ধর্ম ডেস্ক : আল্লাহ তাআলা মানবজাতি সৃষ্টি করে এমনিতেই ছেড়ে দেননি, বরং তাদের দ্বিনের ওপর অটল ও অবিচল রাখার জন্য যুগে যুগে প্রেরণ করেছেন অসংখ্য নবী-রাসুল। এ ধারাবাহিকতায় সর্বশেষে প্রেরণ করেছেন আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে। অন্যান্য নবী-রাসুল থেকে তাঁর রয়েছে কিছু ব্যতিক্রমী ও অনন্য বৈশিষ্ট্য।
বিশ্বনবী : হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে হজরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত যত নবী-রাসুল এসেছেন, তাঁরা ছিলেন গোষ্ঠী, এলাকা ও জাতিকেন্দ্রিক। গোটা বিশ্বের দায়িত্ব দিয়ে তাঁদের প্রেরণ করা হয়নি। একমাত্র আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে আল্লাহ তাআলা প্রেরণ করেছেন বিশ্বনবী হিসেবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের রহমতস্বরূপ প্রেরণ করছি।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)
আরো ইরশাদ করেছেন, ‘হে রাসুল (সা.)! আপনি বলুন, হে মানবজাতি! আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর প্রেরিত রাসুল।’ অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘আমি আপনাকে গোটা মানবের কাছে সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি।’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ২৮)
শেষ নবী : আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে শেষ জামানায় সর্বশেষ নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। তাঁর পরে আর কোনো নবী আসবেন না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘মুহাম্মদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন। বরং তিনি আল্লাহর রাসুল ও সর্বশেষ নবী।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪০)
সর্বশ্রেষ্ঠ নবী : আমাদের রাসুল (সা.) হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল। রাসুল (সা.) স্বয়ং বলেছেন, ‘আমি বিচার দিবসে আদম সন্তানের সর্দার হব। তবে এতে আমার অহংকার নেই।’ (তিরমিজি)
চিরন্তন মুজিজা : আল্লাহ প্রত্যেক নবী-রাসুলকে কমবেশি মুজিজা তথা অলৌকিক ক্ষমতা প্রদান করেছেন। তাঁরা দাওয়াতি কাজ করতে গিয়ে প্রয়োজনে এ ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন, যাতে মানুষ বুঝতে পারে যে তিনি আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত। আমাদের রাসুল (সা.) ছাড়া অন্য নবী-রাসুলদের মুজিজা তাঁদের জীবদ্দশায়ই বর্তমান ছিল। তাঁদের ওফাতের পর তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। হজরত মুসা (আ.)-এর লাঠি, হজরত সালেহ (আ.)-এর উষ্ট্রী এবং হজরত নুহ (আ.)-এর নৌকা এখন আর নেই। তাঁদের কাছে প্রেরিত কিতাব অবিকৃত অবস্থায় নেই। কিন্তু আমাদের রাসুল (সা.)-এর মুজিজা চিরন্তন। তাঁর ওফাতের পরও তাঁর অনেক মুজিজা এখনো বিদ্যমান এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। তাঁর প্রধান মুজিজা হলো কোরআন মাজিদ।
সর্বোত্তম আদর্শ : মহান আল্লাহ আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে সর্বোত্তম আদর্শ দিয়ে প্রেরণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে যাঁকে ‘উসওয়ায়ে হাসানা’ বলা হয়েছে। মহানবী (সা.)-এর গোটা জীবন সব স্তরের মানুষের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘অবশ্যই তোমাদের প্রত্যেকের জন্য রাসুল (সা.)-এর মধ্যেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ২১)
সর্বোত্তম চরিত্র : আল্লাহ তাআলা মানুষের মধ্য থেকেই যাচাই করে তাঁর রাসুলকে সর্বোত্তম চরিত্র দান করেন। তাঁর পুরো জীবনে হাজারো উত্তম চরিত্রের সমাবেশ ঘটেছে। তাঁর উত্তম চরিত্রের কথা ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর অবশ্যই আপনি মহান চরিত্রের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছেন।’ সাহাবায়ে কিরাম উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.)-কে রাসুল (সা.)-এর চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করলে হজরত আয়েশা (রা.) বললেন, ‘তোমরা কি কোরআন পাঠ করো না? জেনে রাখো! গোটা কোরআনই হলো মহানবী (সা.)-এর চরিত্র।’
রাসুল (সা.) কোরআনেরই জীবন্ত প্রতিচ্ছবি ছিলেন। তিনি জীবনের সব ক্ষেত্রে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন বাস্তবায়ন করে উম্মতকে দেখিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তোমার সঙ্গে যে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তুমি তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করো। তোমার প্রতি যে জুলুম করে, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। তোমাকে যে বঞ্চিত করেছে, তুমি তাকে দাও।
অনুকরণীয় উত্তরসূরি : প্রত্যেক নবী-রাসুলের কমবেশি অনুসারী ছিলেন। তবে নবী-রাসুলের ওফাতের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের নাম-নিশানাও মুছে গেছে। কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-এর সাহাবিদের পরিচিতি কিয়ামত পর্যন্ত অক্ষুণ্ন থাকবে। আর তাঁদের বাণী হাদিস হিসেবে গণ্য করা হয়।
আল্লাহ তাআলা তাঁদের ওপর নিজের সন্তুষ্টির কথা কোরআন মাজিদে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘যেসব আনসার ও মুহাজির প্রথম ঈমানের দাওয়াত কবুল করেছেন আর যাঁরা তাঁদের সততার সঙ্গে অনুসরণ করেছেন, তাঁদের ওপর আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট, তাঁরাও আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১০০)
শ্রেষ্ঠ উম্মত : আমাদের প্রিয় নবী (সা.) যেমন শ্রেষ্ঠ, তেমনি তাঁর উম্মতকেও শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)
সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ : হাদিসের ভাষ্য মতে, আমাদের প্রিয় নবী (সা.) সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন। তারপর অন্য নবী-রাসুলরা প্রবেশ করবেন। আর উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম উম্মতে মুহাম্মদী (সা.) জান্নাতে প্রবেশ করবেন। তারপর অন্যান্য নবীর উম্মতরা প্রবেশ করবেন।
প্রথম সৃষ্টি : আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে সৃষ্টির আদিতে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু প্রেরণ করেছেন সর্বশেষে। মহানবী (সা.) বলেছেন, যখন আদম (আ.)-এর অস্তিত্ব ছিল না তখনো আমি নবী ছিলাম। সব নবী-রাসুল আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে চিনতেন। আল্লাহ তাআলা রুহের জগতে তাঁদের থেকে অঙ্গীকার নিয়েছেন। যেমন—আল্লাহ তাআলার বাণী, ‘আর আল্লাহ যখন নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে আমি যা কিছু তোমাদের দান করেছি কিতাব ও জ্ঞান অতঃপর তোমাদের কাছে কোনো রাসুল আসেন তোমাদের কিতাবকে সত্যায়নের জন্য, তখন সেই রাসুলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁর সাহায্য করবে।’ তিনি বললেন, ‘তোমরা কি অঙ্গীকার করেছ এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিয়েছ? তারা বলল, আমরা অঙ্গীকার করেছি।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে এবার তোমরা সাক্ষী থাকো। আমিও তোমাদের সঙ্গে সাক্ষী রইলাম।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৮১)
লেখক : প্রধান ফকিহ, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।