মহাকাশে কাঠের তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট পাঠানোর পরিকল্পনা করছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এবং জাপান এরোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি জাক্সা। মঙ্গোলিয়ার কাঠের তৈরি এ স্যাটেলাইটের নাম লিগনোস্যাট। এটি আকারে একটি গড়পড়তা কফি মগের সমান। পৃথিবীর কক্ষপথে ২০২৪ সালে এটি পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি।
মহাশূন্যে কাঠ পঁচে না বা নষ্ট হয় না। কিন্তু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় এটি আগুনে পুড়ে মিহি ছাইয়ের কণায় পরিণত হবে। ভবিষ্যতের মহাকাশ গবেষণার জন্য এটি এক দারুণ কার্যকর বায়োডিগ্রেডিবল উপাদান। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে এ বছর শুরুর দিকে কাঠের উপযোগিতা সফলভাবে যাচাই করা হয়। ফলে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষামূলকভাবে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত বলে মনে করছেন।
কাঠের মোট তিনটি নমুনা পরীক্ষা করা হয় মহাকাশ স্টেশনে। মহাশূন্যে বাতাস না থাকলেও আছে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ও মহাজাগতিক রশ্মির মুক্ত বিচরণ। তাপমাত্রা সেখানে ভীষণ ঠাণ্ডা। এক কথায় চরম প্রতিকূল পরিবেশ। এমন পরিবেশে কাঠ দশ মাস রাখার পরও পচন বা বিকৃতি দেখা যায়নি। এ বছর মে মাসে দেওয়া এক বিবৃতিতে গবেষকেরা এমনটা জানিয়েছন।
কাঠ নির্বাচনের জন্য বিজ্ঞানীরা নমুনা হিসেবে নিয়েছিলেন মঙ্গোলিয়া, চেরি এবং বার্চ। পরীক্ষার জন্য টুকরোগুলো আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের একটি মুক্ত স্থানযুক্ত মডিউলে রাখা হয়েছিল। তিনটি কাঠই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু মঙ্গোলিয়া কাঠ উৎপাদনের সময় ভাঙার সম্ভাবনা কম। তাই এই কাঠই নির্বাচন করা হয়।
বর্তমানে মহাকাশ বর্জ্যের পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার ৪৪০ মেট্রিক টনেরও বেশি। বিভিন্ন রকেটের অকার্যকর অংশ এবং নষ্ট কৃত্রিম উপগ্রহগুলো ঘুরছে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে। মহাকাশের এসব আবর্জনাকে মহাকাশ বর্জ্য বলা হয়। এসব আবর্জনার বড় একটা অংশ অ্যালুমিনিয়াম ও টাইটানিয়ামের তৈরি। চকচকে ধাতুর কারণে পৃথিবীর বড় এক অঞ্চলের রাতের আকাশ প্রায় ৯ শতাংশ বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ঘটে আলোক দূষণ। অতিরিক্ত উজ্জ্বলতার কারণে পৃথিবী থেকে মহাকাশ পর্যবেক্ষণেও সমস্যা হয়।
ধাতু ব্যবহার করে মহাকাশযান বানানো ব্যয়বহুল। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন, কিংবা মানুষবাহী নভোযানের জন্য তা ক্ষতিকর। কোনো কারণে ধাতব মহাকাশযানের অংশ পৃথিবীতে ঢুকে পড়লে, তা পৃথিবীর মানুষের জন্যও ক্ষতির কারণ হতে পারে। লিগনোস্যাটের মতো কাঠের তৈরি মহাকাশযান এ সমস্যার সমাধান হতে পারে। তাত্ত্বিকভাবে এটা বর্তমান স্পেসজাঙ্কের তুলনায় কম ক্ষতিকর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।