ধরুন, আপনি একজন দক্ষ নভোচারী। বেশ কয়েকবার মহাকাশ ভ্রমণে গিয়েছেন। এই মূহূর্তে আপনাকে পাঠানো হচ্ছে প্রায় অপরিচিত একটা গ্রহে। মঙ্গল গ্রহই ধরে নিই। যাওয়ার পথে দূর্ভাগ্যবশত আপনার নভোযান ধ্বংস হয়ে গেল। স্পেসস্যুট নিয়ে কোনোভাবে মহাকাশে ভেসে আছেন। ফিরতে চাইছেন পৃথিবীতে। ধরেই নিচ্ছি, মহাকাশে সাঁতার কাটার মতো কোনো প্রযুক্তি আপনার স্পেসস্যুটে আছে। চাইলেই আপনি সাঁতার কাটার মতো হাত-পা নেড়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারবেন।
স্পেসস্যুটের পকেটে আছে একটা কম্পাস। ওটা ব্যবহার করে কি ফিরতে পারবেন পৃথিবীতে? কম্পাসের কাঁটা কি পৃথিবীর মতো মহাকাশেও উত্তর দিকে মুখ করে থাকবে? বিষয়টা একটু জটিল। সহজভাবে বোঝার চেষ্টা করি।
পৃথিবীতে কম্পাস এক সময় অত্যাবশ্যক হতিয়ার ছিল, এ কথায় কোনো দ্বিধা নেই। ৮০০ বছরেরও বেশি সময় কম্পাস ব্যবহার করে মানুষ পথ চিনেছে, নতুন পথ খুঁজে বের করেছে। বলতে পারেন, এই যন্ত্রের সাহায্যেই আমরা পৃথিবীর নানা প্রান্তে পৌঁছাতে পেরেছি। এখন প্রযুক্তি উন্নত হয়েছে, সবার স্মার্টফোনে আছে গুগল ম্যাপ।
ফলে প্রায় শেষ হয়ে গেছে কম্পাসের ব্যবহার। কিন্তু প্রযুক্তি যেমন উন্নত হয়েছে তেমনি পৃথিবী ছাড়িয়ে মহাবিশ্বে বিচরণ শুরু করেছি আমরা। তাই প্রশ্ন ওঠে, পৃথিবীর মতো মহাকাশেও, অর্থাৎ পৃথিবীর বাইরেও কম্পাস সমান গুরুত্বপূর্ণ? মহাকাশেও কি কম্পাস ব্যবহার করে যাওয়া যাবে নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্যে?
এ প্রশ্নের একটা সহজ উত্তর দিয়েছেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের গ্রহবিষয়ক বিজ্ঞানী জ্যারেড এসপ্লি। তিনি বলেন, ‘মহাকাশে একটা কম্পাস বিভিন্ন জিনিস পরিমাপ করবে। আসলে কি পরিমাপ করবে, তা নির্ভর করে আপনি মহাকাশের কোথায় আছেন তার ওপর।’
জ্যারেডের কথাটা আরেকটু সহজভাবে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, কম্পাস মহাকাশে অবশ্যই কাজ করবে। তার মানে এই নয় যে, ওটা আপনাকে পৃথিবীর দিকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। আপনি যখন পৃথিবীর ২ লাখ ৩০ হাজার মাইলের বাইরে চলে যাবেন, তখন কম্পাস আর পৃথিবীকে চিনবে না। কেন চিনবে না সে প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি। বরং মহাকাশের যে জায়গায় কম্পাসটি থাকবে, সেখানকার তুলনায় সবচেয়ে শক্তিশালী চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের উত্তর মেরু নির্দেশ করবে কম্পাসটি।
জানেন নিশ্চয়ই, কম্পাসের কাঁটা সবসময় উত্তর দিকে মুখ করে থাকে। মহাকাশেও কম্পাসটি কাছের সবচেয়ে শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের উত্তর দিকে মুখ করে থাকবে। দুটি কাঁটার একটা উত্তরদিকে মুখ করে থাকলে অন্যটা নিশ্চয়ই দক্ষিণমুখী হবে। কম্পাস সবসময় উত্তরমুখী হয়ে থাকে কারণ কম্পাস নিজেও একটা চুম্বক।
আসলে পৃথিবীতে উত্তর দিকে চুম্বকের দক্ষিণ মেরু রয়েছে। সেই দক্ষিণ মেরুর আকর্ষণে কম্পাস কাঁটা উত্তরমুখী হয়ে থাকে। পৃথিবীর চারপাশে রয়েছে অদৃশ্য ভূচৌম্বক ক্ষেত্র। পৃথিবী নিজ অক্ষরেখার চারপাশে সব সময় ঘুরছে। এই ঘূর্ণনের সময় পৃথিবীর কেন্দ্রের তরল লোহা, নিকেলসহ আরও কিছু আকরিকের ঘূর্ণনের ফলে সৃষ্ট বৈদ্যুতিক চার্জ ভূচৌম্বকক্ষেত্র সৃষ্টি করে। এই চৌম্বক ক্ষেত্রের দক্ষিণ মেরু পৃথিবীর ভৌগোলিক উত্তর মেরুর প্রায় কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। এর আকর্ষণেই কম্পাস কাঁটা সব সময় পৃথিবীর উত্তর–দক্ষিণমেরু বরাবর থাকে।
আগেই বলেছিলাম, পৃথিবীর ২ লাখ ৩০ হাজার মাইলের বাইরে চলে গেলে কম্পাস আর পৃথিবীকে চিনবে না। কারণ, পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র ওই ২ লাখ ৩০ হাজার মেইল বা ৩ লাখ ৭০ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। শুরুতে নভোযান ধ্বংসের যে কল্পনা করেছিলাম, তা যদি পৃথিবীর এই দূরত্বের মধ্যে হয়, তাহলে আপনি কম্পাসের সাহায্যে পৃথিবীতে ফিরতে পারবেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত এর বাইরে চলে গেলে কম্পাস আর পৃথিবী নামের গ্রহটি চিনতে পারবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।