। বাতাসের তোড়ে দূরে সরে যেতে বাধ্য হয়। আর তা ছাড়া, ফ্যানের বাতাসে আমাদের প্রশ্বাসের সঙ্গে বেরিয়ে আসা কার্বন-ডাই-অক্সাইডও দূরে চলে যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।