আমাবস্যার রাত, গভীর অন্ধকার। আপনি বসে আছেন একটা নির্জন মরুভূমিতে। হঠাৎ শুরু হলো মেঘের শক্তিশালী গর্জন। কী, ভয় পাবেন? হয়তো খুব একটা না? যদি দুটি কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোলের সংঘর্ষ হয়? যদি সূর্য তার সব শক্তিকে ১ সেকেন্ডের মধ্যে নিঃসরণ করে দেয়? সেটা অবশ্যই ভয়ের কিছু হতে পারে, যদি আপনি কৃষ্ণগহ্বরের অথবা সূর্যের কাছাকাছি অবস্থান করেন। আপনি হয়তো নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রেখে সেই সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইবেন। আর শুনতে চাইবেন সেই মহাজাগতিক সংগীত। সেই সঙ্গে আপনার থাকবে মহাকাশ নিয়ে যত সব প্রশ্ন।
কিছুটা এমনই ঘটেছিল প্রায় ১৩০ কোটি বছর আগে। আমাদের সূর্যের ৩৬ গুণ এবং ২৯ গুণ ভরের দুটি ব্ল্যাকহোলের সংঘর্ষে তৈরি হয়েছিল একটি নতুন ব্ল্যাকহোল। এই নতুন ব্ল্যাকহোলের ভর ছিল সূর্যের ৬২ গুণ। ৩৬ + ২৯ = ৬৫, তাহলে বাকি ভরের কী হলো? সূর্যের ৩ গুণ ভরের সমান ভর মহাকর্ষীয় তরঙ্গ (Gravitational Wave) রূপে হারিয়ে যায়।
হারানো এই শক্তির পরিমাণ ছিল কোনো এক ক্ষণে মহাবিশ্বের সব উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং ছায়াপথ যে পরিমাণ শক্তি প্রদান করে, তার চেয়ে বেশি। সেই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ১৩০ কোটি আলোকবর্ষ পথ পেরিয়ে ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পৃথিবী অতিক্রম করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত লাইগো ডিটেক্টরে (যন্ত্র) এই তরঙ্গ ধরা পড়ে এবং সেটি এক সেকেন্ডের অর্ধেকেরও কম সময় স্থায়ী হয়।
লাইগো মানে হচ্ছে লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল-ওয়েভ অবজারভেটরি (Laser Interferometer Gravitational-Wave Observatory-LIGO)। এটাই হলো মহাকর্ষীয় তরঙ্গের প্রথম প্রত্যক্ষ শনাক্তকরণ। কয়েক দশক ধরে অনুসন্ধানের প্রথম সাফল্য। আর এটাও ছিল দুটি ব্ল্যাকহোল সমবেত হওয়ার প্রথম পর্যবেক্ষণ, যা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। আর সেদিন থেকে ব্ল্যাকহোল নিয়ে সবার কৌতূহল অনেক গুণ বেড়ে যায়।
মহাকর্ষীয় তরঙ্গ হচ্ছে স্থান-কালের নিজস্ব তরঙ্গ, অর্থাৎ স্থান-কালের সংকোচন এবং প্রসারণের কারণ। ১৯১৬ সালে আইনস্টাইন তার আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বে এই তরঙ্গের অস্তিত্বের কথা বলেছিলেন। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ত্বরিত ভর থেকে তৈরি হয় এবং আলোর গতিতে চলে।
এমনকি এই তরঙ্গ আপনার এবং আমার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। তারা আমাদের প্রসারিত এবং সংকুচিত করে, কিন্তু খুবই অতি ক্ষুদ্র পরিমাণে। যখন নক্ষত্রের (Star) পারমাণবিক জ্বালানি ফুরিয়ে গিয়ে কোরের (Core) বিস্ফোরণ হয় অথবা ব্ল্যাকহোলের সংঘর্ষের মতো ভয়ানক ঘটনা ঘটে, তখন অনেক শক্তিশালী মহাকর্ষীয় তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। যেমন কক্ষপথে ঘুরতে থাকা এক জোড়া ব্ল্যাকহোল মহাকর্ষীয় তরঙ্গ হিসেবে ধীরে ধীরে শক্তি হারিয়ে একে অপরের কাছে আসতে থাকে।
যখন তারা সংঘর্ষে মিলিত হয়, তখন সবচেয়ে শক্তিশালী তরঙ্গ নির্গত হয়। উত্স থেকে যতই দূরত্বে যেতে থাকে, তরঙ্গের আকার (Amplitude) ততই কমতে থাকে এবং মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ভ্রমণপথে বস্তুর সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না। সুতরাং মহাকর্ষীয় তরঙ্গগুলো তাদের উত্স সম্পর্কে আমাদের সঠিক তথ্য প্রদান করে। তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের ক্ষেত্রে সেটা সাধারণত সম্ভব হয় না, কারণ এরা বস্তুর সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। তাই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করা মহাকাশবিজ্ঞানের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।